প্রতিযোগিতা ধ্বংস করে দেওয়া হয়েছে, পুনর্গঠনের তাগিদ বাণিজ্য উপদেষ্টার
বাণিজ্য উপদেষ্টা শেখ বশিরউদ্দীন অভিযোগ করেছেন, গত ১৫ বছরে দেশের বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের সক্ষমতা পরিকল্পিতভাবে ভেঙে ফেলা হয়েছে। এতে স্থানীয় শিল্প ও বাজারের স্বাভাবিক প্রতিযোগিতা মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। মঙ্গলবার হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টালে আয়োজিত ‘বাংলাদেশে প্রতিযোগিতা নীতিঃ সম্ভাবনা, প্রতিবন্ধকতা এবং এগিয়ে যাওয়ার পথ’ শীর্ষক সেমিনারে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
তিনি জানান, দায়িত্ব নেওয়ার পর সরকারকে নানা চ্যালেঞ্জের মুখে পড়তে হয়েছে। তবে ইতোমধ্যে রেমিটেন্স ও রপ্তানি খাতে ইতিবাচক অগ্রগতি হয়েছে এবং অন্যান্য খাতেও ধীরে ধীরে সফলতা আসছে বলে মন্তব্য করেন তিনি।
বাজারে অসাধু ব্যবসায়ীদের দৌরাত্ম্য ও সম্পদের অসম বণ্টনের বিষয়ে তিনি বলেন, প্রাতিষ্ঠানিক কাঠামো ভেঙে ফেলার কারণে একটি ‘ক্রনিজ’ গোষ্ঠী গড়ে উঠেছে, যারা প্রতিযোগিতায় নতুনদের প্রবেশে বাধা দিচ্ছে। এর ফলে বাজারে বৈষম্য বাড়ছে এবং সাধারণ মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।
তিনি আরও বলেন, প্রতিযোগিতা কমিশনও এর ব্যতিক্রম নয়। অতীতে এই প্রতিষ্ঠানটির কার্যকারিতা ধ্বংস করে ফেলা হয়েছিল বলে দাবি করেন তিনি। জনগণ প্রতিদিনের জীবনে এই কমিশনের কার্যকর ভূমিকা দেখতে চায় বলেও মন্তব্য করেন বাণিজ্য উপদেষ্টা।
বাজারে সুষ্ঠু প্রতিযোগিতা নিশ্চিত করতে প্রতিযোগিতা কমিশনকে আরও সক্রিয় হতে হবে জানিয়ে তিনি বলেন, বড় প্রতিষ্ঠানগুলো ছোটদের টিকে থাকতে দিচ্ছে না। তারা ইচ্ছাকৃতভাবে কম দামে পণ্য বিক্রি করে প্রতিযোগিদের বাজার থেকে সরিয়ে দিচ্ছে। এর বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণের আহ্বান জানান তিনি। এছাড়া ভোক্তাদের জিম্মি করে যারা অবৈধভাবে আয় করছে এবং সরকারকে রাজস্ব ফাঁকি দিচ্ছে, তাদের বিরুদ্ধেও কঠোর পদক্ষেপ নেওয়ার প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরেন তিনি।
সেমিনারে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন র্যাপিডের চেয়ারম্যান ড. এম এ রাজ্জাক। আলোচনায় অংশ নেন বিআইডিএস পরিচালক ড. এ কে এনামুল হক, প্রতিযোগিতা কমিশনের সদস্য ড. আফরোজা বিলকিস, যুক্তরাজ্যের ফরেন কমনওয়েলথ অফিসের ইকনোমিক অ্যাডভাইজর ইসাম মোসাদ্দেক ও মেট্রোপলিটন চেম্বার অব কমার্সের সভাপতি কামরান টি রহমান।
প্রতিযোগিতা কমিশনের চেয়ারম্যান এ এইচ এম আহসান বলেন, কমিশন শুধু জরিমানা করে না, বরং ছোট প্রতিষ্ঠানগুলোর সুরক্ষায়ও কাজ করে। সিন্ডিকেট ভেঙে সবার জন্য সমান প্রতিযোগিতার সুযোগ তৈরি করাই তাদের লক্ষ্য।
বাণিজ্য সচিব মাহবুবুর রহমান জানান, দেশের বাজারে প্রতিযোগিতার অভাব রয়েছে, কারণ মাত্র ৫-৬টি প্রতিষ্ঠান একই উৎস থেকে পণ্য কিনে বাজারজাত করছে। এ অবস্থার উন্নয়নে সরকার নানামুখী পদক্ষেপ নিচ্ছে বলে জানান তিনি।
অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য দেন বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশনের চেয়ারম্যান ড. মইনুল খান ও ইউএনডিপির উপ আবাসিক প্রতিনিধি সোনালী দয়ারাত্নে।