যুক্তরাষ্ট্রে গাড়ি আমদানিতে ২৫ শতাংশ শুল্ক আরোপের ঘোষণা ট্রাম্পের
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ২৬ মার্চ ২০২৫, বুধবার এক ঘোষণায় জানিয়েছেন, যুক্তরাষ্ট্রে আমদানি করা সব গাড়ির ওপর ২৫ শতাংশ শুল্ক আরোপ করা হবে। এই নতুন শুল্ক নীতি আগামী ৩ এপ্রিল থেকে কার্যকর হবে বলে জানা গেছে। ট্রাম্পের এই পদক্ষেপকে আমেরিকার অটোমোবাইল শিল্পকে শক্তিশালী করার একটি উদ্যোগ হিসেবে দেখা হচ্ছে। তবে এটি বৈশ্বিক বাণিজ্যে নতুন করে উত্তেজনা সৃষ্টি করেছে। বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, এই শুল্কের ফলে গাড়ির দাম বাড়তে পারে এবং এটি বিশ্বব্যাপী বাণিজ্যযুদ্ধকে আরও তীব্র করতে পারে।
ট্রাম্পের দাবি, এই শুল্ক আমেরিকায় গাড়ি উৎপাদনকে উৎসাহিত করবে এবং দেশীয় শিল্পকে রক্ষা করবে। হোয়াইট হাউসের এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, এই পদক্ষেপের ফলে বছরে প্রায় ১০০ বিলিয়ন ডলার রাজস্ব আয় হবে। ট্রাম্প বলেন, “আমরা আমেরিকায় তৈরি পণ্যকে ফিরিয়ে আনছি। এই শুল্ক আমেরিকার উৎপাদন শিল্পকে শক্তিশালী করবে।” তিনি আরও ইঙ্গিত দিয়েছেন যে, আমেরিকায় তৈরি গাড়ি কেনার ক্ষেত্রে ঋণের সুদে কর ছাড় দেওয়ার পরিকল্পনাও রয়েছে। তবে এই ঘোষণার পরপরই ইউরোপীয় ইউনিয়ন, কানাডা ও জাপানের মতো বাণিজ্যিক অংশীদাররা তীব্র প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে।
কানাডা ও মেক্সিকোর মতো প্রতিবেশী দেশগুলোর জন্য এই শুল্ক বিশেষভাবে ক্ষতিকর হতে পারে। প্রতি বছর এই দুই দেশে প্রায় ৫৩ লাখ গাড়ি উৎপাদিত হয়, যার ৭০ শতাংশ যুক্তরাষ্ট্রে আমদানি করা হয়। কানাডা ইতিমধ্যে পাল্টা শুল্ক আরোপের হুমকি দিয়েছে। কানাডার প্রশাসন জানিয়েছে, তারা আমেরিকার পণ্যে ২০ বিলিয়ন ডলারের শুল্ক আরোপ করতে পারে। ইউরোপীয় ইউনিয়নও বলেছে, তারা ট্রাম্পের এই সিদ্ধান্তের জবাবে পাল্টা পদক্ষেপ নেবে। এই পরিস্থিতিতে বৈশ্বিক অটোমোবাইল শিল্পে অস্থিরতা দেখা দিতে পারে।
অটো শিল্প বিশেষজ্ঞদের মতে, এই শুল্কের ফলে যুক্তরাষ্ট্রে গাড়ির দাম উল্লেখযোগ্য হারে বাড়বে। যেসব কোম্পানি বিদেশে গাড়ি উৎপাদন করে আমেরিকায় বিক্রি করে, তাদের উৎপাদন খরচ বৃদ্ধি পাবে। ফলে ভোক্তাদের ওপর এই খরচের বোঝা চাপতে পারে। রয়টার্সের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, অটোমেকারদের শেয়ারের দর ইতিমধ্যে পড়তে শুরু করেছে। এদিকে, ট্রাম্পের সমর্থকরা মনে করেন, এটি আমেরিকায় নতুন কারখানা স্থাপনকে উৎসাহিত করবে এবং কর্মসংস্থান বাড়াবে।
এর আগে ২০১৮ সালে ট্রাম্প ইস্পাত ও অ্যালুমিনিয়ামে শুল্ক আরোপ করেছিলেন, যার ফলে গাড়ির দাম বেড়েছিল। এবারও অনুরূপ প্রভাব পড়তে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। অর্থনীতিবিদরা সতর্ক করে বলেছেন, এই শুল্ক বাণিজ্য ভারসাম্যহীনতা কমাতে পারলেও, এটি বৈশ্বিক সরবরাহ শৃঙ্খলাকে ব্যাহত করতে পারে এবং অর্থনৈতিক মন্দার ঝুঁকি বাড়াতে পারে।
ট্রাম্পের এই সিদ্ধান্তকে অনেকে তাঁর ‘আমেরিকা ফার্স্ট’ নীতির ধারাবাহিকতা হিসেবে দেখছেন। তবে সমালোচকরা বলছেন, এটি বিশ্ব অর্থনীতিতে নতুন সংকট তৈরি করতে পারে। আগামী দিনে এই শুল্কের প্রভাব কীভাবে প্রকাশ পায়, সেটাই এখন দেখার বিষয়।