ইরানের ‘শান্তিপূর্ণ’ পরমাণু কর্মসূচিতে সমর্থন জানালো চীন-রাশিয়া
সম্প্রতি বেইজিংয়ে অনুষ্ঠিত এক ত্রিপাক্ষিক বৈঠকে চীন ও রাশিয়া ইরানের শান্তিপূর্ণ পরমাণু কর্মসূচিতে তাদের সমর্থন পুনর্ব্যক্ত করেছে। এই বৈঠকে যুক্তরাষ্ট্রের আরোপিত নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার এবং পরমাণু আলোচনা পুনরায় শুরুর আহ্বান জানানো হয়।
২০১৫ সালে ইরান এবং ছয়টি প্রধান দেশ—যুক্তরাষ্ট্র, রাশিয়া, চীন, যুক্তরাজ্য, ফ্রান্স ও জার্মানি—একটি পরমাণু চুক্তি স্বাক্ষর করে, যা ‘জয়েন্ট কমপ্রিহেনসিভ প্ল্যান অফ অ্যাকশন’ (জেসিপিওএ) নামে পরিচিত। এই চুক্তির মাধ্যমে ইরান তার পরমাণু কর্মসূচি সীমিত করতে সম্মত হয়, বিনিময়ে আন্তর্জাতিক নিষেধাজ্ঞা শিথিল করা হয়। তবে ২০১৮ সালে যুক্তরাষ্ট্রের তৎকালীন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প এই চুক্তি থেকে সরে আসেন, যা ইরানের সঙ্গে পশ্চিমা দেশের সম্পর্কে উত্তেজনা বৃদ্ধি করে।
চীন ও রাশিয়া বরাবরই ইরানের পরমাণু কর্মসূচির শান্তিপূর্ণ ব্যবহারের অধিকারের পক্ষে অবস্থান নিয়েছে। তারা মনে করে, ইরানের এই অধিকার আন্তর্জাতিক আইন ও চুক্তির সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ। চীনের উপ-পররাষ্ট্রমন্ত্রী মা ঝাওশু বলেন, “রাজনৈতিক ও কূটনৈতিক সংলাপ এবং পারস্পরিক সম্মানের ভিত্তিতে আলোচনা এই বিষয়ে একমাত্র কার্যকর ও বাস্তবসম্মত পথ।”
তবে ইরান বরাবরই দাবি করে আসছে যে, তাদের পরমাণু কর্মসূচি শান্তিপূর্ণ উদ্দেশ্যে পরিচালিত হচ্ছে। ইরানের উপ-পররাষ্ট্রমন্ত্রী কাজেম ঘারিবাবাদি বলেন, “ইরানের পরমাণু কর্মসূচি শান্তিপূর্ণ প্রকৃতির। এটি আন্তর্জাতিক পরমাণু শক্তি সংস্থার (আইএইএ) নজরদারিতে রয়েছে। আমাদের পরমাণু কর্মসূচি কখনোই শান্তিপূর্ণ উদ্দেশ্য থেকে বিচ্যুত হয়নি।”
চীন ও রাশিয়া ইরানের সঙ্গে তাদের অর্থনৈতিক ও সামরিক সম্পর্ক জোরদার করছে। চীন ইরানের তেল, গ্যাস ও পেট্রোকেমিক্যাল খাতে ২৮ হাজার কোটি ডলার বিনিয়োগের পরিকল্পনা করছে, যা ইরানের অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব ফেলবে।
এছাড়া, ইরান, চীন ও রাশিয়া যৌথ নৌ-মহড়া আয়োজন করছে, যা আঞ্চলিক নিরাপত্তা ও বহুপাক্ষিক সহযোগিতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে পরিচালিত হচ্ছে।
চীন ও রাশিয়ার এই সমর্থন ইরানের জন্য আন্তর্জাতিক মঞ্চে একটি শক্তিশালী অবস্থান তৈরি করছে। তারা বিশ্বাস করে, যুক্তরাষ্ট্রের একতরফা নিষেধাজ্ঞা ও চাপ প্রয়োগের নীতি পরিত্যাগ করে কূটনৈতিক সংলাপের মাধ্যমে সমস্যার সমাধান করা উচিত। এই প্রেক্ষাপটে, ইরানের শান্তিপূর্ণ পরমাণু কর্মসূচিতে চীন ও রাশিয়ার সমর্থন আন্তর্জাতিক রাজনীতিতে একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হয়ে উঠেছে।