সব খাত সংস্কারে জাতীয় ঐকমত্য গড়ে তোলা হচ্ছে: শ্রম উপদেষ্টা
বাংলাদেশের শ্রম ও কর্মসংস্থান খাতে সাম্প্রতিক সময়ে ব্যাপক সংস্কার কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে, যা দেশের সামগ্রিক উন্নয়নের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এই সংস্কার প্রক্রিয়ায় জাতীয় ঐকমত্য গড়ে তোলার জন্য শ্রম উপদেষ্টা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) ড. এম সাখাওয়াত হোসেন উল্লেখযোগ্য ভূমিকা পালন করছেন। তিনি আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থার (আইএলও) ৩৫৩তম গভর্নিং বডির অধিবেশনে বাংলাদেশের শ্রম খাতের সংস্কার নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করেন।
শ্রম উপদেষ্টা জানান, শ্রম আইন সংশোধনের ক্ষেত্রে বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে ত্রিপক্ষীয় (সরকার, মালিক ও শ্রমিক) ঐকমত্য অর্জিত হয়েছে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য বিষয়গুলো হলো:
শ্রম আইনের আওতা অলাভজনক প্রতিষ্ঠান পর্যন্ত সম্প্রসারিত করা হয়েছে, যা পূর্বে এই আইনের আওতায় ছিল না। ব্যবস্থাপনা, তত্ত্বাবধান ও প্রশাসনিক পদে কর্মরত শ্রমিকদের ট্রেড ইউনিয়ন গঠনের অধিকার প্রদান করা হয়েছে। অন্যায্য শ্রম আচরণ ও ইউনিয়নবিরোধী বৈষম্যের শাস্তি তিনগুণ বৃদ্ধি করা হয়েছে। একইভাবে, শিশুশ্রমের শাস্তি পাঁচগুণ বৃদ্ধি করা হয়েছে। জবরদস্তি শ্রম নিষিদ্ধ করা হয়েছে এবং এর জন্য শাস্তির বিধান সংযোজিত হয়েছে। কর্মক্ষেত্রে নারীর প্রতি বৈষম্য, লিঙ্গভিত্তিক বৈষম্য ও সহিংসতা প্রতিরোধে নতুন বিধান সংযোজিত হয়েছে। শ্রমিকদের কালো তালিকাভুক্তকরণ নিষিদ্ধ করা হয়েছে এবং এর জন্য শাস্তির বিধান সংযোজিত হয়েছে।
ট্রেড ইউনিয়ন নিবন্ধনের প্রক্রিয়া সহজতর করার জন্য কিছু কার্যকরী পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে। নিবন্ধনের জন্য প্রয়োজনীয় দলিলাদি ও বাধ্যতামূলক সভার সংখ্যা কমানো হয়েছে। মালিককে ১০ কার্যদিবসের মধ্যে প্রতিষ্ঠানের শ্রমিকের সংখ্যা প্রদান করতে বাধ্য করা হয়েছে।একটি প্রতিষ্ঠানে নিবন্ধিত ইউনিয়নের সংখ্যা তিনটি থেকে পাঁচটিতে উন্নীত করা হয়েছে।
ট্রেড ইউনিয়ন নিবন্ধনের জন্য ন্যূনতম কর্মীর শতকরা হার বা সংখ্যার বিষয়ে এখনও ঐকমত্য অর্জিত হয়নি। তবে, শ্রম উপদেষ্টা আশ্বস্ত করেছেন যে, ত্রিপক্ষীয় আলোচনার মাধ্যমে এই বিষয়গুলো সমাধান করা হবে এবং সরকার অধ্যাদেশ জারি করে আইনটির সংশোধন সুসম্পন্ন করবে।
রপ্তানি প্রক্রিয়াকরণ অঞ্চলগুলোর (ইপিজেড) জন্য শ্রম আইন সংশোধনে অংশীজনের সাথে আলোচনা চলমান রয়েছে। বাংলাদেশ শ্রম আইন সংশোধনের পর বিদ্যমান ইপিজেড শ্রম আইন ও সংশোধিত শ্রম আইনের মধ্যে পার্থক্য বিশ্লেষণ করে সরকার প্রয়োজনীয় উদ্যোগ গ্রহণ করবে।
কারখানা ও স্থাপনা পরিদর্শনের জন্য বিদ্যমান স্ট্যান্ডার্ড অপারেটিং প্রসিডিউর (এসওপি) অনুযায়ী ৫০% অঘোষিত পরিদর্শন পরিচালিত হচ্ছে। পরিদর্শকের শূন্যপদগুলোতে দ্রুত নিয়োগ দেওয়া হবে বলে শ্রম উপদেষ্টা উল্লেখ করেন।
আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থার অধিবেশনে এশিয়া ও আফ্রিকার উন্নয়নশীল দেশগুলোর প্রতিনিধিরা বাংলাদেশের শ্রম অধিকার উন্নয়ন ও শোভন কর্মপরিবেশ নিশ্চিতকল্পে সরকারের গৃহীত পদক্ষেপগুলোর প্রশংসা করেছেন। তারা বাংলাদেশের বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রক্রিয়া দ্রুত বন্ধ করার জন্য দাবি জানান। বাংলাদেশের উন্নয়ন সহযোগী কয়েকটি দেশের প্রতিনিধিরা শ্রম খাত সংস্কারে সরকারের চলমান উদ্যোগগুলোকে স্বাগত জানান এবং এসব উদ্যোগ বাস্তবায়নে সহযোগিতার আশ্বাস দেন।
বাংলাদেশের শ্রম খাতের সংস্কারে জাতীয় ঐকমত্য গড়ে তোলার এই প্রচেষ্টা দেশের অর্থনৈতিক ও সামাজিক উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে। শ্রম উপদেষ্টা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) ড. এম সাখাওয়াত হোসেনের নেতৃত্বে গৃহীত এই পদক্ষেপগুলো শ্রমিকদের অধিকার সুরক্ষা ও কর্মপরিবেশ উন্নয়নে সহায়তা করবে। আন্তর্জাতিক মহলের সহযোগিতা ও সমর্থন এই প্রক্রিয়াকে আরও গতিশীল করবে বলে আশা করা যায়।