শনিবার, ১৯শে এপ্রিল, ২০২৫| সকাল ৬:১৮

পৃথিবীর বর্তমান অর্থনীতির চিত্র: ২০২৫ সালে বৈশ্বিক বাজারের অবস্থা ও ভবিষ্যৎ চ্যালেঞ্জ

প্রতিবেদক
staffreporter
এপ্রিল ৮, ২০২৫ ২:৪৭ অপরাহ্ণ
পৃথিবীর বর্তমান অর্থনীতির চিত্র: ২০২৫ সালে বৈশ্বিক বাজারের অবস্থা ও ভবিষ্যৎ চ্যালেঞ্জ

পৃথিবীর বর্তমান অর্থনীতির চিত্র: ২০২৫ সালে বৈশ্বিক বাজারের অবস্থা ও ভবিষ্যৎ চ্যালেঞ্জ

২০২৫ সালের এপ্রিল মাসে দাঁড়িয়ে পৃথিবীর অর্থনীতি এক জটিল ও রূপান্তরশীল সময় অতিক্রম করছে। মহামারি-পরবর্তী পুনরুদ্ধারের ধাক্কা সামাল দেওয়ার পরে শুরু হওয়া ইউক্রেন যুদ্ধ, গাজা ও মধ্যপ্রাচ্যের উত্তেজনা, জলবায়ু পরিবর্তনের ধাক্কা এবং ক্রমবর্ধমান প্রযুক্তির অগ্রযাত্রা—এই সব কিছু মিলে বর্তমান বিশ্ব অর্থনীতিকে নানা চ্যালেঞ্জের মুখে ফেলেছে।

বিশ্ব অর্থনীতির অন্যতম প্রধান চালিকা শক্তি যুক্তরাষ্ট্র কিছুটা স্থিতিশীল হলেও, মুদ্রাস্ফীতি এবং উচ্চ সুদের হার এখনো তাদের বাজারে প্রভাব ফেলছে। যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল রিজার্ভ সুদের হার কিছুটা হ্রাস করার চিন্তা করছে, তবে এখনো তা অনেক বেশি, ফলে ব্যবসা ও বিনিয়োগের গতি তুলনামূলকভাবে কম। একই সঙ্গে চীনের অর্থনীতিও শ্লথ হয়ে পড়েছে, বিশেষত তাদের রিয়েল এস্টেট খাতের সংকট এবং রপ্তানি কমে যাওয়ায় প্রবৃদ্ধির গতি প্রত্যাশার চেয়ে কম।

ইউরোপীয় ইউনিয়নের দেশগুলো জ্বালানি সংকট এবং রাজনৈতিক অনিশ্চয়তার মাঝে অর্থনৈতিক ভারসাম্য রক্ষার চেষ্টায় রয়েছে। রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে ইউরোপের অনেক দেশকে বিকল্প জ্বালানি উৎসের ওপর নির্ভর করতে হচ্ছে, যার ফলে উৎপাদন ব্যয় বেড়েছে এবং সরবরাহ চেইন বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। বিশেষত, জার্মানি ও ফ্রান্সের মতো দেশগুলোতে শিল্পখাতের প্রবৃদ্ধি থমকে গেছে।

ভারতের মতো উদীয়মান অর্থনীতিগুলো তুলনামূলকভাবে ভালো করছে। ভারত বর্তমানে বিশ্বের পঞ্চম বৃহত্তম অর্থনীতির স্থানে উন্নীত হয়েছে এবং প্রযুক্তি, পরিকাঠামো ও ডিজিটাল খাতের ব্যাপক অগ্রগতি দেশটিকে আরও সম্ভাবনাময় করে তুলেছে। বাংলাদেশ, ভিয়েতনাম, ফিলিপাইনের মতো দেশগুলোও গার্মেন্টস, আইটি ও রেমিট্যান্স খাতে উন্নয়ন ধরে রেখেছে, যদিও মুদ্রাস্ফীতি এবং বৈশ্বিক চাহিদার ওঠানামা এই দেশগুলোকে চাপে ফেলছে।

তেলের বাজারেও অস্থিরতা দেখা যাচ্ছে। ওপেক দেশগুলোর উৎপাদন হ্রাস এবং ভূরাজনৈতিক উত্তেজনার কারণে তেলের দাম প্রায়শই বাড়ছে, যার সরাসরি প্রভাব পড়ছে পরিবহন, খাদ্য ও শিল্প খাতে। পাশাপাশি, জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে কৃষি উৎপাদন কমে যাওয়া ও প্রাকৃতিক দুর্যোগ অর্থনীতির উপর বাড়তি চাপ সৃষ্টি করছে।

বিশ্বব্যাপী এখন প্রযুক্তির আধিপত্য স্পষ্ট। কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা, অটোমেশন ও ব্লকচেইন প্রযুক্তি যেমন চাকরির বাজারে রূপান্তর আনছে, তেমনি অনেক খাতকে আরও উৎপাদনশীল করে তুলছে। তবে এই প্রযুক্তিগত অগ্রগতি অনেক দেশে কর্মসংস্থানের সংকটও তৈরি করছে, বিশেষ করে যেখানে দক্ষ শ্রমিকের ঘাটতি রয়েছে।

২০২৫ সালে পৃথিবীর অর্থনীতি বহুমাত্রিক চ্যালেঞ্জের মধ্য দিয়ে এগোচ্ছে। বৈশ্বিক অর্থনীতি এখন এমন এক সন্ধিক্ষণে রয়েছে, যেখানে কৌশলগত সিদ্ধান্ত, আন্তর্জাতিক সহযোগিতা ও পরিবেশবান্ধব উন্নয়ন কৌশল ছাড়া টিকে থাকা কঠিন হয়ে পড়বে। আগামী দিনগুলোতে অর্থনীতির ভবিষ্যৎ নির্ধারিত হবে এই চ্যালেঞ্জগুলো কীভাবে মোকাবিলা করা যায়, তার ওপর।

মন্তব্য করুন
Spread the love

সর্বশেষ - বানিজ্য ও অর্থনীতি