শুল্ক নিয়ে অনুরোধ জানানো দেশগুলোর সঙ্গে আলোচনার ঘোষণা ট্রাম্পের
যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প শুল্ক কমানো, ছাড় বা সময় চেয়ে বৈঠকের অনুরোধ জানানো দেশগুলোর সঙ্গে আলোচনায় বসার ঘোষণা দিয়েছেন। সোমবার (৭ এপ্রিল) স্থানীয় সময় তিনি নিজের সামাজিক মাধ্যম ট্রুথ-এ একটি পোস্টে এই কথা জানান। এই পোস্টে তিনি চীনের বিরুদ্ধে কঠোর হুঁশিয়ারি দিয়েছেন, আবার অন্য দেশগুলোর সঙ্গে আলোচনার দরজাও খুলে রেখেছেন।
ট্রাম্পের এই পোস্টের মূল ফোকাস ছিল চীন। তিনি বলেন, চীন যদি যুক্তরাষ্ট্রের ওপর পাল্টা শুল্ক তুলে না নেয়, তাহলে চীনা পণ্যের ওপর আরও ৫০ শতাংশ শুল্ক বসানো হবে। এতে চীনা পণ্যের শুল্ক হার ১০৪ শতাংশে পৌঁছে যাবে। তিনি লিখেছেন, “গতকাল চীন আমাদের ওপর ৩৪ শতাংশ পাল্টা শুল্ক আরোপ করেছে। এটা রেকর্ড পরিমাণ শুল্ক, অবৈধ ভর্তুকি আর মুদ্রা কারসাজির পরও করা হয়েছে। আমি আগেই সতর্ক করেছিলাম, কেউ পাল্টা শুল্ক দিলে তাদের ওপর আরও শুল্ক আসবে। তারপরও চীন এটা করল।”
ট্রাম্প চীনকে কঠোর হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেন, “যদি ৮ এপ্রিলের মধ্যে চীন এই ৩৪ শতাংশ শুল্ক না সরায়, তাহলে ৯ এপ্রিল থেকে আমরা ৫০ শতাংশ বাড়তি শুল্ক আরোপ করব। চীন যে বৈঠকের আহ্বান করেছে, সেগুলোও বাতিল করা হবে।” এই বক্তব্যে তিনি চীনের প্রতি তার কঠিন অবস্থান স্পষ্ট করেছেন। একজন ব্যবসায়ী বলেন, “ট্রাম্প চীনকে বোঝাতে চান, তিনি পিছপা হবেন না। এটা বাণিজ্য যুদ্ধের নতুন ধাপ।”
কিন্তু চীনের পাশাপাশি অন্য দেশগুলোর জন্য ট্রাম্প একটি আশার বার্তাও দিয়েছেন। তিনি লিখেছেন, “যেসব দেশ শুল্ক নিয়ে বৈঠকের অনুরোধ করেছে, তাদের সঙ্গে খুব দ্রুত আলোচনা শুরু হবে। আপনাদের মনোযোগের জন্য ধন্যবাদ!” এর মাধ্যমে তিনি ইঙ্গিত দিয়েছেন, যেসব দেশ শুল্ক কমানো বা সময় চেয়েছে, তাদের সঙ্গে আলোচনার দরজা খোলা রয়েছে।
ট্রাম্পের এই ঘোষণা এমন সময়ে এলো, যখন তার নতুন শুল্ক নীতি বিশ্ববাজারে ঝড় তুলেছে। গত ২ এপ্রিল তিনি বিভিন্ন দেশের পণ্যের ওপর শুল্ক বাড়ানোর ঘোষণা দেন। এতে অনেক দেশ, যেমন বাংলাদেশ, ৩৭ শতাংশ শুল্কের মুখে পড়েছে। এই পরিস্থিতিতে বাংলাদেশের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস ট্রাম্পকে চিঠি দিয়ে তিন মাস শুল্ক স্থগিত করার অনুরোধ জানিয়েছেন। ট্রাম্পের এই নতুন পোস্টে সেই অনুরোধের জবাবে আলোচনার সম্ভাবনা দেখা যাচ্ছে।
বিশ্লেষকরা বলছেন, “ট্রাম্প একদিকে চীনের ওপর চাপ বাড়াচ্ছেন, অন্যদিকে অন্য দেশগুলোর সঙ্গে সমঝোতার পথ খুঁজছেন।” একজন অর্থনীতিবিদ বলেন, “চীনের সঙ্গে তার শুল্ক যুদ্ধ চলবে। কিন্তু বাকি দেশগুলোর জন্য এটা একটা সুযোগ।” বাংলাদেশের একজন ব্যবসায়ী বলেন, “আমরা আশা করছি, আলোচনায় আমাদের রপ্তানি খাতের ক্ষতি কমবে।”
ট্রাম্পের এই পদক্ষেপ বিশ্ববাণিজ্যে নতুন মোড় আনতে পারে। চীনের জন্য তার হুঁশিয়ারি কঠোর হলেও, অন্য দেশগুলোর প্রতি তার সুর নরম। তিনি পোস্টে বলেন, “আমরা শুল্ক দিয়ে আমেরিকার স্বার্থ রক্ষা করছি। কিন্তু যারা কথা বলতে চায়, তাদের সঙ্গে আমরা বসব।”