মহান স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবস আজ: জাতির শ্রদ্ধাঞ্জলি ও উদযাপন
আজ ২৬ মার্চ, মহান স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবস। এটি গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার ৫৪তম বার্ষিকী। ১৯৭১ সালের এই দিনে বিশ্ব মানচিত্রে স্বাধীন বাংলাদেশের আত্মপ্রকাশ ঘটে। একাত্তরের মার্চ মাসজুড়ে পাকিস্তানি সরকারের বিরুদ্ধে অসহযোগ আন্দোলন চলতে থাকে, যার চূড়ান্ত পরিণতি হয় ২৫ মার্চ রাতে পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর নির্মম গণহত্যায়। এরপর ২৬ মার্চ চট্টগ্রামের কালুরঘাট স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্র থেকে মেজর জিয়াউর রহমান স্বাধীনতার ঘোষণা দেন, শুরু হয় মুক্তিযুদ্ধ।
পাকিস্তানের পশ্চিমা শাসকগোষ্ঠী পূর্ব পাকিস্তানের জনগণের ওপর দীর্ঘদিন ধরে শোষণ ও দমনপীড়ন চালিয়ে আসছিল। ১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলনের মধ্য দিয়ে বাঙালির মধ্যে স্বাধিকার আন্দোলনের বীজ বপিত হয়, যা ধীরে ধীরে স্বাধীনতার সংগ্রামে রূপ নেয়। ১৯৭০ সালের নির্বাচনে আওয়ামী লীগ নিরঙ্কুশ বিজয় অর্জন করলেও পাকিস্তানি সামরিক জান্তা ক্ষমতা হস্তান্তরে অস্বীকৃতি জানায়। ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ রাতে শুরু হয় ভয়াবহ গণহত্যা, যার প্রতিরোধে বাঙালি ঝাঁপিয়ে পড়ে মুক্তিযুদ্ধে। দীর্ঘ নয় মাসের রক্তক্ষয়ী সংগ্রামের মাধ্যমে ১৬ ডিসেম্বর বিজয় অর্জিত হয়।
আজ স্বাধীনতার ৫৪তম বার্ষিকী এক বিশেষ প্রেক্ষাপটে উদযাপিত হচ্ছে। গত বছর জুলাই মাসে গণ অভ্যুত্থানের মাধ্যমে ছাত্র-জনতা স্বৈরশাসনের অবসান ঘটিয়েছে। এবার জাতি মুক্তিযুদ্ধ ও গণ অভ্যুত্থানের চেতনা ধারণ করে ন্যায়ভিত্তিক সমাজ প্রতিষ্ঠার সংকল্প নিয়ে স্বাধীনতা দিবস উদযাপন করছে।
সকালেই রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন ও প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস সাভারের জাতীয় স্মৃতিসৌধে শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করবেন। তাদের সঙ্গে মুক্তিযোদ্ধা, রাজনীতিবিদ, বিদেশি কূটনীতিকসহ বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ অংশ নেবেন। এরপর স্মৃতিসৌধে লাখো মানুষের ঢল নামবে, তারা ফুল দিয়ে বীর শহীদদের শ্রদ্ধা জানাবেন।
এ উপলক্ষে আজ সরকারি ছুটি ঘোষণা করা হয়েছে। রাষ্ট্রপতি ও প্রধান উপদেষ্টা বাণী দিয়েছেন, যেখানে দেশের উন্নয়ন, শান্তি ও সমৃদ্ধির পথে কাজ করার শপথ নেওয়ার আহ্বান জানানো হয়েছে। সারা দেশে জাতীয় স্মৃতিসৌধ ও স্থানীয় স্মৃতিসৌধে পুষ্পস্তবক অর্পণ, জাতীয় সংগীত পরিবেশন, কুচকাওয়াজ, ছাত্রসমাবেশ এবং বিশেষ দোয়া ও উপাসনার আয়োজন করা হয়েছে। সংবাদপত্রে বিশেষ ক্রোড়পত্র প্রকাশিত হয়েছে, টেলিভিশন ও রেডিও চ্যানেলগুলো মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক অনুষ্ঠান প্রচার করছে।
আজকের এই মহান দিনে জাতি শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করছে সেইসব অকুতোভয় শহীদদের, যাদের আত্মত্যাগের বিনিময়ে আমরা পেয়েছি স্বাধীন বাংলাদেশ।