ব্যায়াম করলে কোলন ক্যানসার থেকে বেঁচে থাকার সম্ভাবনা বাড়ে: গবেষণা
ব্যায়াম করলে কোলন ক্যানসার থেকে সুস্থভাবে বেঁচে থাকার সম্ভাবনা উল্লেখযোগ্য হারে বাড়তে পারে বলে জানিয়েছে একটি আন্তর্জাতিক গবেষণা। গবেষণায় দাবি করা হয়েছে, নিয়মিত ব্যায়াম করলে কোলন ক্যানসার থেকে বেঁচে থাকার সম্ভাবনা প্রায় এক-তৃতীয়াংশ পর্যন্ত বাড়ে।
গবেষণার তথ্য অনুযায়ী, খুব বেশি পরিশ্রমের প্রয়োজন নেই—সাঁতার কাটা থেকে শুরু করে সালসা নাচ—যেকোনো ধরনের হালকা থেকে মাঝারি ধরনের শরীরচর্চাই উপকারী হতে পারে। সোমবার (২ জুন) বিবিসির এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানানো হয়েছে। গবেষকেরা বলছেন, এই গবেষণার ফল কোলন ক্যানসারের চিকিৎসার পদ্ধতিতে পরিবর্তন আনতে পারে। ভবিষ্যতে স্তন ক্যানসারের মতো অন্যান্য ক্যানসারেও একই রকম ব্যায়ামের নিয়ম কার্যকর কি না, তা নিয়েও গবেষণা চলছে।
কুইনস ইউনিভার্সিটি বেলফাস্টের অধ্যাপক ভিকি কয়েল বলেন, “চিকিৎসা শুধু ওষুধে সীমাবদ্ধ নয়, কিছু করা—এই ভাবনাটা আমাদের মানসিক গঠন বদলে দিচ্ছে।”
গবেষণায় অংশ নেওয়া রোগীদের কেমোথেরাপির পর তিন বছরব্যাপী একটি ব্যায়াম কর্মসূচিতে রাখা হয়। তাদের প্রতি সপ্তাহে ৩-৪ দিন ৪৫ থেকে ৬০ মিনিট পর্যন্ত দ্রুত হাঁটার মতো ব্যায়াম করতে বলা হয়, যা সাধারণ মানুষের জন্য নির্ধারিত ব্যায়ামের চেয়ে দ্বিগুণ। প্রথম ছয় মাস সপ্তাহে একবার সরাসরি কোচিং দেওয়া হয়, পরবর্তী সময়ে তা মাসে একবারে কমিয়ে আনা হয়। এই গবেষণায় ৮৮৯ জন ক্যানসার রোগী অংশ নেন, যাদের অর্ধেক ব্যায়াম কর্মসূচিতে ছিলেন এবং বাকিদের শুধু স্বাস্থ্যপরামর্শ দেওয়া হয়।
গবেষণা শুরুর পাঁচ বছর পর প্রকাশিত ফলাফলে দেখা যায়, যারা ব্যায়াম করেছেন তাদের মধ্যে ৮০ শতাংশ ক্যানসারমুক্ত ছিলেন, যেখানে ব্যায়াম না করা দলের এই হার ৭৪ শতাংশ। অর্থাৎ, ব্যায়ামের ফলে ক্যানসার ফিরে আসা বা নতুনভাবে হওয়ার ঝুঁকি ২৮ শতাংশ কমেছে।
এছাড়া প্রাথমিক চিকিৎসার আট বছর পর দেখা যায়, ব্যায়াম করা রোগীদের মধ্যে মৃত্যুহার ১০ শতাংশ এবং শুধু পরামর্শ পাওয়া দলের মধ্যে তা ছিল ১৭ শতাংশ। ফলে ব্যায়ামকারীদের মৃত্যুঝুঁকি কমেছে ৩৭ শতাংশ।
বিজ্ঞানীরা বলছেন, কেন ব্যায়াম এভাবে উপকার করছে তা এখনো পুরোপুরি জানা না গেলেও, শরীরের হরমোন, প্রদাহ এবং রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থার ওপর এর ইতিবাচক প্রভাব রয়েছে।
লিসেস্টার বিশ্ববিদ্যালয়ের ড. জো হেনসন বলেন, “আমি নিজেই দেখেছি ব্যায়াম করলে ক্লান্তি কমে, মানসিক অবস্থা ভালো হয় এবং শারীরিক শক্তি বাড়ে।”
বিবিসি জানায়, যুক্তরাজ্যে কোলন ক্যানসার চতুর্থ সর্বাধিক সাধারণ ক্যানসার, প্রতি বছর গড়ে ৩১ হাজার ৮০০ মানুষ এতে আক্রান্ত হন। ক্যানসার রিসার্চ ইউকে-র ক্যারোলিন গেরাহটি বলেন, “এই গবেষণার ফল চিকিৎসা ব্যবস্থায় বড় পরিবর্তন আনতে পারে, তবে তা বাস্তবায়নের জন্য প্রয়োজন যথেষ্ট অর্থ এবং প্রশিক্ষিত কর্মী।”
