বাংলাদেশ ব্যাংকের নতুন খেলাপি ঋণ নীতির কারণে বেসরকারি খাতের উপর নেতিবাচক প্রভাব পড়তে পারে, এমন আশঙ্কা করছেন দেশের ব্যবসায়ীরা। তাদের মতে, এই নতুন নিয়ম বিনিয়োগে বাধা সৃষ্টি করবে এবং কর্মসংস্থানে নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে, যা দেশের সামষ্টিক অর্থনীতিতে সমস্যা তৈরি করতে পারে।
শনিবার (৭ ডিসেম্বর) রাজধানীর উত্তরায় বাংলাদেশ পোশাক প্রস্তুতকারক ও রপ্তানিকারক সমিতি (বিজিএমইএ) কমপ্লেক্সে অনুষ্ঠিত এক মতবিনিময় সভায় এসব উদ্বেগ প্রকাশ করেন ব্যবসায়ীরা। বিজিএমইএ কমপ্লেক্সে আয়োজিত এই সভার সভাপতিত্ব করেন বিজিএমইএ প্রশাসক মো. আনায়ার হোসেন।
নতুন নিয়মের প্রভাব নিয়ে শঙ্কা
সভায় ব্যবসায়ীরা জানালেন, নতুন খেলাপি ঋণ নীতির প্রভাবে তৈরি পোশাকসহ শিল্প খাতগুলোর জন্য বড় ধরনের ক্ষতি হতে পারে। তারা বলেন, ২০২০ সালের এপ্রিল থেকে নতুন নীতি কার্যকর হলে খেলাপি ঋণের সংখ্যা বাড়বে, যা ব্যবসায়ীদের জন্য বড় ধাক্কা হতে পারে। নতুন নিয়মের ফলে শিল্পগুলোতে কী ধরনের প্রভাব পড়বে, সে বিষয়ে খাতভিত্তিক গবেষণা করতে একমত হন ব্যবসায়ী নেতারা।
শিল্পের নিরাপত্তা ও সেশনজটের সমস্যা
এছাড়া সভায় দেশের শিল্প খাতের নিরাপত্তাহীনতা, বিশেষ করে সম্প্রতি মাহমুদ জিন্স কারখানার ডিএমডির ওপর হামলার প্রসঙ্গ উঠে আসে। ব্যবসায়ীরা বলেন, এসব ধরনের ঘটনা ব্যবসায়ীদের মধ্যে আতঙ্ক সৃষ্টি করেছে, যার ফলে উদ্যোক্তারা তাদের কারখানা পরিচালনায় অনীহা দেখাতে পারেন। এমন পরিস্থিতি ব্যবসা-বাণিজ্য এবং বিনিয়োগে বড় ধরনের ঝুঁকি তৈরি করতে পারে, যা দেশের অর্থনীতির জন্য ভালো নয়।
এলডিসি গ্র্যাজুয়েশন নিয়ে উদ্বেগ
সভায় ২০২৬ সালে বাংলাদেশের এলডিসি গ্র্যাজুয়েশন নিয়েও আলোচনা হয়। ব্যবসায়ী নেতারা বলেন, এলডিসি থেকে বেরিয়ে গেলে বাংলাদেশ কিছু বাণিজ্যিক সুবিধা হারাবে। তাদের মতে, বাংলাদেশের সক্ষমতা বিবেচনায় বিশ্ববাজারে প্রতিযোগিতা বাড়ানোর জন্য আরও কিছু সময় দরকার। এ কারণে এলডিসি গ্র্যাজুয়েশন স্থগিত করতে ৩-৬ বছর সময় বাড়ানোর প্রস্তাব করেন তারা।
বাংলাদেশ ব্যাংকের নতুন খেলাপি ঋণ নীতি
বাংলাদেশ ব্যাংক ২৭ নভেম্বর খেলাপি ঋণ সম্পর্কিত নতুন নীতিমালা ঘোষণা করেছে, যা আগামী বছরের এপ্রিল থেকে কার্যকর হবে। নতুন নিয়মে বলা হয়েছে, ঋণের পরিশোধের নির্ধারিত সময়সীমার পর ঋণটি পরবর্তী দিন থেকেই মেয়াদোত্তীর্ণ হিসেবে গণ্য হবে। ঋণ পরিশোধের সময়সীমা ৩-৬ মাসের মধ্যে হলে ঋণটি খেলাপি হিসেবে চিহ্নিত হবে, ৬-১২ মাসে সন্দেহজনক এবং ১২ মাস বা তার বেশি হলে তা মন্দ হিসেবে গণ্য হবে।
ব্যবসায়ীদের জন্য বড় উদ্বেগ
ব্যবসায়ীরা আশঙ্কা করছেন যে, এই নতুন নিয়ম দেশের শিল্প খাতে নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে। তাদের মতে, ব্যাংক ঋণের শর্তাবলী আরও কঠোর হওয়ায় ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পসহ অন্যান্য খাতে বিনিয়োগে বড় ধরনের সমস্যা সৃষ্টি হতে পারে। অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি অব্যাহত রাখতে এবং কর্মসংস্থান সুরক্ষিত রাখতে শিল্পাঞ্চলগুলোতে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি উন্নত করার জোর দাবি জানিয়েছেন তারা।
এদিকে, মতবিনিময় সভায় উপস্থিত ছিলেন বিভিন্ন বাণিজ্য সংগঠনের নেতারা, যাদের মধ্যে ছিলেন এফবিসিসিআই প্রশাসক মো. হাফিজুর রহমান, বিকেএমইএ সভাপতি মোহম্মদ হাতেম, বিসিআই সভাপতি আনোয়ার-উল আলম চৌধুরী (পারভেজ) এবং অন্যান্য শিল্প নেতারা।