সারাদেশে প্রায় ৮০০ আয়নাঘর আছে: প্রধান উপদেষ্টা
অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস জানিয়েছেন, সারাদেশে প্রায় ৮০০ ‘আয়নাঘর’ রয়েছে, যেগুলো গুম ও নির্যাতনের কেন্দ্র হিসেবে ব্যবহৃত হতো। বুধবার (১২ ফেব্রুয়ারি) দেশি-বিদেশি গণমাধ্যমকর্মী ও ভুক্তভোগীদের সঙ্গে আয়নাঘর পরিদর্শন শেষে তিনি এ তথ্য জানান।
তিনি বলেন, ‘আমার ধারণা ছিল, কয়েকটি নির্দিষ্ট স্থানে আয়নাঘর রয়েছে। কিন্তু এখন জানতে পারলাম, সারা দেশে এমন অসংখ্য টর্চার সেল রয়েছে। কেউ বলছে ৭০০, কেউ বলছে ৮০০—তবে সঠিক সংখ্যা এখনও নির্ধারণ করা যায়নি।’
প্রধান উপদেষ্টা আরও বলেন, ‘এইসব সেলে যা ঘটেছে, তা অবিশ্বাস্য! আমরা কি সত্যিই এমন একটি সমাজ তৈরি করেছি? যেখানে মানুষকে এভাবে নিগৃহীত হতে হয়েছে?’ তিনি আরও জানান, গুমের শিকার হওয়া ব্যক্তিরা ফিরে এসে আয়নাঘরের ভয়াবহ অভিজ্ঞতার কথা বলেছেন।
জানা গেছে, ইতোমধ্যে প্রতিরক্ষা গোয়েন্দা মহাপরিদপ্তরের (ডিজিএফআই) যৌথ জিজ্ঞাসাবাদ সেল, র্যাব-২-এর সিপিসি-৩ এবং র্যাব সদর দপ্তরের টাস্কফোর্স ইন্টেলিজেন্স সেন্টার পরিদর্শন করেছেন তিনি।
গুমের কালো অধ্যায়
সুইডেনভিত্তিক সংবাদমাধ্যম নেত্র নিউজের এক প্রতিবেদনের মাধ্যমে আয়নাঘরের বিষয়টি সামনে আসে। অভিযোগ রয়েছে, সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার শাসনামলে ২০০৯ থেকে ২০২১ সালের মধ্যে ৬০৫ জনকে গোপনে বন্দি করা হয়েছিল। ২০১৪ থেকে ২০১৯ সালের মধ্যে গুম হন ৩৪৪ জন, যাদের মধ্যে ৪০ জনের মরদেহ উদ্ধার হয় এবং ৬৬ জনকে সরকারি হেফাজতে পাওয়া যায়।
গুম থেকে ফিরে আসা অনেকেই ভয় ও হুমকির মুখে মুখ খোলেননি। তবে কয়েকজন জানিয়েছেন, গোপন স্থানে রেখে তাদের ওপর ভয়াবহ নির্যাতন চালানো হতো। আয়নাঘর নামে পরিচিত এসব জায়গায় দেশবরেণ্য ব্যক্তি, রাজনৈতিক কর্মী ও সাধারণ মানুষকে বন্দি রাখা হতো। অধ্যাপক মোবাশার হাসান, সাবেক রাষ্ট্রদূত মারুফ জামান, ব্যবসায়ী অনিরুদ্ধ কুমার রায়, মাইকেল চাকমা ও মীর আহমদ বিন কাসেমসহ অনেকে এইসব গোপন সেলে বন্দি ছিলেন বলে অভিযোগ রয়েছে।
১৯ জানুয়ারি গঠিত গুম তদন্ত কমিশন প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে বৈঠক করে। কমিশনের সদস্যরা তাকে আয়নাঘর পরিদর্শনের আহ্বান জানান। এর পরিপ্রেক্ষিতে তিনি বিভিন্ন স্থাপনা ঘুরে দেখেন।
প্রধান উপদেষ্টা বলেন, ‘এটি শুধু একটি নির্যাতন কেন্দ্র নয়, বরং এটি আমাদের সামগ্রিক মানবাধিকার লঙ্ঘনের প্রতিচ্ছবি। আইনগত ব্যবস্থা নেওয়ার পাশাপাশি ভবিষ্যতে যেন এমন ঘটনা আর না ঘটে, তা নিশ্চিত করতে হবে।’
গুম হওয়া ব্যক্তিদের পরিবারের দীর্ঘদিনের দাবি, এ ঘটনার সঠিক তদন্ত করে দায়ীদের বিচার করা হোক। অন্তর্বর্তীকালীন সরকার এ বিষয়ে কী পদক্ষেপ নেবে, তা এখন সময়ই বলে দেবে।