হুথিদের হামলাকে ইরানি আগ্রাসন বলে বিবেচনা করা হবে: ট্রাম্প
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প সম্প্রতি ঘোষণা করেছেন যে, ইয়েমেনের হুথি বিদ্রোহীদের আক্রমণকে ইরানের আগ্রাসন হিসেবে বিবেচনা করা হবে। তিনি সতর্ক করে দিয়ে বলেছেন, হুথিদের প্রতিটি হামলার জন্য ইরানকে দায়ী করা হবে এবং এর পরিণতি হবে অত্যন্ত গুরুতর।
হুথি বিদ্রোহীরা ইয়েমেনের একটি শিয়া মুসলিম গোষ্ঠী, যারা ২০১৪ সাল থেকে ইয়েমেন সরকারের বিরুদ্ধে লড়াই করছে। তাদের এই বিদ্রোহের ফলে ইয়েমেন একটি গভীর মানবিক সংকটে পড়েছে, যেখানে লক্ষ লক্ষ মানুষ খাদ্য, পানি এবং চিকিৎসা সেবার অভাবে ভুগছে।
মার্কিন প্রশাসন দীর্ঘদিন ধরে অভিযোগ করে আসছে যে, ইরান হুথি বিদ্রোহীদের অর্থ, অস্ত্র এবং গোয়েন্দা তথ্য সরবরাহ করছে। যদিও ইরান এই অভিযোগ অস্বীকার করেছে, তবে বিভিন্ন প্রতিবেদনে ইরানের হুথিদের প্রতি সমর্থনের ইঙ্গিত পাওয়া যায়।
ট্রাম্প তার ট্রুথ সোশ্যাল প্ল্যাটফর্মে পোস্ট করেছেন, “এখন থেকে হুথিদের প্রতিটি হামলা ইরান থেকে আসা হামলা হিসেবে গণ্য হবে এবং ইরানকে এর ফল ভোগ করতে হবে, এবং সে ফল হবে অত্যন্ত গুরুতর!”
ট্রাম্পের এই হুঁশিয়ারির পর যুক্তরাষ্ট্র ইয়েমেনে হুথি বিদ্রোহীদের বিরুদ্ধে বড়সড় সামরিক অভিযান চালিয়েছে। এই অভিযানে যুদ্ধবিমান ও ড্রোন ব্যবহার করে হুথিদের বিভিন্ন ঘাঁটিতে হামলা চালানো হয়। পেন্টাগনের তথ্য অনুযায়ী, এই হামলাগুলোর লক্ষ্য ছিল হুথিদের প্রযুক্তি বিশেষজ্ঞরা, তবে তাদের কাছে কোনো বেসামরিক হতাহতের খবর নেই।
ট্রাম্পের এই হুঁশিয়ারি এবং সামরিক অভিযানের পর আন্তর্জাতিক মহলে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা গেছে। কিছু দেশ যুক্তরাষ্ট্রের এই পদক্ষেপকে সমর্থন জানিয়েছে, অন্যদিকে কিছু দেশ এই হামলাকে সমালোচনা করে বলেছে, এটি মধ্যপ্রাচ্যে উত্তেজনা বাড়াবে।
ইরান ট্রাম্পের এই হুঁশিয়ারিকে প্রত্যাখ্যান করে বলেছে, তারা হুথিদের কোনো ধরনের সমর্থন দেয় না। তারা আরও জানিয়েছে, যুক্তরাষ্ট্রের এই ধরনের কর্মকাণ্ড মধ্যপ্রাচ্যে স্থিতিশীলতা নষ্ট করবে।
হুথি বিদ্রোহীরা যুক্তরাষ্ট্রের এই হামলার প্রতিশোধ নেওয়ার ঘোষণা দিয়েছে। তারা বলেছে, মার্কিন আগ্রাসনের জবাব দিতে তারা সম্পূর্ণ প্রস্তুত রয়েছে।
এই পরিস্থিতিতে মধ্যপ্রাচ্যে উত্তেজনা বৃদ্ধি পেয়েছে। বিশেষ করে লোহিত সাগরে বাণিজ্যিক জাহাজগুলির নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বেগ বেড়েছে। হুথিদের হামলার কারণে এই গুরুত্বপূর্ণ শিপিং রুটে নিরাপত্তা হুমকি দেখা দিয়েছে।
বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, এই সংকট সমাধানে কূটনৈতিক প্রচেষ্টা বাড়ানো উচিত। ইরান, যুক্তরাষ্ট্র এবং ইয়েমেনের অন্যান্য পক্ষের মধ্যে সংলাপের মাধ্যমে এই সমস্যার সমাধান সম্ভব হতে পারে।
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের হুঁশিয়ারি এবং ইয়েমেনে হুথি বিদ্রোহীদের বিরুদ্ধে সামরিক অভিযান মধ্যপ্রাচ্যের পরিস্থিতিকে আরও জটিল করে তুলেছে। এই পরিস্থিতিতে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সংযম এবং কূটনৈতিক প্রচেষ্টা প্রয়োজন, যাতে এই অঞ্চলে স্থিতিশীলতা বজায় থাকে।