ঐতিহাসিক ফারাক্কা দিবস আজ: নদীর পানির ন্যায্য হিস্যার লড়াইয়ের স্মরণে
আজ ১৬ মে, ঐতিহাসিক ফারাক্কা দিবস। ১৯৭৬ সালের এই দিনে প্রবীণ রাজনীতিক ও মজলুম জননেতা মওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানীর নেতৃত্বে অনুষ্ঠিত হয়েছিল ফারাক্কা অভিমুখে লংমার্চ, যা নদীর পানির ন্যায্য হিস্যার দাবিতে দেশজুড়ে সাড়া ফেলেছিল। ভারতের একতরফাভাবে ফারাক্কা বাঁধ চালুর মাধ্যমে পদ্মা নদীর পানি প্রত্যাহারের বিরোধিতায় এই আন্দোলন আয়োজিত হয়েছিল। লংমার্চের মাধ্যমে আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক পরিসরে গুরুত্ব পায় বাংলাদেশের পানির অধিকারের প্রশ্নটি।
১৯৭৫ সালের ২১ এপ্রিল ফারাক্কা বাঁধ চালু হওয়ার পরপরই এর বিরূপ প্রভাব বাংলাদেশের পরিবেশে দৃশ্যমান হয়। দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলে নদী শুকিয়ে যাওয়ার পাশাপাশি দেখা দেয় খরা, নদীভাঙন ও নানা ধরনের পরিবেশগত বিপর্যয়। এই পরিস্থিতিতে জাতিকে জাগিয়ে তুলতে মওলানা ভাসানী প্রতিবাদে নামার আহ্বান জানান এবং ফারাক্কা অভিমুখে লংমার্চের ঘোষণা দেন।
রাজশাহী থেকে ১৯৭৬ সালের ১৬ মে শুরু হয় লংমার্চ। মওলানা ভাসানী ঘোষিত লক্ষ্য ছিল ভারতের অভ্যন্তরে ফারাক্কা পর্যন্ত পৌঁছানো, তবে তৎকালীন সরকারের আপত্তির কারণে পদযাত্রা শেষ হয় ১৭ মে চাঁপাইনবাবগঞ্জের কানসাটে, ভারতীয় সীমান্তের কাছাকাছি। ৯৫ বছর বয়সে শারীরিক অসুস্থতা ও রাজনৈতিক চাপ উপেক্ষা করে মওলানা ভাসানীর নেতৃত্বে এ লংমার্চ হয়েছিল অভূতপূর্ব।
ফারাক্কার বিরুদ্ধে প্রতিবাদের প্রেক্ষাপট তৈরি হয়েছিল অনেক আগে থেকেই। ১৯৫২ সাল থেকে পদ্মার পানি বণ্টন নিয়ে পাকিস্তান-ভারত আলোচনা চললেও পাকিস্তান সরকার বিষয়টিকে যথাযথ গুরুত্ব দেয়নি। একমাত্র মওলানা ভাসানীর নেতৃত্বাধীন লংমার্চই আন্তর্জাতিক অঙ্গনে বিষয়টি জোরালোভাবে তুলে ধরতে পেরেছিল।
ফারাক্কা বাঁধ দিয়ে ভারত প্রথমে পরীক্ষামূলকভাবে পানি প্রত্যাহারের কথা বললেও ১৯৭৫ সাল থেকে সেই প্রবাহ বন্ধ রাখে। এর ফলে দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলে দীর্ঘমেয়াদি পানির সংকট শুরু হয়, যা এখনও চলছে। খরা, চর জেগে ওঠা ও শাখা নদনদীর শুকিয়ে যাওয়া এর প্রতিফলন।
১৯৯৬ সালের ১২ ডিসেম্বর গঙ্গা নদীর পানি ভাগাভাগি নিয়ে ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যে ৩০ বছরের এক চুক্তি স্বাক্ষরিত হলেও তা কাঙ্ক্ষিত ফল দেয়নি। চুক্তি অনুযায়ী, প্রতিবছর ১ জানুয়ারি থেকে ৩১ মে পর্যন্ত বাংলাদেশকে গড়ে ৩৫ হাজার কিউসেক পানি সরবরাহ করার কথা থাকলেও ভারত এই প্রতিশ্রুতি যথাযথভাবে রক্ষা করেনি। বাংলাদেশের পক্ষ থেকেও সময়মতো জোরালো প্রতিবাদ দেখা যায়নি।
আজকের দিনে, ফারাক্কা দিবস স্মরণ করায় একটি ঐতিহাসিক আন্দোলনের কথা, যার মাধ্যমে পানির ন্যায্য হিস্যার প্রশ্নে বাংলাদেশ একবার আন্তর্জাতিক অঙ্গনে দৃঢ় বার্তা দিয়েছিল। ২০২৬ সালে বর্তমান চুক্তির মেয়াদ শেষ হচ্ছে, তাই আগামী দিনগুলোতে দেশের স্বার্থ রক্ষায় নতুন করে কৌশল নির্ধারণ করা সময়ের দাবি।