আবরার হত্যাকাণ্ডে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামির পলায়ন নিয়ে কারা কর্তৃপক্ষের ব্যাখ্যা
বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) শিক্ষার্থী আবরার ফাহাদ হত্যা মামলায় মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামি মুনতাসির আল জেমির পলায়ন নিয়ে প্রথমবারের মতো ব্যাখ্যা দিয়েছে কারা কর্তৃপক্ষ। ২০২৩ সালের ৬ আগস্ট গাজীপুরের হাই সিকিউরিটি কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে ২০২ জন বন্দি একসঙ্গে পালিয়ে যায়, যার মধ্যে ৮৭ জন ছিলেন মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত।
সোমবার (২৪ ফেব্রুয়ারি) কারা অধিদপ্তরের সহকারী কারা মহাপরিদর্শক (উন্নয়ন) মো. ফরহাদ হোসেন স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, ঘটনার পর ১৫ আগস্ট কোনাবাড়ী থানায় একটি মামলা করা হয় এবং আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর বিভিন্ন সংস্থাকে জানানো হয়। পরে অভিযানের মাধ্যমে ৩৫ জন মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্তসহ মোট ৫১ জন পলাতক বন্দিকে পুনরায় গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তবে এখনো অনেক বন্দি ধরাছোঁয়ার বাইরে রয়ে গেছে এবং তাদের ধরতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর অভিযান অব্যাহত রয়েছে।
এই ঘটনায় সবচেয়ে বেশি আলোচনা তৈরি হয়েছে আবরার ফাহাদ হত্যা মামলার মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামি মুনতাসির আল জেমির পলায়ন নিয়ে। মামলার শুনানির সময় আদালতে বিষয়টি প্রকাশ পায়, যা আদালত, রাষ্ট্রপক্ষ ও আবরারের পরিবারের জন্য ছিল পুরোপুরি অজানা। রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী জসিম উদ্দিন আদালতে জানান, আবরার হত্যা মামলার দণ্ডপ্রাপ্ত ২২ জন আসামির মধ্যে বর্তমানে ২১ জন কারাগারে আছেন এবং একজন পলাতক। তখনই প্রকাশ পায়, মুনতাসির আল জেমি দীর্ঘদিন আগে কারাগার থেকে পালিয়ে গেছে।
আবরারের বাবা বরকত উল্লাহ বলেন, “এতদিন ধরে আমার ছেলের হত্যাকারী একজন আসামি পালিয়ে বেড়াচ্ছে, অথচ কেউ আমাদের জানাল না। আদালতে শুনানির সময় প্রথম জানতে পারলাম। এটা কেমন বিচার ব্যবস্থার নমুনা?” তিনি এ ঘটনায় ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, “আমরা ন্যায়বিচার পাবো কিনা, তা নিয়ে শঙ্কিত। আমার ছেলেকে নির্মমভাবে পিটিয়ে হত্যা করা হয়েছিল, এখন দেখি তার খুনিরা দিব্যি পালিয়ে যাচ্ছে। এটা মেনে নেওয়া যায় না।”
মুনতাসির আল জেমির মতো একজন মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামির এমন পলায়ন নিয়ে নানা প্রশ্ন উঠেছে। বিশেষ করে, দেশের সবচেয়ে সুরক্ষিত কারাগারগুলোর মধ্যে একটি কাশিমপুর হাই সিকিউরিটি কারাগার থেকে কীভাবে এতজন বন্দি পালিয়ে গেল, তা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন নিরাপত্তা বিশ্লেষকরা। সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের দায়িত্বে গাফিলতির অভিযোগ তুলেছেন অনেকে।
আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, পলাতক বন্দিদের ধরতে ব্যাপক অভিযান চালানো হচ্ছে এবং ইতোমধ্যে কয়েকজনকে গ্রেপ্তারও করা হয়েছে। তবে বাকি বন্দিরা কোথায়, কীভাবে পালিয়েছে, সে বিষয়ে নিশ্চিত কোনো তথ্য দেওয়া হয়নি। অন্যদিকে, কারা কর্তৃপক্ষ দাবি করছে, ঘটনাটি অনাকাঙ্ক্ষিত এবং এ বিষয়ে তদন্ত চলছে।
এ ঘটনায় সরকারের পক্ষ থেকে আনুষ্ঠানিক কোনো তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়নি বলে জানা গেছে। তবে এই ঘটনা নিয়ে ব্যাপক সমালোচনা তৈরি হওয়ায় ভবিষ্যতে তদন্ত কমিটি গঠনের সম্ভাবনা রয়েছে। দেশের কারা ব্যবস্থাপনা ও নিরাপত্তা নীতিতে বড় ধরনের ফাঁকফোকর রয়েছে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। তারা বলছেন, এতসংখ্যক মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামির পলায়ন শুধু নিরাপত্তা ব্যবস্থার ব্যর্থতা নয়, বরং এটি কোনো পরিকল্পিত ষড়যন্ত্রের অংশ হতে পারে।
আবরারের পরিবার দ্রুত পলাতক আসামিকে গ্রেপ্তার করে দণ্ড কার্যকর করার দাবি জানিয়েছে। পাশাপাশি, কারাগারের নিরাপত্তা ব্যবস্থার দুর্বলতা খতিয়ে দেখতে স্বতন্ত্র তদন্ত কমিটি গঠনের দাবি উঠেছে বিভিন্ন মহল থেকে। তবে এখন পর্যন্ত কারা অধিদপ্তর বা স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে আনুষ্ঠানিক কোনো ঘোষণা আসেনি।