শনিবার, ১৯শে এপ্রিল, ২০২৫| সন্ধ্যা ৭:১১

ইয়েমেনে হুথি নিয়ন্ত্রিত বন্দরে মার্কিন হামলা: নিহত ৩৮, আহত ১০২

প্রতিবেদক
staffreporter
এপ্রিল ১৮, ২০২৫ ৮:১৪ অপরাহ্ণ
ইয়েমেনে হুথি নিয়ন্ত্রিত বন্দরে মার্কিন হামলা: নিহত ৩৮, আহত ১০২

ইয়েমেনে হুথি নিয়ন্ত্রিত বন্দরে মার্কিন হামলা: নিহত ৩৮, আহত ১০২

ইয়েমেনের পশ্চিমাঞ্চলের রাস ইসা জ্বালানি বন্দরে মার্কিন সেনাবাহিনীর হামলায় কমপক্ষে ৩৮ জন নিহত এবং ১০২ জন আহত হয়েছেন। হুথি নিয়ন্ত্রিত সংবাদমাধ্যম আল মাসিরাহর বরাত দিয়ে আন্তর্জাতিক সংবাদ সংস্থা রয়টার্স এ তথ্য জানিয়েছে। এটিকে ইরান-সমর্থিত হুথি গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সাম্প্রতিক সময়ের সবচেয়ে বড় হামলাগুলোর একটি হিসেবে বিবেচনা করা হচ্ছে।

হামলার উদ্দেশ্য
ইউএস সেন্ট্রাল কমান্ড এক্সে এক পোস্টে জানিয়েছে, এই হামলার মূল লক্ষ্য ছিল হুথি গোষ্ঠীর অর্থনৈতিক ক্ষমতার উৎস ধ্বংস করা। আল মাসিরাহ টিভির প্রতিবেদনে বলা হয়, মার্কিন সেনাবাহিনী এই হামলার মাধ্যমে হুথিদের জ্বালানি সরবরাহ ব্যবস্থা বন্ধ করতে চেয়েছে। তবে, হুথিদের দেওয়া হতাহতের সংখ্যা নিয়ে পেন্টাগন থেকে তাৎক্ষণিকভাবে কোনো মন্তব্য করা হয়নি।

হামলার পটভূমি
গত মাস থেকে যুক্তরাষ্ট্র হুথি গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে বড় আকারের সামরিক হামলা শুরু করেছে। মার্কিন কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, লোহিত সাগরে বাণিজ্যিক জাহাজে হুথিদের হামলা বন্ধ না হওয়া পর্যন্ত তারা এই অভিযান অব্যাহত রাখবে। ২০২৩ সালের নভেম্বর থেকে হুথি গোষ্ঠী লোহিত সাগরে চলাচলকারী একাধিক জাহাজে ড্রোন ও ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালিয়েছে। তারা দাবি করেছে, গাজায় ইসরায়েলের সামরিক অভিযানের প্রতিবাদে তারা ইসরায়েল-সংশ্লিষ্ট জাহাজগুলোকে লক্ষ্য করে এই হামলা চালাচ্ছে।

২০২৪ সালে গাজায় দুই মাসের যুদ্ধবিরতির সময় হুথিরা লোহিত সাগরে হামলা বন্ধ রেখেছিল। কিন্তু গত মাসে ইসরায়েল গাজায় পুনরায় সামরিক অভিযান শুরু করলে হুথিরা আবারও লোহিত সাগরে জাহাজে হামলার হুমকি দেয়। যদিও এখন পর্যন্ত তারা এই হুমকির বাস্তবায়নের কোনো দাবি করেনি।

হামলার তীব্রতা
বৃহস্পতিবারের এই হামলাটি মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের দ্বিতীয় মেয়াদে ক্ষমতা গ্রহণের পর হুথিদের বিরুদ্ধে সবচেয়ে বড় হামলাগুলোর একটি। হুথি কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, গত মার্চ মাসে মার্কিন বাহিনীর দুই দিনের হামলায় ৫০ জনেরও বেশি মানুষ নিহত হয়েছিল। রাস ইসা বন্দরে সাম্প্রতিক এই হামলা হুথিদের জ্বালানি অবকাঠামোর ওপর মার্কিন বাহিনীর ক্রমবর্ধমান চাপের একটি অংশ।

হুথি গোষ্ঠী ও লোহিত সাগরের গুরুত্ব
ইরান-সমর্থিত হুথি গোষ্ঠী ইয়েমেনের উল্লেখযোগ্য অংশ নিয়ন্ত্রণ করে এবং লোহিত সাগরের বাণিজ্য রুটে তাদের প্রভাব উল্লেখযোগ্য। লোহিত সাগর বিশ্ব বাণিজ্যের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ সমুদ্রপথ, যেখান দিয়ে প্রতিদিন বিপুল পরিমাণ পণ্য পরিবহন করা হয়। হুথিদের হামলা এই রুটের নিরাপত্তার ওপর হুমকি সৃষ্টি করেছে, যা যুক্তরাষ্ট্র ও তার মিত্রদের জন্য উদ্বেগের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।

হুথিরা তাদের হামলাকে গাজার ফিলিস্তিনিদের প্রতি সংহতি এবং ইসরায়েলের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ হিসেবে বর্ণনা করে। তবে, এই হামলার ফলে বৈশ্বিক বাণিজ্যে ব্যাঘাত এবং জ্বালানি সরবরাহে অস্থিতিশীলতার আশঙ্কা তৈরি হয়েছে।

আন্তর্জাতিক প্রেক্ষাপট
ইয়েমেনে হুথি গোষ্ঠীর সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্র ও তার মিত্রদের সংঘাত মধ্যপ্রাচ্যের জটিল ভূ-রাজনৈতিক পরিস্থিতির একটি অংশ। ইরানের সমর্থন হুথিদের সামরিক সক্ষমতা বাড়িয়েছে, যা মার্কিন নেতৃত্বাধীন বাহিনীর জন্য চ্যালেঞ্জ তৈরি করেছে। গাজায় ইসরায়েলের সামরিক অভিযান এই সংঘাতকে আরও উত্তপ্ত করেছে, কারণ হুথিরা এই ইস্যুকে তাদের হামলার ন্যায্যতা হিসেবে ব্যবহার করছে।

মার্কিন হামলার তীব্রতা বৃদ্ধি ইয়েমেনে মানবিক সংকটকে আরও গভীর করতে পারে। ইয়েমেন ইতোমধ্যে দীর্ঘদিনের গৃহযুদ্ধ, খাদ্য সংকট এবং অর্থনৈতিক বিপর্যয়ের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। রাস ইসা বন্দরের মতো গুরুত্বপূর্ণ অবকাঠামোতে হামলা দেশটির জ্বালানি সরবরাহ এবং মানবিক সহায়তা বিতরণে ব্যাঘাত ঘটাতে পারে।

ভবিষ্যৎ সম্ভাবনা
বিশ্লেষকদের মতে, মার্কিন হামলা হুথিদের সামরিক সক্ষমতা কিছুটা দুর্বল করতে পারে, তবে এটি তাদের লোহিত সাগরে হামলা বন্ধ করতে পুরোপুরি সফল নাও হতে পারে। হুথিদের ইরানের সমর্থন এবং তাদের গেরিলা কৌশল তাদের প্রতিরোধ ক্ষমতা বজায় রাখতে সহায়তা করছে। এই সংঘাত দীর্ঘায়িত হলে মধ্যপ্রাচ্যে বৃহত্তর অস্থিতিশীলতার আশঙ্কা রয়েছে।

যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, হুথিদের হামলা বন্ধ না হওয়া পর্যন্ত তারা সামরিক অভিযান অব্যাহত রাখবে। তবে, এই অভিযানের ফলে বেসামরিক হতাহত এবং মানবিক সংকট বৃদ্ধির সমালোচনা আন্তর্জাতিক মহলে উঠতে পারে। রাস ইসা বন্দরে হামলার পর হুথি গোষ্ঠীর পরবর্তী পদক্ষেপ এবং মার্কিন বাহিনীর কৌশল নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করা হবে।

সূত্র: রয়টার্স

মন্তব্য করুন
Spread the love

সর্বশেষ - বানিজ্য ও অর্থনীতি