শনিবার, ১৯শে এপ্রিল, ২০২৫| সন্ধ্যা ৭:২২

হত্যাকারীদের বিচার না হওয়া পর্যন্ত নির্বাচন চান না মুগ্ধর বাবা

প্রতিবেদক
staffreporter
মার্চ ২৪, ২০২৫ ৩:৪৯ অপরাহ্ণ
হত্যাকারীদের বিচার না হওয়া পর্যন্ত নির্বাচন চান না মুগ্ধর বাবা

হত্যাকারীদের বিচার না হওয়া পর্যন্ত নির্বাচন চান না মুগ্ধর বাবা

বাংলাদেশের রাজনৈতিক ও সামাজিক পরিস্থিতিতে একটি শক্তিশালী বার্তা দিয়েছেন জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে শহীদ মীর মুগ্ধর বাবা মীর মোস্তাফিজুর রহমান। তিনি বলেছেন, “হত্যাকারীদের বিচার না হওয়া পর্যন্ত আমরা নির্বাচন চাই না।” রোববার (২৩ মার্চ, ২০২৫) উত্তরার মুগ্ধ মঞ্চে ‘বীরোচিত উত্তরা’ আয়োজিত এক ইফতার মাহফিলে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এই দৃঢ় অবস্থান ব্যক্ত করেন। এই অনুষ্ঠানে জুলাই আন্দোলনের শহীদ পরিবার, আহত যোদ্ধা ও পঙ্গু ব্যক্তিরা উপস্থিত ছিলেন। মুগ্ধর বাবার এই মন্তব্য দেশের রাজনৈতিক ভবিষ্যৎ নিয়ে নতুন বিতর্কের জন্ম দিয়েছে।

মীর মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, “আমার ছেলে মুগ্ধ জীবন দিয়েছে বাংলাদেশকে ফ্যাসিবাদ থেকে মুক্ত করতে। হাজার হাজার শহীদ পরিবারের পক্ষ থেকে বলছি, যারা চোখ হারিয়েছে, হাত-পা হারিয়েছে, তাদের অঙ্গহানির বিচার না হলে কীসের নির্বাচন?” তিনি জোর দিয়ে বলেন, “এখনো অনেকে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। আহতরা সুচিকিৎসা পায়নি। খুনিদের, গুমকারীদের বিচার আগে হতে হবে।” তার এই বক্তব্যে জুলাই-আগস্টের সহিংসতায় দায়ীদের শাস্তির দাবি স্পষ্ট হয়ে ওঠে।

এই ইফতার মাহফিলটি আয়োজন করেছিলেন আমার ঢাকা ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান অধ্যক্ষ আশরাফুল হক। অনুষ্ঠানে শহীদ জসিম উদ্দিনের মামা নাসির উদ্দীন, সর্বকনিষ্ঠ শহীদ জাবির ইব্রাহিমের বাবা মো. কবীর হোসেন, শহীদ নাঈমা সুলতানার মা আইনুন নাহারসহ আরও অনেক শহীদ পরিবারের সদস্য বক্তব্য রাখেন। মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, “আমার মুগ্ধর মতো হাজারো তরুণ জীবন দিয়েছে। এমন নির্বাচনের জন্য তারা শহীদ হয়নি, যেখানে বিচারের আগে ভোট হবে।” তিনি আন্দোলনের ফসল এখনো ঘরে তোলা না হওয়ার কথা উল্লেখ করে সরকারের প্রতি দায়িত্বশীলতার আহ্বান জানান।

মুগ্ধ ছিলেন খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন শিক্ষার্থী। ২০২৪ সালের জুলাইয়ে কোটা সংস্কার আন্দোলনের সময় তিনি শহীদ হন। তার স্মৃতি রক্ষায় খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটক ‘শহীদ মীর মুগ্ধ তোরণ’ নামে উদ্বোধন করা হয়েছে। গত ৯ মার্চ এই অনুষ্ঠানে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ফরিদা আখতারও বলেছিলেন, “নির্বাচনের আগে মুগ্ধর খুনিদের বিচার করতে হবে। তারা আমাদের জন্য ইতিহাস রচনা করেছে।” এই দুই বক্তব্য থেকে শহীদ পরিবার ও সরকারের একাংশের মধ্যে বিচারের দাবির ঐক্য স্পষ্ট।

ইফতার মাহফিলে প্রায় এক হাজার আহত ও পঙ্গু জুলাই যোদ্ধা উপস্থিত ছিলেন। সংগঠক শাহিদুর রহমান মোল্লা, কামরুল আহসানসহ অনেকে এই দাবির সঙ্গে একাত্মতা প্রকাশ করেন। সামাজিক মাধ্যমে এই ঘোষণা নিয়ে আলোচনা তুঙ্গে। একজন লিখেছেন, “মুগ্ধর বাবা ঠিক বলেছেন। বিচার ছাড়া নির্বাচন জনগণের সঙ্গে প্রতারণা।” তবে কেউ কেউ মনে করেন, নির্বাচন বিলম্বিত হলে রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে।

জুলাই-আগস্টে সরকারবিরোধী আন্দোলনে শত শত মানুষ প্রাণ হারায়, হাজার হাজার আহত হয়। এই ঘটনার পর আওয়ামী লীগের অনেক নেতা গ্রেপ্তার হয়েছেন, তবে অনেকে এখনো অধরা। মুগ্ধর বাবার এই দাবি শহীদ পরিবারগুলোর ক্ষোভ ও প্রত্যাশার প্রতিফলন। তিনি বলেন, “আমরা চাই সত্য প্রকাশ পাক। শহীদদের রক্তের দাম দিতে হবে।” এই বক্তব্য বাংলাদেশের রাজনীতিতে নতুন মোড় আনতে পারে, যেখানে বিচার ও নির্বাচনের প্রশ্ন এখন একে অপরের সঙ্গে জড়িয়ে গেছে।

মন্তব্য করুন
Spread the love

সর্বশেষ - বানিজ্য ও অর্থনীতি