বিএনপিতে দ্বন্দ্বঃ ইফতার মাহফিলে সংঘর্ষ, শৃঙ্খলা ফেরাতে কঠোর দলীয় সিদ্ধান্ত
ফেনীর দাগনভূঞায় বিএনপির ইফতার মাহফিলে ব্যানার লাগানোকে কেন্দ্র করে দুই পক্ষের সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। বৃহস্পতিবার (২০ মার্চ) সন্ধ্যায় উপজেলার সদর ইউনিয়নের দক্ষিণ আলীপুর মকবুলের টেক এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। দীর্ঘদিন ধরে চলে আসা দলীয় বিভক্তি ও অভ্যন্তরীণ কোন্দলের জেরে এ সংঘর্ষ হয়েছে বলে জানিয়েছেন প্রত্যক্ষদর্শী ও দলীয় নেতাকর্মীরা।
উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক কমিটিকে কেন্দ্র করে বিভক্ত নেতাকর্মীরা ইফতার মাহফিল আয়োজনের সময় নিজেদের আধিপত্য বিস্তারের চেষ্টা করেন। সংঘর্ষের সময় দেশীয় অস্ত্র ও লাঠিসোঁটা ব্যবহার করা হয়। এতে উভয় পক্ষের বেশ কয়েকজন আহত হন। সদ্য বহিষ্কৃত জেলা ছাত্রদলের সহসভাপতি কাজী জামশেদুর রহমান ফটিকের অনুসারীরা ব্যানার সরিয়ে নতুন ব্যানার লাগানোর চেষ্টা করলে উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক আকবর হোসেনের সমর্থকরা তাদের বাধা দেন। পরে পরিস্থিতি সংঘর্ষে রূপ নেয়।
ছাত্রদল নেতা কাজী জামশেদুর রহমান ফটিক বলেন, “আমরা ইফতার মাহফিলে অংশ নিতে গিয়েছিলাম। কিন্তু ব্যানারে উপজেলা বিএনপির আহ্বায়কের নাম দেখে স্থানীয় নেতাকর্মীরা ক্ষুব্ধ হয়ে ওঠেন। এরপর আকবর হোসেনের অনুসারীরা আমাদের ওপর হামলা চালায়। এমন ঘটনা অত্যন্ত নিন্দনীয়।”
তবে এ বিষয়ে জানতে চাইলে উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক আকবর হোসেনের সঙ্গে যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি। সংঘর্ষের ঘটনার পর স্থানীয়রা পুলিশকে খবর দেন। দাগনভূঞা থানা পুলিশের উপপরিদর্শক মোহাম্মদ রোকন উদ্দিন জানান, এ ঘটনায় এখনো কেউ অভিযোগ করেননি। অভিযোগ পেলে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
বিএনপির অভ্যন্তরীণ সংঘাত শুধু ফেনীর মধ্যেই সীমাবদ্ধ নেই। সাম্প্রতিক সময়ে দেশের বিভিন্ন স্থানে দলীয় কোন্দল ও শৃঙ্খলা ভঙ্গের অভিযোগে বিএনপি কঠোর সিদ্ধান্ত নিতে শুরু করেছে। পটপরিবর্তনের পর থেকে দলীয় শৃঙ্খলা বজায় রাখতে শাস্তিমূলক ব্যবস্থার আওতায় আনা হয়েছে প্রায় এক হাজার সাতশ নেতাকর্মীকে। এছাড়া আরো এক হাজার নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে তদন্ত চলমান রয়েছে।
গত ২০ মার্চ ময়মনসিংহের নান্দাইল পৌর বিএনপির আহ্বায়ক এ এফ এম আজিজুল ইসলাম পিকুলকে দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গের অভিযোগে বহিষ্কার করা হয়। একই দিন বরিশাল উত্তর জেলাধীন গৌরনদী পৌর বিএনপির সদস্য সচিব ফরিদ মিয়া এবং সিলেট মহানগর কৃষক দলের সহ-সভাপতি নেয়া আলীকে বহিষ্কার করা হয়েছে। এর আগে অ্যাডভোকেট মাসুদ আহমেদ তালুকদারসহ বেশ কয়েকজন নেতার দলীয় পদ স্থগিত করা হয়।
ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক নাসির উদ্দিন নাসির জানান, “যেসব নেতাকর্মী শৃঙ্খলা ভঙ্গ করেছে, তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। দলীয় শৃঙ্খলার বাইরে কোনো কর্মকাণ্ড বরদাশত করা হবে না।”
যুবদলের সভাপতি মোনায়েম মুন্না বলেন, “বিএনপির গুটিকয়েক নেতাকর্মী নিজেদের স্বার্থে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির চেষ্টা করছেন। আমরা তাদের বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স নীতিতে কাজ করছি। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীও কঠোর ব্যবস্থা নিলে পরিস্থিতি দ্রুত নিয়ন্ত্রণে আসবে।”
বিএনপির কেন্দ্রীয় সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবীর রিজভী জানান, “শৃঙ্খলা ফেরাতে দলের পক্ষ থেকে আরও কঠোর পদক্ষেপ নেওয়া হবে। যারা দলীয় স্বার্থের বিরুদ্ধে কাজ করবেন, তাদের বিরুদ্ধে আজীবন বহিষ্কারসহ আইনি ব্যবস্থাও নেওয়া হতে পারে।”
দলের ভাইস চেয়ারম্যান আসাদুজ্জামান রিপন বলেন, “কোটি কোটি নেতাকর্মীর মধ্যে কয়েকজন বিশৃঙ্খল আচরণ করলেও তা পুরো দলের ভাবমূর্তিকে ক্ষতিগ্রস্ত করে। এজন্য আমরা কঠোর মনোভাব নিয়েছি।”
ফেনীতে সংঘর্ষের ঘটনা দলীয় শৃঙ্খলার অভাবকেই স্পষ্ট করছে। আর এ কারণেই বিএনপি হাইকমান্ড চাইছে কঠোর সিদ্ধান্ত নিয়ে দলীয় একতা ও শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনতে। সম্প্রতি দলীয় নেতাকর্মীদের সতর্ক করে বলা হয়েছে, শৃঙ্খলা ভঙ্গ করলে তার পরিণতি হবে ভয়াবহ। আগামী দিনে বিএনপির রাজনীতিতে শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনা দলটির জন্য বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে।