১ জুন পালিত হলো বিশ্ব পিতা-মাতা দিবস
পিতা-মাতা—এই দুটি শব্দের মধ্যেই লুকিয়ে থাকে নিঃস্বার্থ ভালোবাসা, আত্মত্যাগ এবং অশেষ সহানুভূতির এক অনন্য প্রতিচ্ছবি। একজন মানুষের জীবনের শুরু থেকে পরিণতি পর্যন্ত প্রতিটি ধাপে যাঁরা ছায়ার মতো পাশে থাকেন, তাঁরা হলেন বাবা-মা। শিশুর প্রথম শিক্ষক হিসেবে পিতা-মাতা শুধু শিক্ষা নয়, জীবনের প্রতিটি বাঁকেই তাঁরা সন্তানকে পথ দেখান নিঃস্বার্থ ভালোবাসা থেকে।
এই ভালোবাসা ও আত্মত্যাগকে সম্মান জানাতে প্রতি বছর ১ জুন পালিত হয় ‘বিশ্ব পিতা-মাতা দিবস’। জাতিসংঘ ২০১২ সালের ১৭ সেপ্টেম্বর এই দিনটিকে আন্তর্জাতিক দিবস হিসেবে স্বীকৃতি দেয়। এই দিবসের লক্ষ্য হলো পিতা-মাতার ভূমিকার স্বীকৃতি দেওয়া, শিশুদের মানসিক-শারীরিক বিকাশে তাঁদের অবদানের বিষয়ে সচেতনতা তৈরি করা এবং পরিবারকে ভালোবাসা ও সহানুভূতির ভিত্তিতে গড়ে তোলার জন্য উৎসাহিত করা।
একটি শিশুর প্রথম হাঁটা, কথা বলা বা স্কুলে যাওয়া—এইসব মুহূর্ত বাবা-মার জীবনে বিশাল এক আবেগের উৎস। সন্তানের মুখে হাসি ফোটাতে তাঁরা নিজেদের ইচ্ছা, প্রয়োজন এমনকি স্বপ্নও বিসর্জন দেন। মা নতুন শাড়ি না কিনে সন্তানের স্কুল ফিস দেন, বাবা রাতভর পরিশ্রম করে সন্তানের প্রিয় খেলনাটা এনে দেন—এইসব আত্মত্যাগের কোনো তুলনা চলে না।
দুঃখজনক হলেও সত্য, আমরা অনেক সময় এই অবদানকে অবহেলা করি। তাঁদের উপদেশ আমাদের কাছে কখনো বিরক্তিকর, কখনো আবার স্বাধীনতায় হস্তক্ষেপ বলে মনে হয়। কিন্তু তাঁদের প্রতিটি উদ্বেগের পেছনে থাকে অভিজ্ঞতা আর নিঃস্বার্থ ভালোবাসার ছোঁয়া।
আরও কষ্টের বিষয় হলো, সন্তান প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পর অনেকেই বাবা-মার অবদান ভুলে যায়। সময়ের অভাব দেখিয়ে তাঁদের সঙ্গে যোগাযোগ কমিয়ে দেয়। অথচ ছোটবেলায় প্রতিটি কান্নায়, প্রতিটি সমস্যায় ছুটে এসেছিলেন তাঁরাই। তাঁরা যদি তখন আমাদের দূরে সরিয়ে দিতেন, তাহলে আমরা কি আজকের অবস্থানে আসতে পারতাম?
বৃদ্ধ বয়সে বাবা-মার সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন হয় সন্তানের সময়, ভালোবাসা আর শ্রদ্ধা। দামি উপহার বা বিলাসিতা তাঁদের কাছে গুরুত্বপূর্ণ নয়—তাঁরা চান সন্তানের আন্তরিকতা আর সান্নিধ্য।
বিশ্ব পিতা-মাতা দিবস কেবল একদিনের আনুষ্ঠানিকতা নয়—এটি একটি বার্তা, যা প্রতিদিনের দায়িত্ব মনে করিয়ে দেয়। এই দিনে কেউ চাইলে বাবা-মার জন্য কৃতজ্ঞতাসূচক একটি চিঠি লিখতে পারেন, তাঁদের পছন্দের খাবার রান্না করে দিতে পারেন বা কেবল একটু সময় নিয়ে গল্প করতে পারেন। ছোট ছোট এই কাজগুলোই তাঁদের মন ভরে দেয়।
যাঁরা বাবা-মাকে হারিয়েছেন, তাঁরা তাঁদের স্মৃতিচারণ করতে পারেন, তাঁদের জীবনের গল্প লিখে রাখতে পারেন ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য—যাতে বোঝা যায়, পিতা-মাতা কতটা ভালোবাসা ও আত্মত্যাগের প্রতীক হতে পারেন।
পিতা-মাতা শুধু জন্মদাতা নন—তাঁরা জীবনের প্রতিটি ধাপে সাহচর্য, নির্ভরতা ও বন্ধুত্বের প্রতীক। তাঁদের প্রতি ভালোবাসা ও শ্রদ্ধা যেন কেবল ১ জুন নয়, প্রতিদিনই আমাদের হৃদয়ে জাগ্রত থাকে। বিশ্ব পিতা-মাতা দিবস আমাদের মনে করিয়ে দেয়, যাঁরা আমাদের জীবনে সবচেয়ে বেশি দিয়েছেন, তাঁদের যেন কোনোদিন অবহেলা না করি।