বাংলাদেশে স্টারলিংক ইন্টারনেটের পরীক্ষামূলক ব্যবহার শুরু ৯ এপ্রিল
বাংলাদেশে ইন্টারনেট সেবায় একটি নতুন যুগের সূচনা হতে যাচ্ছে। আগামী ৯ এপ্রিল থেকে ইলন মাস্কের মালিকানাধীন স্টারলিংকের স্যাটেলাইটভিত্তিক হাই-স্পিড ইন্টারনেট সেবার পরীক্ষামূলক ব্যবহার শুরু হবে। এই উদ্যোগটি বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (বিডা) আয়োজিত চার দিনব্যাপী বিনিয়োগ সম্মেলনের অংশ হিসেবে চালু হচ্ছে। সম্মেলনটি ৭ এপ্রিল থেকে শুরু হলেও আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন হবে ৯ এপ্রিল, এবং এই দিনই স্টারলিংকের ইন্টারনেট সেবা প্রথমবারের মতো পরীক্ষামূলকভাবে ব্যবহৃত হবে। প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস ঢাকার হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টালে এই সম্মেলনের উদ্বোধন করবেন।
বিডার নির্বাহী চেয়ারম্যান চৌধুরী আশিক মাহমুদ বিন হারুন গত ২৩ মার্চ রাজধানীর ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে এক সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানিয়েছেন। তিনি বলেন, “বিদেশি বিনিয়োগকারীদের কাছে বাংলাদেশের সম্ভাবনা তুলে ধরার জন্য এই সম্মেলন আয়োজন করা হচ্ছে। এর মাধ্যমে দীর্ঘমেয়াদি বিনিয়োগের একটি পাইপলাইন তৈরি হবে।” এই সম্মেলনে ৫০টিরও বেশি দেশ থেকে ৫৫০ জন বিদেশি বিনিয়োগকারী এবং বাংলাদেশ থেকে ২ হাজারের বেশি প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধি অংশ নেবেন। এর মধ্যে চীন, যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, জাপান ও ভারতের বিনিয়োগকারীরা উল্লেখযোগ্য।
স্টারলিংকের পরীক্ষামূলক ব্যবহার শুরুর দিন থেকে সম্মেলনের সব ইভেন্ট সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে লাইভ সম্প্রচার করা হবে। এছাড়া, বিদেশি বিনিয়োগকারীদের জন্য বাংলাদেশের সংস্কৃতি তুলে ধরতে ৯ এপ্রিল সাংস্কৃতিক পরিবেশনার আয়োজনও করা হয়েছে। বিডার চেয়ারম্যান জানান, প্রথম দুই দিন (৭ ও ৮ এপ্রিল) বিদেশি বিনিয়োগকারীরা ঢাকার বাইরে অর্থনৈতিক অঞ্চল পরিদর্শন করবেন। ৭ এপ্রিল তারা চট্টগ্রামের মিরসরাইয়ে জাতীয় অর্থনৈতিক অঞ্চল এবং ৮ এপ্রিল নারায়ণগঞ্জের আড়াইহাজারে জাপান অর্থনৈতিক অঞ্চল দেখতে যাবেন।
স্টারলিংকের ইন্টারনেট সেবা বাংলাদেশের যোগাযোগ ব্যবস্থায় বৈপ্লবিক পরিবর্তন আনতে পারে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। এই সেবা নিরবচ্ছিন্ন ও উচ্চগতির ইন্টারনেট সরবরাহ করবে, যা দুর্গম এলাকায়ও কার্যকর হবে। চৌধুরী আশিক মাহমুদ জানান, “বিনিয়োগের জন্য যোগাযোগ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। স্টারলিংকের মাধ্যমে আমরা নিরবচ্ছিন্ন যোগাযোগ নিশ্চিত করতে চাই। পরীক্ষামূলক ব্যবহারের ৯০ দিন পর এটির আনুষ্ঠানিক যাত্রা শুরু হবে।” তিনি আরও বলেন, এই আয়োজনে ব্যাপক সাড়া মিলেছে এবং ইতোমধ্যে নিবন্ধন বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে।
স্টারলিংকের আগমন বাংলাদেশের ডিজিটাল অর্থনীতিকে নতুন উচ্চতায় নিয়ে যাবে বলে আশা করা হচ্ছে। এটি উদ্যোক্তা, ফ্রিল্যান্সার, এনজিও এবং এসএমই ব্যবসায়ীদের কার্যক্রমকে ত্বরান্বিত করবে। সম্মেলনে নবায়নযোগ্য জ্বালানি, তৈরি পোশাক, কৃষি, স্বাস্থ্য ও হালকা প্রকৌশল খাতে প্রাধান্য দেওয়া হবে। এছাড়া, আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থার (আইএলও) সঙ্গে বৈঠক এবং বেশ কিছু সমঝোতা স্মারক (এমওইউ) স্বাক্ষরের পরিকল্পনাও রয়েছে।
প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম এবং উপ-প্রেস সচিব আবুল কালাম আজাদ মজুমদার সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন। এই উদ্যোগের মাধ্যমে বাংলাদেশে বিদেশি বিনিয়োগ বৃদ্ধি এবং প্রযুক্তিগত উন্নয়নের একটি নতুন দিগন্ত উন্মোচিত হবে বলে আশাবাদী সংশ্লিষ্টরা।
