অশান্ত সিরিয়া, দামেস্কে বিমান হামলা ইসরাইলের
সিরিয়ার রাজধানী দামেস্কে ইসরায়েলি বিমান হামলার পর ব্যাপক ধ্বংসযজ্ঞের সৃষ্টি হয়েছে। শহরের আবাসিক এলাকার পাশাপাশি গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনারও ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে, এবং সিরিয়ার সাধারণ মানুষের জীবনে নতুন করে বিপর্যয় নেমে এসেছে। এই হামলা এমন এক সময়ে হয়েছে যখন সিরিয়ার যুদ্ধবিধ্বস্ত পরিস্থিতি আরও শঙ্কার মধ্যে পড়েছে। এতে শহরের বিভিন্ন এলাকায় ব্যাপক আগুনের শিখা ও ধোঁয়া দেখা গেছে, এবং বেশ কিছু বাড়িঘর ভেঙে পড়েছে।
ইসরায়েলি সামরিক বাহিনী জানায়, এই বিমান হামলার লক্ষ্য ছিল ফিলিস্তিনি সশস্ত্র গোষ্ঠী ইসলামিক জিহাদের সদরদপ্তর, যেখান থেকে তারা ইসরায়েলের বিরুদ্ধে সন্ত্রাসী কার্যক্রম পরিচালনা করছিল। ইসরায়েল দাবি করেছে, হামলার পর প্রকাশিত একটি ভিডিওতে একটি ভবনের প্রান্তে বিস্ফোরণ এবং ধোঁয়া উঠতে দেখা যায়। তবে ইসলামিক জিহাদের মুখপাত্র মুহাম্মদ আল-হাজ মুসা দাবি করেন, এটি একটি খালি বাড়ি ছিল, কোনো কমান্ড সেন্টার নয়, এবং তাদের কোনো হামলা পরিচালনার কেন্দ্র এখানে ছিল না।
হামলার পর দামেস্কের বাসিন্দারা আতঙ্কিত হয়ে পড়েন। তারা জানায়, হামলার সময় একদিকে বিকট বিস্ফোরণের শব্দ, অন্যদিকে তাদের বাড়িঘর কেঁপে ওঠে। এক বাসিন্দা জানান, “রাতের নিস্তব্ধতা হঠাৎ করে ভেঙে যায় এবং আমরা আতঙ্কিত হয়ে আশ্রয় নেওয়ার চেষ্টা করি।” অন্য একজন বাসিন্দা বলেন, “বিস্ফোরণের পর আমরা ধোঁয়া এবং আগুন দেখতে পাই। আমাদের অনেক বাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে এবং পুরো এলাকার অবস্থা ভয়াবহ।”
এই হামলার ফলে বেশ কিছু পরিবার তাদের বাড়ি হারিয়েছে এবং অনেকেই আহত হয়েছে। স্থানীয় হাসপাতালে আহতদের ভর্তি করা হয়, যেখানে চিকিৎসকরা তাদের চিকিৎসা সেবা প্রদান করছেন। এক চিকিৎসক জানান, “আমরা প্রচুর সংখ্যক আহত রোগী পেয়েছি, এবং তাদের মধ্যে অনেকের অবস্থাই গুরুতর। আমরা আমাদের সাধ্যমতো তাদের চিকিৎসা দেওয়ার চেষ্টা করছি, কিন্তু অনেকের অবস্থাই সংকটজনক।”
ইসরায়েলি হামলার পর আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের মধ্যে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা গেছে। কিছু দেশ ইসরায়েলের আত্মরক্ষার অধিকার সমর্থন জানিয়ে বলেছে, এই হামলা তাদের জাতীয় নিরাপত্তার স্বার্থে অপরিহার্য ছিল। তবে অনেক দেশ, বিশেষ করে আরব রাষ্ট্র এবং মানবাধিকার সংগঠনগুলো এই হামলাকে আন্তর্জাতিক আইনের লঙ্ঘন হিসেবে বিবেচনা করছে। তারা বলছে, এমন হামলা আন্তর্জাতিক আইন এবং মানবাধিকারের সঙ্গে বিরোধী। জাতিসংঘের মহাসচিব এই ঘটনার তীব্র নিন্দা জানিয়ে উভয় পক্ষকে সংযম প্রদর্শনের আহ্বান জানিয়েছেন।
এই হামলা সিরিয়ার সাধারণ জনগণের জন্য নতুন দুর্ভোগ বয়ে এনেছে। যুদ্ধবিধ্বস্ত এই দেশে সিরিয়ার জনগণ ইতিমধ্যেই অনেক কষ্টের মধ্যে রয়েছে। হামলার পর নতুন করে মানবিক সংকট তৈরি হয়েছে। খাদ্য, পানি, চিকিৎসা সহায়তা এবং অন্যান্য জরুরি প্রয়োজনীয় উপকরণের ব্যাপক ঘাটতি দেখা দিয়েছে। সিরিয়ার গৃহযুদ্ধ ও বিভিন্ন ধরনের সামরিক হামলা জনজীবনকে প্রায় ধ্বংস করে দিয়েছে, এবং এই পরিস্থিতি সেখানকার সাধারণ মানুষের জন্য এক মহা দুঃখজনক বাস্তবতা হয়ে দাঁড়িয়েছে।
বর্তমান পরিস্থিতিতে সিরিয়ার জনগণের জন্য শান্তি প্রতিষ্ঠার চেষ্টা জরুরি হয়ে দাঁড়িয়েছে। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের উচিত, সিরিয়ায় শান্তি স্থাপন ও মানবিক সহায়তা বৃদ্ধির জন্য কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করা, যাতে সিরিয়ার সাধারণ মানুষ শান্তিপূর্ণ ও নিরাপদ জীবন ফিরে পেতে পারে। সিরিয়ার জনগণের প্রতি সহানুভূতির পাশাপাশি এই দীর্ঘস্থায়ী সংকটের সমাধান খুবই গুরুত্বপূর্ণ।