বিনা পারিশ্রমিকে কবর খনন করা মনু মিয়ার পাশে দাঁড়ালেন অভিনেতা খায়রুল বাসার
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে আলোচনার কেন্দ্রে উঠে এসেছেন কিশোরগঞ্জের মিঠামইনের মনু মিয়া, যিনি প্রায় পাঁচ দশক ধরে বিনা পারিশ্রমিকে কবর খুঁড়ে আসছেন। গ্রামবাসীর কাছে তিনি পরিচিত ‘গোরখোদক’ হিসেবে। ৪৯ বছরের এই নিরলস সেবাযাত্রায় তিনি খনন করেছেন প্রায় ৩ হাজারেরও বেশি কবর, কখনো কোনো অর্থ বা উপহার না নিয়েই।
মনু মিয়া মৃত্যুসংবাদ পেলেই নিজের লাল ঘোড়া নিয়ে হাজির হতেন মৃতব্যক্তির বাড়িতে। কিন্তু দুর্ভাগ্যজনকভাবে সেই বিশ্বস্ত ঘোড়াটি আর নেই—তিনি যখন ঢাকার এক হাসপাতালে চিকিৎসাধীন, সেই সময় কিছু দুষ্কৃতকারী তার ঘোড়াটিকে ধারালো অস্ত্র দিয়ে হত্যা করে। বিষয়টি এখনো মনু মিয়ার কাছ থেকে গোপন রাখা হয়েছে, কারণ তার শারীরিক ও মানসিক অবস্থার কথা চিন্তা করে তার স্ত্রী ও স্বজনেরা সেটি জানাতে সাহস পাচ্ছেন না।
ঘটনাটি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে অনেকেই আবেগাপ্লুত হন, তাদের মধ্যে অন্যতম অভিনেতা খায়রুল বাসার। তিনি এক ফেসবুক পোস্টে লেখেন, “মনু মিয়াকে আমি ঘোড়া কিনে দিতে চাই। আমার কবর খোঁড়ার আগ পর্যন্ত আল্লাহ যেন তাকে সুস্থ ও নিরাপদ রাখেন।” পাশাপাশি তিনি অনুরোধ জানান, কেউ যদি মনু মিয়ার সঙ্গে যোগাযোগ করিয়ে দিতে পারেন, তবে তিনি চিরকৃতজ্ঞ থাকবেন।
এরপর তিনি মনু মিয়ার সঙ্গে ফোনে কথা বলেন এবং তাকে হাসপাতালে দেখতে যাওয়ার আশ্বাস দেন। শেষ পর্যন্ত সোমবার রাতেই তিনি হাসপাতালে গিয়ে দেখা করেন এই মানবিক মানুষটির সঙ্গে। দীর্ঘ সময় ধরে কথা বলেন তার সঙ্গে এবং সেই মুহূর্তের ছবি সামাজিক মাধ্যমে শেয়ার করে তাকে “নায়ক” হিসেবে অভিহিত করেন।
ফেসবুক পোস্টে খায়রুল বাসার লেখেন, “আজ এক নায়কের সাথেই দেখা হলো আমার। আমি নিজ চোখে এক নায়ককেই দেখে আসলাম, বুক মেলালাম এক নায়কের সাথে! আজন্ম এক নায়ক মনু মিয়া। এই নায়কের গল্প বলবো শিগগিরেই। এটুকু বলি, মনু মিয়া অসহায় না বরং অসহায়ের সহায় হয়ে ওঠার প্রচণ্ড শক্তি আছে তার। এই দিশাহীন সমাজে এক আদর্শের নাম মনু মিয়া।”
এই ঘটনা মনু মিয়ার নিঃস্বার্থ সেবার প্রতি সমাজের কৃতজ্ঞতাবোধের অনন্য উদাহরণ হয়ে থাকল।