সোমবার, ১০ই মার্চ, ২০২৫| রাত ১১:৩০

ইসরায়েলকে বাঁচাতে মরিয়া পশ্চিমা বিশ্ব, আশার আলো কোথায়?

প্রতিবেদক
staffreporter
মার্চ ৬, ২০২৫ ৭:০৬ অপরাহ্ণ
ইসরায়েলকে বাঁচাতে মরিয়া পশ্চিমা বিশ্ব, আশার আলো কোথায়?

ইসরায়েলকে বাঁচাতে মরিয়া পশ্চিমা বিশ্ব, আশার আলো কোথায়?

গাজায় ইসরায়েলের চলমান গণহত্যা ও ধ্বংসযজ্ঞের বিরুদ্ধে বিশ্বব্যাপী নিন্দার ঝড় উঠেছে। প্রতিদিনের বোমাবর্ষণ, স্কুল-হাসপাতালে হামলা এবং হাজার হাজার নিরপরাধ মানুষের প্রাণহানির ঘটনায় ইসরায়েল এই প্রথমবারের মতো নজিরবিহীন আন্তর্জাতিক চাপের মুখে পড়েছে। কিন্তু এত সমালোচনার পরও পশ্চিমা বিশ্বের অবস্থান আশ্চর্যজনকভাবে অপরিবর্তিত রয়ে গেছে। বরং তারা উল্টো যুদ্ধবিরতির দাবিতে সোচ্চার নাগরিকদের দমন করছে, মানবাধিকার সংস্থাগুলোর কণ্ঠরোধ করছে, এমনকি জাতিসংঘের স্বাধীন পর্যবেক্ষকদের ওপরও আক্রমণ চালাচ্ছে।

প্রখ্যাত ফিলিস্তিনি-আমেরিকান সাংবাদিক ও রাজনৈতিক বিশ্লেষক রামজি বারুদ আরব নিউজের এক নিবন্ধে তুলে ধরেছেন, কিভাবে পশ্চিমা দেশগুলো ইসরায়েলকে বাঁচাতে গিয়ে নিজেদের গণতন্ত্র ও মানবাধিকারের মূলনীতিগুলো বিসর্জন দিচ্ছে।

তিনি লিখেছেন, ১৮ ফেব্রুয়ারি জার্মান পুলিশ হুট করে ‘জাঙ্গ ওয়েল্ট’ নামে একটি পত্রিকার অফিসে অভিযান চালায়। মনে হচ্ছিল, তারা কোনো ভয়ংকর সন্ত্রাসী ধরতে যাচ্ছে! কিন্তু আসল কারণ ছিল ভিন্ন—পত্রিকাটি জাতিসংঘের মানবাধিকার বিশেষ দূত ফ্রান্সেস্কা আলবানেজের বক্তব্য প্রচার করেছিল। আলবানেজ একজন ইতালীয় আইনজীবী, যিনি গাজায় ইসরায়েলের মানবাধিকার লঙ্ঘনের কঠোর সমালোচক।

অবস্থা এতটাই ভয়াবহ ছিল যে, জাতিসংঘের হস্তক্ষেপ না হলে শুধুমাত্র ইসরায়েলের অপরাধ নিয়ে কথা বলার জন্য আলবানেজকে গ্রেপ্তারও করা হতে পারত!

এটা শুধু জার্মানিতে সীমাবদ্ধ নেই। যুক্তরাষ্ট্রসহ অন্যান্য পশ্চিমা দেশও একই পথ অনুসরণ করছে। তারা শুধু ইসরায়েলকে রক্ষা করছে না, বরং আন্তর্জাতিক আদালত ও মানবাধিকার সংগঠনগুলোর ওপরও ভয়ংকর চাপ সৃষ্টি করছে।

১৩ ফেব্রুয়ারি যুক্তরাষ্ট্র সরাসরি আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালত (আইসিসি) এর প্রধান কৌঁসুলি কারিম খানের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে। কারণ? তিনি ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনইয়ামিন নেতানিয়াহু ও প্রতিরক্ষামন্ত্রী গ্যালান্টের বিরুদ্ধে যুদ্ধাপরাধের তদন্ত শুরু করেছিলেন! ইতিহাসে এই প্রথমবারের মতো ইসরায়েলের শীর্ষ নেতাদের বিরুদ্ধে আনুষ্ঠানিকভাবে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা চাওয়া হয়েছে।

কিন্তু আশ্চর্যের বিষয় হলো, যুদ্ধাপরাধের জন্য অভিযুক্ত নেতাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া দূরে থাক, উল্টো কারিম খানকেই লক্ষ্যবস্তু বানানো হয়েছে! পশ্চিমা গণমাধ্যম তাকে কটাক্ষ করছে, যুক্তরাষ্ট্র তার ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে—যেন ইসরায়েলের বিরুদ্ধে কথা বলাটাই সবচেয়ে বড় অপরাধ!

তবে এতো অন্ধকারের মধ্যেও কিছু আশার আলো দেখা যাচ্ছে। ইসরায়েল-পশ্চিমা মিথ্যাচার ও দ্বিচারিতার বিরুদ্ধে বিশ্বব্যাপী জনমত জোরদার হচ্ছে। যুদ্ধবিরতির দাবিতে পশ্চিমা দেশগুলোতেই লাখো মানুষ রাস্তায় নেমেছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-শিক্ষকেরা ইসরায়েলের সমর্থনে থাকা সরকারগুলোর বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছে। এমনকি যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপের অনেক মানবাধিকার সংগঠন সরাসরি ইসরায়েলের যুদ্ধাপরাধের বিরুদ্ধে কথা বলছে।

বিশ্লেষকরা বলছেন, গাজার এই যুদ্ধ পুরো বিশ্বকে এক নতুন বাস্তবতার দিকে ঠেলে দিচ্ছে। আন্তর্জাতিক আইন ও ন্যায়বিচারের ধারণা নিয়ে বড় ধরনের পরিবর্তন আসতে পারে। যেখানে কোনো রাষ্ট্র বা নেতা নিজেদের ক্ষমতার বলে আইনের ঊর্ধ্বে থাকতে পারবে না। যেখানে নিরপরাধ শিশুরা মরবে না, যেখানে সামরিক শক্তি নয়, বরং ন্যায়ের ভিত্তিতেই সবকিছু চলবে।

এখন প্রশ্ন হচ্ছে, পশ্চিমা বিশ্ব এই পরিবর্তনকে স্বীকার করবে, নাকি ইসরায়েলকে বাঁচাতে নিজেদের মানবাধিকার ও গণতন্ত্রের মূল্যবোধকে চিরতরে বিসর্জন দেবে?

মন্তব্য করুন
Spread the love

সর্বশেষ - সর্বশেষ

আপনার জন্য নির্বাচিত