রবিবার, ২০শে এপ্রিল, ২০২৫| রাত ১০:২৪

ইরান-যুক্তরাষ্ট্রের পারমাণবিক চুক্তি নিয়ে নতুন আলোচনা: কূটনীতির পথে সমাধানের প্রত্যাশা

প্রতিবেদক
staffreporter
এপ্রিল ২০, ২০২৫ ৫:৪১ অপরাহ্ণ
ইরান-যুক্তরাষ্ট্রের পারমাণবিক চুক্তি নিয়ে নতুন আলোচনা: কূটনীতির পথে সমাধানের প্রত্যাশা

ইরান-যুক্তরাষ্ট্রের পারমাণবিক চুক্তি নিয়ে নতুন আলোচনা: কূটনীতির পথে সমাধানের প্রত্যাশা

ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচি নিয়ে দীর্ঘদিনের উত্তেজনার মধ্যে ইরান এবং যুক্তরাষ্ট্র পারমাণবিক চুক্তি সংক্রান্ত দ্বিতীয় দফা আলোচনায় বসেছে। শনিবার (১৯ এপ্রিল) ইতালির রাজধানী রোমে ওমান দূতাবাসে এই গুরুত্বপূর্ণ বৈঠক শুরু হয়। এর আগে গত সপ্তাহে ওমানে দুই দেশের মধ্যে প্রথম দফা আলোচনা অনুষ্ঠিত হয়েছিল, যাকে ইরান ইতিবাচক হিসেবে অভিহিত করেছিল।

এই আলোচনার পটভূমিতে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের একটি হুঁশিয়ারি বেশ আলোচিত। তিনি বলেছেন, কূটনৈতিক প্রচেষ্টা ব্যর্থ হলে যুক্তরাষ্ট্র ইরানের বিরুদ্ধে সামরিক হামলা চালাতে পারে। এই হুমকির ছায়ার মধ্যেই রোমে দুই দেশের কর্মকর্তারা আলোচনার টেবিলে বসেছেন।

বার্তাসংস্থা রয়টার্সের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, আলোচনায় অংশ নিতে ওমান দূতাবাসে উপস্থিত হয়েছেন ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আব্বাস আরাগচি এবং যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যপ্রাচ্যবিষয়ক বিশেষ দূত স্টিভ উইটকফ। তবে এই বৈঠকে তারা সরাসরি মুখোমুখি কথা বলবেন না। পরিবর্তে, দুজন পৃথক কক্ষে অবস্থান করবেন, এবং একজন ওমানি কর্মকর্তা তাদের বার্তা একে অপরের কাছে পৌঁছে দেবেন। এই পরোক্ষ আলোচনার পদ্ধতি দুই দেশের মধ্যে বিদ্যমান উত্তেজনাপূর্ণ সম্পর্কের প্রেক্ষাপটে গ্রহণ করা হয়েছে।

গত সপ্তাহে ওমানে অনুষ্ঠিত প্রথম বৈঠকে আরাগচি এবং উইটকফ অল্প সময়ের জন্য কথা বললেও পারমাণবিক চুক্তি নিয়ে সরাসরি কোনো আলোচনা হয়নি। তবে তেহরান সেই বৈঠককে ইতিবাচক হিসেবে বর্ণনা করেছে, যা দ্বিতীয় দফা আলোচনার জন্য পথ প্রশস্ত করেছে।

রোমে আলোচনার আগে ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আব্বাস আরাগচি ইতালির পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে একটি পৃথক বৈঠক করেন। এই বৈঠকে তিনি ইরানের অবস্থান স্পষ্ট করে বলেন, “ইরান সবসময় কূটনীতির প্রতি বিশ্বাসী। আমরা মনে করি, এই আলোচনায় অংশগ্রহণকারী সব পক্ষের উচিত এই সুযোগ কাজে লাগিয়ে একটি যুক্তিসঙ্গত এবং যৌক্তিক পারমাণবিক চুক্তিতে পৌঁছানো।” তিনি আরও জোর দিয়ে বলেন, “যেকোনো চুক্তিকে ইরানের সার্বভৌমত্বের প্রতি সম্মান প্রদর্শন করতে হবে। এর মাধ্যমে ইরানের ওপর আরোপিত অন্যায্য নিষেধাজ্ঞাগুলো প্রত্যাহার করতে হবে এবং আমাদের পারমাণবিক কর্মসূচি নিয়ে যেসব সন্দেহ বা ধোঁয়াশা রয়েছে, সেগুলোর সমাধান করতে হবে।”

এর আগে শুক্রবার (১৮ এপ্রিল) আরাগচি রাশিয়ার মস্কো সফরে গিয়েছিলেন। সেখানে তিনি বলেন, যুক্তরাষ্ট্র যদি বাস্তববাদী দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে আলোচনায় অংশ নেয়, তাহলে একটি পারমাণবিক চুক্তিতে পৌঁছানো সম্ভব। তিনি রাশিয়ার সঙ্গেও ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচি এবং আন্তর্জাতিক পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনা করেন, যা এই বিষয়ে আন্তর্জাতিক সহযোগিতার গুরুত্ব তুলে ধরে।

ইরান বরাবরই দাবি করে আসছে যে, তাদের পারমাণবিক কর্মসূচি শান্তিপূর্ণ উদ্দেশ্যে, মূলত বিদ্যুৎ উৎপাদন এবং বৈজ্ঞানিক গবেষণার জন্য। তবে যুক্তরাষ্ট্র এবং পশ্চিমা বিশ্বের কিছু দেশ এই দাবি নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করে আসছে। ২০১৫ সালে স্বাক্ষরিত জয়েন্ট কমপ্রিহেনসিভ প্ল্যান অব অ্যাকশন (জেসিপিওএ) বা পারমাণবিক চুক্তি থেকে ২০১৮ সালে যুক্তরাষ্ট্র একতরফাভাবে বেরিয়ে যাওয়ার পর এই উত্তেজনা আরও বেড়েছে। এরপর ইরানের ওপর নতুন করে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়, যা দেশটির অর্থনীতির ওপর ব্যাপক প্রভাব ফেলেছে।

রোমে চলমান এই আলোচনা মধ্যপ্রাচ্যের ভূ-রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব ফেলতে পারে। কূটনীতির মাধ্যমে একটি সমঝোতায় পৌঁছানো গেলে এই অঞ্চলে স্থিতিশীলতা ফিরে আসার সম্ভাবনা রয়েছে। তবে যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক হুমকি এবং ইরানের সার্বভৌমত্বের প্রশ্ন এই আলোচনাকে জটিল করে তুলেছে। আগামী দিনগুলোতে এই বৈঠকের ফলাফল কোন দিকে যায়, তা বিশ্ব রাজনীতির জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ মাইলফলক হতে পারে।

সূত্র: রয়টার্স

মন্তব্য করুন
Spread the love

সর্বশেষ - বানিজ্য ও অর্থনীতি