বাংলাদেশের ঋণমান কমালো মুডিস, অর্থনীতি নিয়ে উদ্বেগ
বিশ্বখ্যাত ক্রেডিট রেটিং সংস্থা মুডিস বাংলাদেশের ঋণমান কমিয়ে ‘বি-ওয়ান’ থেকে ‘বি-টু’ করেছে, যা দেশের অর্থনৈতিক পূর্বাভাসকে ‘স্থিতিশীল’ থেকে ‘নেতিবাচক’ পর্যায়ে নামিয়ে এনেছে।
বুধবার (১২ মার্চ) প্রকাশিত মুডিসের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সম্পদের মানের অবনতি, উচ্চ মূল্যস্ফীতি এবং দুর্বল অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির কারণে বাংলাদেশের ব্যাংক খাত অনিশ্চয়তার মুখে পড়েছে। রেটিং কমানোর চারটি প্রধান কারণ হিসেবে তারা উল্লেখ করেছে—অর্থনৈতিক অবস্থার অবনতি, ব্যাংকগুলোর ঝুঁকি বৃদ্ধি, খেলাপি ঋণের দ্রুত বৃদ্ধি এবং চরম মূল্যস্ফীতি।
প্রতিবেদন অনুসারে, রাজনৈতিক ও সামাজিক অস্থিরতা, পোশাক খাতের সরবরাহ শৃঙ্খলে বিঘ্ন এবং দেশীয় ও আন্তর্জাতিক বাজারে চাহিদার হ্রাস অর্থনৈতিক মন্দাকে ত্বরান্বিত করছে।
অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির ক্ষেত্রে মুডিস পূর্বাভাস দিয়েছে, ২০২৫ সালের জুন পর্যন্ত বাংলাদেশের জিডিপি প্রবৃদ্ধি ৪.৫ শতাংশ হতে পারে, যা আগের বছরের ৫.৮ শতাংশ থেকে কম। একই সঙ্গে, মূল্যস্ফীতি প্রায় ৯.৮ শতাংশে থাকার আশঙ্কা করা হচ্ছে।
ব্যাংক খাতেও সংকট বাড়ছে। ২০২৪ সালের সেপ্টেম্বরে খেলাপি ঋণের হার ১৭ শতাংশে পৌঁছেছে, যেখানে ৯ মাস আগেও তা ছিল ৯ শতাংশ। বিশেষ করে রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলোর অবস্থা আরও খারাপ, যাদের মূলধন পরিস্থিতি নেতিবাচক (-২.৫ শতাংশ)। সরকার নতুন করে সহায়তা না দিলে এসব ব্যাংকের অবস্থার আরও অবনতি হতে পারে।
বাংলাদেশ ব্যাংক পরিস্থিতি সামাল দিতে নীতিগত সুদের হার ৬ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ১০ শতাংশ করেছে এবং ২০২৫ সালের এপ্রিলে খেলাপি ঋণ কমানোর জন্য কঠোর নিয়ম আনার ঘোষণা দিয়েছে। তবে মুডিসের মতে, ব্যাংক খাতের এই সংকট মোকাবিলায় সরকারের সহায়তা ছাড়া সামনে আরও বড় চ্যালেঞ্জ অপেক্ষা করছে।
এই পরিস্থিতিতে সাধারণ মানুষের জীবনযাত্রা কঠিন হতে পারে। ব্যাংক থেকে ঋণ পাওয়া কঠিন হয়ে যেতে পারে, পণ্যের দাম আরও বাড়তে পারে, বিনিয়োগ কমার ফলে চাকরির বাজারেও নেতিবাচক প্রভাব পড়তে পারে।