মুহাম্মদ ইউনূসের পদত্যাগের সম্ভাবনা ও অন্তর্বর্তী সরকারের ভবিষ্যৎ নিয়ে প্রশ্ন
অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস যদি পদত্যাগ করেন, তাহলে দেশের রাজনীতিতে তা বড় ধরনের প্রভাব ফেলতে পারে—এমন আশঙ্কা ও বিশ্লেষণ এখন চলমান। আইনগত দিক থেকে প্রশ্ন উঠছে, এমন পরিস্থিতিতে অন্তর্বর্তী সরকার পুনর্গঠনের সুযোগ কতটা রয়েছে, এবং সেই প্রক্রিয়ায় আইনি কোনো বাধা রয়েছে কি না।
আইনজীবীদের মতে, ড. ইউনূস পদত্যাগ করলে তার নেতৃত্বাধীন উপদেষ্টা পরিষদ স্বয়ংক্রিয়ভাবে কার্যকারিতা হারাতে পারে। আইনজীবী মনজিল মোর্শেদ বলেন, “উনাদেরকে প্রধান উপদেষ্টা মনোনীত করেছেন যে, তিনি না থাকলে অন্যদেরও থাকার সুযোগ নেই।” তবে তার মতে, নতুন প্রধান উপদেষ্টা চাইলে আগের উপদেষ্টাদের আবারও রাখতে পারেন।
আইনজীবী ড. শাহদীন মালিক বলেন, বর্তমানে যা চলছে, তা অনেকটাই আইনের বাইরে। তার ভাষায়, “আইন অনুযায়ী কিছু হচ্ছে না। সবই হচ্ছে জোড়াতালির ভিত্তিতে।” তিনি মনে করেন, ইউনূস পদত্যাগ করলে নতুন সরকার গঠনের ক্ষেত্রে প্রধান রাজনৈতিক দলগুলোকে সমঝোতায় পৌঁছাতে হবে।
এই আলোচনার সূত্রপাত এনসিপি নেতা নাহিদ ইসলামের বক্তব্য থেকে। তিনি জানিয়েছেন, অধ্যাপক ইউনূস তার পদত্যাগ নিয়ে ভাবছেন। গত বৃহস্পতিবার তিনি রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় গিয়ে ইউনূসের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন এবং তার কাছ থেকে পদত্যাগ নিয়ে এমন ইঙ্গিত পেয়েছেন।
এর ফলে এখন স্বাভাবিকভাবেই প্রশ্ন উঠছে, ইউনূস পদত্যাগ করলে সরকারব্যবস্থা কীভাবে চলবে? এই অন্তর্বর্তী সরকার নতুন করে গঠন করা যাবে কি?
কিছু আইন বিশেষজ্ঞের মতে, যেহেতু এই সরকার সুপ্রিম কোর্টের মতামতের ভিত্তিতে এবং রাজনৈতিক দলগুলোর সম্মতিতে গঠিত হয়েছে, তাই ইউনূসের পদত্যাগ কোনো সাংবিধানিক সংকট তৈরি করবে না। বরং রাষ্ট্রপতি চাইলে আবার একটি নির্বাচনকালীন সরকার গঠন করতে পারেন, যার দায়িত্ব হবে নির্বাচন সম্পন্ন করা।
তবে পরিস্থিতিকে ঘোলাটে করেছে সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধনীর আংশিক বাতিল। আওয়ামী লীগ সরকারের সময়ে এই সংশোধনীর মাধ্যমে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা বাতিল করা হয়, কিন্তু রাজনৈতিক পরিস্থিতির পরিবর্তনের পর হাইকোর্ট এর কিছু অংশ বাতিল করে। এর ফলে এক ধরনের সাংবিধানিক অনিশ্চয়তা তৈরি হয়েছে।
ড. শাহদীন মালিক মনে করেন, এখন কোনো আইনি কাঠামো নয়, বরং রাজনৈতিক সমঝোতাই মূল নিয়ামক হয়ে উঠেছে। তার ভাষায়, “আইনের প্রশ্ন এখন অবান্তর।”
সব মিলিয়ে বলা যায়, অধ্যাপক ইউনূস পদত্যাগ করলে রাজনৈতিক সমঝোতা ও কূটনৈতিক দক্ষতার মাধ্যমে নতুন পথ নির্ধারণ করতে হবে। আর এ পথ কতটা মসৃণ হবে, তা নির্ভর করছে রাজনৈতিক দলগুলোর পরিপক্বতা ও দায়বদ্ধতার ওপর।