শনিবার, ১৯শে এপ্রিল, ২০২৫| দুপুর ১:০০

বাংলাদেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভে ধীরে ধীরে উন্নতি

প্রতিবেদক
staffreporter
এপ্রিল ১৭, ২০২৫ ৮:৪১ অপরাহ্ণ
বাংলাদেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভে ধীরে ধীরে উন্নতি

বাংলাদেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভে ধীরে ধীরে উন্নতি

বাংলাদেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ধীরে ধীরে বৃদ্ধি পাচ্ছে, যা দেশের অর্থনীতির জন্য একটি ইতিবাচক সংকেত। গত মঙ্গলবার (১৫ এপ্রিল) দিন শেষে মোট রিজার্ভ দাঁড়িয়েছে ২৬.৫১ বিলিয়ন ডলার। আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) বিপিএম-৬ হিসাব পদ্ধতি অনুযায়ী গ্রস রিজার্ভ ছিল ২১.১৮ বিলিয়ন ডলার। এর আগে, গত ৯ মার্চ এশিয়ান ক্লিয়ারিং ইউনিয়নের (আকু) জানুয়ারি-ফেব্রুয়ারি মাসের দায় পরিশোধের জন্য ১.৭৫ বিলিয়ন ডলার ব্যয়ের পর রিজার্ভ নেমে গিয়েছিল ১৯.৭০ বিলিয়ন ডলারে। তবে, রেমিট্যান্সের প্রবাহ বৃদ্ধি, রপ্তানি আয়ের উচ্চ প্রবৃদ্ধি এবং অর্থ পাচার কমে যাওয়ার কারণে রিজার্ভ এখন ক্রমশ ঊর্ধ্বমুখী হচ্ছে।

রিজার্ভ বৃদ্ধির পেছনে প্রধান কারণ

বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র আরিফ হোসেন খান জানিয়েছেন, রিজার্ভ বৃদ্ধির পেছনে রপ্তানি আয়ের প্রবৃদ্ধি, রেমিট্যান্সের উল্লেখযোগ্য বৃদ্ধি এবং হুন্ডির মাধ্যমে অর্থ পাচার কমে যাওয়া গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে। তিনি বলেন, “আমদানির তুলনায় রপ্তানি উল্লেখযোগ্যভাবে বেড়েছে। ব্যাংকগুলো এখন এলসি (লেটার অব ক্রেডিট) খোলার ক্ষেত্রে কঠোর যাচাই-বাছাই করছে, যাতে ওভার ইনভয়েসিং বা আন্ডার ইনভয়েসিংয়ের মাধ্যমে অর্থ পাচার না হয়। এছাড়া, গত মার্চ মাসে রেকর্ড পরিমাণ প্রবাসী আয় এসেছে। প্রবাসীরা এখন হুন্ডির পরিবর্তে ব্যাংকিং চ্যানেলের মাধ্যমে রেমিট্যান্স পাঠাচ্ছেন।”

তিনি আরও জানান, সরকারের কঠোর নীতি এই পরিবর্তনে ভূমিকা রেখেছে। সরকার প্রবাসীদের পরিবারকে সতর্ক করেছে যে, হুন্ডির মাধ্যমে অর্থ পাঠালে জমি কেনার ক্ষেত্রে তাদের অর্থের উৎস সম্পর্কে প্রশ্ন করা হবে। এই নীতির ফলে প্রবাসীরা বৈধ চ্যানেলের মাধ্যমে অর্থ পাঠাতে উৎসাহিত হচ্ছেন।

রেমিট্যান্স ও রপ্তানির ইতিবাচক প্রভাব

গত মার্চ মাসে প্রবাসীদের পাঠানো রেমিট্যান্সের পরিমাণ ছিল ৩.২৯ বিলিয়ন ডলার, যা এক মাসের হিসাবে দেশের ইতিহাসে সর্বোচ্চ। এই উদ্বৃত্ত ডলার ব্যাংকগুলো বাংলাদেশ ব্যাংকের কাছে বিক্রি করছে, যা রিজার্ভ বৃদ্ধিতে সরাসরি ভূমিকা রাখছে। এছাড়া, জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) তথ্য অনুযায়ী, ২০২৪-২৫ অর্থবছরের মার্চ মাসে রপ্তানি আয় গত বছরের একই মাসের তুলনায় ১১.৪৪ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়ে ৪.২৫ বিলিয়ন ডলারে পৌঁছেছে।

শাহাজালাল ইসলামী ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোসলেহ উদ্দীন আহমেদ বলেন, “রপ্তানি ও রেমিট্যান্স বৃদ্ধি এবং হুন্ডির মাধ্যমে অর্থ পাচার কমে যাওয়ার কারণে রিজার্ভ বাড়ছে। তবে, বিদেশি ঋণ পরিশোধের চাপ এখনও রয়েছে। এই চাপ সত্ত্বেও রিজার্ভ কমছে না, যা একটি ইতিবাচক দিক।”

রিজার্ভের ইতিহাস ও সাম্প্রতিক পরিবর্তন

বাংলাদেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ২০২২ সালের আগস্টে সর্বোচ্চ ৪৮.০৬ বিলিয়ন ডলারে পৌঁছেছিল। তবে, তৎকালীন সরকারের আমলে হুন্ডির মাধ্যমে অর্থ পাচার এবং রিজার্ভ থেকে ডলার বিক্রির কারণে এটি ক্রমাগত কমতে থাকে। গত জুলাইয়ে সরকার পতনের আগে রিজার্ভ নেমে আসে ২০.৩৯ বিলিয়ন ডলারে। বর্তমানে বাংলাদেশ ব্যাংক রিজার্ভ থেকে ডলার বিক্রি বন্ধ করেছে এবং ব্যাংকগুলো থেকে ডলার কিনছে, যা রিজার্ভ বৃদ্ধিতে সহায়ক হচ্ছে।

এছাড়া, মেয়াদোত্তীর্ণ স্বীকৃত বিলের পরিমাণও উল্লেখযোগ্যভাবে কমেছে। গত বছরের নভেম্বরে এই বিলের পরিমাণ ছিল ৫২ কোটি ডলার (বৈদেশিক ২০ কোটি ও স্থানীয় ৩২ কোটি), যা গত জানুয়ারিতে কমে ২৪ কোটি ডলারে (বৈদেশিক ৯ কোটি ও স্থানীয় ১৫ কোটি) দাঁড়িয়েছে।

চ্যালেঞ্জ ও ভবিষ্যৎ সম্ভাবনা

মোসলেহ উদ্দীন আহমেদ জানান, আগামী মাসে আকু পেমেন্ট বাবদ প্রায় ১.৫ বিলিয়ন ডলার পরিশোধ করতে হবে, যার ফলে রিজার্ভ আবার কিছুটা কমতে পারে। তবে, তিনি আশাবাদী যে, পূর্বের মতো বড় মাত্রায় রিজার্ভ হ্রাস পাবে না। তিনি বলেন, “আগামীতে রপ্তানি আয় আরও বাড়বে। এছাড়া, কোরবানির ঈদকে কেন্দ্র করে রেমিট্যান্সের প্রবাহও বৃদ্ধি পাবে। ডলারের রেটও এখন স্থিতিশীল রয়েছে, যা অর্থনীতির জন্য একটি ভালো দিক।”

বাংলাদেশ ব্যাংকের কর্মকর্তারা মনে করছেন, বৈধ চ্যানেলে রেমিট্যান্স বৃদ্ধি, রপ্তানি আয়ের প্রবৃদ্ধি এবং অর্থ পাচার রোধে সরকারের কঠোর নীতির ফলে রিজার্ভে এই ইতিবাচক ধারা অব্যাহত থাকবে। তবে, বিদেশি ঋণ পরিশোধের চাপ এবং বৈশ্বিক অর্থনৈতিক অনিশ্চয়তা এখনও উল্লেখযোগ্য চ্যালেঞ্জ হিসেবে রয়ে গেছে।

মন্তব্য করুন
Spread the love

সর্বশেষ - বানিজ্য ও অর্থনীতি

আপনার জন্য নির্বাচিত