শনিবার, ১৯শে এপ্রিল, ২০২৫| ভোর ৫:২৫

পাকিস্তানে পৃথক বোমা হামলায় ৫ নিরাপত্তারক্ষীসহ নিহত ১২

প্রতিবেদক
staffreporter
মার্চ ১৮, ২০২৫ ৩:৪৩ অপরাহ্ণ
পাকিস্তানে পৃথক বোমা হামলায় ৫ নিরাপত্তারক্ষীসহ নিহত ১২

পাকিস্তানে পৃথক বোমা হামলায় ৫ নিরাপত্তারক্ষীসহ নিহত ১২

পাকিস্তানে সাম্প্রতিক বোমা হামলায় নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যসহ বেশ কয়েকজন নিহত হওয়ার ঘটনায় দেশজুড়ে শোকের ছায়া নেমে এসেছে। এই হামলাগুলো দেশের নিরাপত্তা পরিস্থিতি নিয়ে নতুন করে প্রশ্ন তুলেছে এবং সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে আরও কঠোর পদক্ষেপের প্রয়োজনীয়তা সামনে এনেছে।

গত ১৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৫ সালে পাকিস্তানের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলীয় বেলুচিস্তান প্রদেশের হারনাই জেলায় একটি শ্রমিকবাহী ট্রাকে রাস্তার পাশে পেতে রাখা বোমা বিস্ফোরিত হয়। এই ঘটনায় ১১ জন নিহত এবং ৬ জন আহত হন। ট্রাকটি কয়লা খনির শ্রমিকদের নিয়ে যাচ্ছিল, তখন এই বিস্ফোরণ ঘটে। বিস্ফোরণের সময় ট্রাকটিতে ১৭ জন শ্রমিক ছিলেন। আহতদের মধ্যে দুইজনের অবস্থা আশঙ্কাজনক বলে জানিয়েছেন স্থানীয় হাসপাতালের এক চিকিৎসক।

এরপর, ৪ মার্চ ২০২৫ সালে খাইবার পাখতুনখোয়া প্রদেশের বান্নু জেলায় একটি সেনানিবাসে আত্মঘাতী বোমা হামলা হয়। এই হামলায় ১২ জন নিহত এবং ৩০ জন আহত হন। হামলাকারীরা বিস্ফোরকভর্তি যানবাহন ব্যবহার করে সেনানিবাসের প্রাচীর ভেদ করে প্রবেশ করে। প্রথম বিস্ফোরণের পর, পাঁচ থেকে ছয়জন হামলাকারী সেনানিবাসে প্রবেশের চেষ্টা করে, তবে নিরাপত্তা বাহিনী তাদের প্রতিহত করে এবং সকল হামলাকারী নিহত হয়।

এই হামলায় নিহতদের মধ্যে ৭ জন শিশু এবং ৫ জন বেসামরিক নাগরিক ছিলেন। বিস্ফোরণের ফলে আশেপাশের ভবনগুলোর ছাদ ধসে পড়ে, বিশেষ করে একটি মসজিদের ছাদ ধসে পড়ায় সেখানে নামাজরত ইমামসহ কয়েকজন নিহত হন। আহতদের মধ্যে অনেকের অবস্থা আশঙ্কাজনক, ফলে মৃতের সংখ্যা বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।

এই হামলার দায় স্বীকার করেছে পাকিস্তানি তালেবান-সংক্রান্ত একটি গোষ্ঠী জয়েশ আল-ফুরসান। হামলাটি রমজান মাসের সময় সংঘটিত হয়, যখন স্থানীয়রা ইফতার বা নামাজে ব্যস্ত ছিলেন। পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরিফ এই হামলার তীব্র নিন্দা জানিয়ে বলেছেন, সন্ত্রাসীদের এই ধরনের কর্মকাণ্ড দেশের স্থিতিশীলতা নষ্ট করতে পারবে না। প্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী আলী আমিন গান্দাপুরও এই হামলার নিন্দা জানিয়ে তদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন।

বান্নু অঞ্চলটি পূর্বেও সন্ত্রাসী হামলার শিকার হয়েছে। এই অঞ্চলে তালেবান ও অন্যান্য সন্ত্রাসী গোষ্ঠীর তৎপরতা রয়েছে। নিরাপত্তা বাহিনী এই ধরনের হামলা প্রতিহত করতে সর্বদা সতর্ক রয়েছে, তবে সন্ত্রাসীরা নতুন নতুন কৌশল অবলম্বন করে হামলা চালাচ্ছে, যা নিরাপত্তা ব্যবস্থার জন্য বড় চ্যালেঞ্জ।

আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ও এই হামলার নিন্দা জানিয়েছে। জাতিসংঘ, যুক্তরাষ্ট্র এবং ইউরোপীয় ইউনিয়ন পাকিস্তানের পাশে থাকার আশ্বাস দিয়েছে এবং সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে সহযোগিতা বাড়ানোর প্রতিশ্রুতি দিয়েছে।

এই ধরনের হামলার পর পাকিস্তান সরকার সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে নতুন কৌশল গ্রহণের কথা বিবেচনা করছে। নিরাপত্তা বাহিনীর প্রশিক্ষণ ও সরঞ্জাম উন্নত করা, গোয়েন্দা তথ্য সংগ্রহে প্রযুক্তির ব্যবহার বৃদ্ধি এবং সন্ত্রাসী গোষ্ঠীগুলোর অর্থায়ন বন্ধে কঠোর পদক্ষেপ গ্রহণের পরিকল্পনা করা হচ্ছে।

এই ধরনের হামলার পর সাধারণ জনগণের মধ্যে উদ্বেগ বৃদ্ধি পেয়েছে। তারা সরকারের কাছে নিরাপত্তা নিশ্চিত করার দাবি জানাচ্ছেন। বিশেষ করে স্কুল, হাসপাতাল এবং বাজারের মতো জনবহুল স্থানে নিরাপত্তা বাড়ানোর আহ্বান জানানো হয়েছে।

পাকিস্তানে সাম্প্রতিক বোমা হামলাগুলো দেশের নিরাপত্তা পরিস্থিতির নাজুকতা প্রকাশ করে। সরকার ও নিরাপত্তা বাহিনীর জন্য এটি একটি বড় চ্যালেঞ্জ। সন্ত্রাসবাদের মূলোৎপাটন এবং জনগণের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে সমন্বিত প্রচেষ্টা ও কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ এখন সময়ের দাবি।

মন্তব্য করুন
Spread the love

সর্বশেষ - বানিজ্য ও অর্থনীতি