গাজায় গমের একটা দানাও ঢুকবে না: ইসরায়েল
ফিলিস্তিনের গাজা উপত্যকায় ইসরায়েলের নির্মম হামলা থামছেই না। গত ১৮ মাস ধরে চলা এই আগ্রাসনে এখন পর্যন্ত ৫০ হাজারের বেশি ফিলিস্তিনি প্রাণ হারিয়েছেন। শুধু হামলাই নয়, গাজার ওপর সর্বাত্মক অবরোধ জারি রেখেছে ইসরায়েল। এতে সেখানে খাদ্য সংকট ভয়াবহ আকার নিয়েছে। বিশ্বজুড়ে এ নিয়ে ক্ষোভ ছড়ালেও ইসরায়েলের অবস্থান কঠোর। তারা বলছে, “গাজায় গমের একটা দানাও ঢুকতে দেওয়া হবে না।” সোমবার (৭ এপ্রিল) বার্তা সংস্থা আনাদোলু এই খবর প্রকাশ করেছে।
আনাদোলু জানায়, ইসরায়েলি অর্থমন্ত্রী বেজালেল স্মোট্রিচ সোমবার এক বিবৃতিতে এই প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। ইসরায়েলি দৈনিক ইয়েদিওথ আহরোনোথ-এর প্রতিবেদনে তিনি বলেন, “আমি নিশ্চিত করব, গমের একটি দানাও গাজায় প্রবেশ করবে না।” এই ঘোষণা গাজার মানুষের জন্য আরও দুর্দশার আভাস দিচ্ছে। স্থানীয়রা বলছেন, “আমাদের খাবার নেই, ওষুধ নেই। আমরা কতদিন বাঁচব?”
ইসরায়েল গত ২ মার্চ থেকে গাজার সীমান্ত ক্রসিং বন্ধ করে দিয়েছে। এর ফলে ত্রাণ, চিকিৎসা সরঞ্জাম, খাদ্য—কিছুই গাজায় পৌঁছাচ্ছে না। ফিলিস্তিনি সরকার ও মানবাধিকার সংগঠনগুলো জানাচ্ছে, এই অবরোধে গাজায় মানবিক সংকট অভূতপূর্ব রূপ নিয়েছে। একজন মা বলেন, “আমার সন্তানের জন্য এক মুঠো খাবার নেই। আমরা কি এভাবেই মরব?”
এই অবরোধ গত ১৮ মার্চ থেকে শুরু হওয়া নতুন হামলার অংশ। এই দফায় ইসরায়েলি বিমান হামলায় ১,৪০০ ফিলিস্তিনি নিহত এবং ৩,৪০০-এর বেশি মানুষ আহত হয়েছেন। এই আক্রমণ চলতি বছরের জানুয়ারিতে কার্যকর হওয়া যুদ্ধবিরতি চুক্তিকেও ভেঙে দিয়েছে। স্মোট্রিচ বলেছেন, “আমার লক্ষ্য হামাসকে ধ্বংস করা। বন্দিদের ফিরিয়ে আনার চেয়ে এটাই বেশি গুরুত্বপূর্ণ।”
ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু গত সপ্তাহে গাজায় হামলা আরও বাড়ানোর ঘোষণা দিয়েছেন। এছাড়া গাজা থেকে ফিলিস্তিনিদের উচ্ছেদে ট্রাম্পের পরিকল্পনা বাস্তবায়নের চেষ্টাও চলছে। ২০২৩ সালের অক্টোবর থেকে শুরু হওয়া এই হামলায় এখন পর্যন্ত ৫০,৭০০-এর বেশি ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। নিহতদের বেশিরভাগই নারী ও শিশু। একজন বাসিন্দা বলেন, “আমাদের বাড়ি ধ্বংস, জীবন শেষ। এটা কি জীবন?”
গাজার এই পরিস্থিতি আন্তর্জাতিক মহলে তীব্র সমালোচনার জন্ম দিয়েছে। গত বছর নভেম্বরে আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালত (আইসিসি) নেতানিয়াহু ও তার সাবেক প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইয়োভ গ্যালান্টের বিরুদ্ধে যুদ্ধাপরাধ ও মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করে। এছাড়া আন্তর্জাতিক বিচার আদালতে ইসরায়েলের বিরুদ্ধে গণহত্যার মামলা চলছে।
তবে এসবের মধ্যেও ইসরায়েলের অবস্থান অটল। স্মোট্রিচের এই মন্তব্য গাজার মানুষের জন্য আরও কঠিন দিনের ইঙ্গিত দিচ্ছে। স্থানীয় একজন বলেন, “আমরা অনাহারে মরছি। বিশ্ব কি আমাদের ভুলে গেছে?” গাজার হাসপাতালগুলো ধ্বংস হয়ে গেছে, আহতদের চিকিৎসা দেওয়ার উপায় নেই।
নেতানিয়াহু বলেছেন, “আমরা হামাসকে শেষ না করা পর্যন্ত থামব না।” কিন্তু এই নীতিতে সাধারণ ফিলিস্তিনিরা প্রাণ দিচ্ছেন। বিশ্ব নেতারা এই অবরোধ ও হামলার নিন্দা জানালেও ইসরায়েল পিছু হটছে না।