শনিবার, ১৯শে এপ্রিল, ২০২৫| সকাল ৬:০১

দক্ষিণ সুদানের সব অভিবাসীর ভিসা বাতিলের ঘোষণা যুক্তরাষ্ট্রের

প্রতিবেদক
staffreporter
এপ্রিল ৬, ২০২৫ ৪:৩০ অপরাহ্ণ
দক্ষিণ সুদানের সব অভিবাসীর ভিসা বাতিলের ঘোষণা যুক্তরাষ্ট্রের

দক্ষিণ সুদানের সব অভিবাসীর ভিসা বাতিলের ঘোষণা যুক্তরাষ্ট্রের

যুক্তরাষ্ট্রে বসবাসরত দক্ষিণ সুদানের সব অভিবাসীর জন্য বড় ধরনের একটি ঘোষণা এসেছে। মার্কিন সরকার দেশটির সব নাগরিকের ভিসা বাতিলের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। শুধু তাই নয়, দক্ষিণ সুদানের পাসপোর্টধারীদের যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশের ওপরও নিষেধাজ্ঞা জারি করা হচ্ছে। মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও এই সিদ্ধান্তের পেছনে কারণ হিসেবে জানিয়েছেন, দক্ষিণ সুদান তাদের যেসব নাগরিককে যুক্তরাষ্ট্র থেকে ফেরত পাঠানো হয়েছে, তাদের গ্রহণ করতে অস্বীকৃতি জানিয়েছে। ফলে এই কঠোর পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে।

রোববার (৬ এপ্রিল) এক বিবৃতিতে রুবিও বলেন, “আমরা দক্ষিণ সুদানের সব পাসপোর্টধারীর মার্কিন ভিসা বাতিল করতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিচ্ছি। একই সঙ্গে, এই দেশের নাগরিকরা যাতে যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশ করতে না পারে, সেজন্যও ব্যবস্থা করা হচ্ছে। এই নিষেধাজ্ঞা এখনই কার্যকর হচ্ছে।” তিনি আরও বলেন, “যুক্তরাষ্ট্র থেকে ফেরত পাঠানো নাগরিকদের সময়মতো গ্রহণ করা প্রতিটি দেশের দায়িত্ব। দক্ষিণ সুদানের তত্ত্বাবধায়ক সরকার এই দায়িত্ব পালনে ব্যর্থ হয়েছে। তারা আমাদের সুযোগ-সুবিধার অপব্যবহার করছে।” তবে তিনি আশ্বাস দিয়েছেন, দক্ষিণ সুদান যদি তাদের অবস্থান বদলায় এবং সহযোগিতা করে, তাহলে এই সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনার সুযোগ রয়েছে।

এই সিদ্ধান্ত এসেছে প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের দ্বিতীয় মেয়াদে। গত ২০ জানুয়ারি তিনি দ্বিতীয়বারের মতো ক্ষমতায় ফিরেছেন। তার প্রথম মেয়াদে তিনি বেশ কয়েকটি মুসলিম প্রধান দেশের নাগরিকদের ওপর ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছিলেন। এবার দক্ষিণ সুদান প্রথম দেশ হিসেবে এমন নিষেধাজ্ঞার মুখে পড়ল, যেখানে সব পাসপোর্টধারীর ওপরই এই বিধিনিষেধ কার্যকর হচ্ছে। নির্বাচনী প্রচারণায় ট্রাম্প অভিবাসনবিরোধী কঠোর অবস্থানের কথা বারবার বলেছিলেন। দক্ষিণ সুদানের ওপর এই পদক্ষেপকে তার সেই প্রতিশ্রুতিরই প্রতিফলন বলে মনে করা হচ্ছে।

দক্ষিণ সুদান বিশ্বের সবচেয়ে নতুন দেশ। ২০১১ সালে সুদান থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে এটি স্বাধীনতা লাভ করে। কিন্তু এটি একই সঙ্গে বিশ্বের দরিদ্রতম দেশগুলোর একটি। এখানকার বেশিরভাগ মানুষ খ্রিষ্টান ধর্মাবলম্বী। বর্তমানে দেশটি রাজনৈতিক অস্থিরতার মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। অনেকে আশঙ্কা করছেন, ২০১৩ থেকে ২০১৮ সাল পর্যন্ত চলা ভয়াবহ গৃহযুদ্ধ আবার ফিরে আসতে পারে। সেই যুদ্ধে প্রায় ৪ লাখ মানুষ প্রাণ হারিয়েছিল। এই অস্থিরতার মধ্যেই যুক্তরাষ্ট্রের এই সিদ্ধান্ত দেশটির জনগণের জন্য নতুন চ্যালেঞ্জ তৈরি করেছে।

সাবেক প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের প্রশাসন দক্ষিণ সুদানের নাগরিকদের জন্য ‘অস্থায়ী সুরক্ষা স্ট্যাটাস’ বা টিপিএস দিয়েছিল। এর ফলে তাদের নিজ দেশে ফেরত পাঠানো যাচ্ছিল না। কিন্তু এই সুবিধার মেয়াদ ২০২৫ সালের ৩ মে শেষ হওয়ার কথা। ট্রাম্প প্রশাসন এখন সেই সুবিধা বাতিল করে কঠোর পদক্ষেপে গেছে।

রুবিও তার বিবৃতিতে বলেন, “আমাদের জাতীয় নিরাপত্তা ও জনগণের সুরক্ষার জন্য অভিবাসন আইন কঠোরভাবে প্রয়োগ করা জরুরি। দক্ষিণ সুদানের এই আচরণ আমরা মেনে নেব না।” এই ঘোষণার পর দক্ষিণ সুদানে বসবাসরত অনেক অভিবাসী উদ্বেগে পড়েছেন। যুক্তরাষ্ট্রে থাকা তাদের পরিবারের সদস্যরা এখন অনিশ্চয়তার মুখে।

দক্ষিণ সুদানের রাজধানী জুবা থেকে এখনো কোনো আনুষ্ঠানিক প্রতিক্রিয়া পাওয়া যায়নি। তবে বিশ্লেষকরা বলছেন, এই সিদ্ধান্ত দুই দেশের সম্পর্কে নতুন উত্তেজনা তৈরি করতে পারে। অনেকে মনে করেন, ট্রাম্পের এই পদক্ষেপ অন্য দেশগুলোর জন্যও একটি সতর্কবার্তা। যেসব দেশ তাদের নাগরিকদের ফেরত নিতে অস্বীকৃতি জানাবে, তাদেরও একই পরিণতি হতে পারে।

এদিকে, দক্ষিণ সুদানের চলমান রাজনৈতিক সংকট আরও জটিল হয়ে উঠছে। দেশটির প্রেসিডেন্ট সালভা কির ও সাবেক ভাইস প্রেসিডেন্ট রিক মাচারের মধ্যে দ্বন্দ্ব আবারও তীব্র হয়েছে। এই পরিস্থিতিতে যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞা দেশটির জনগণের দুর্ভোগ আরও বাড়িয়ে দিতে পারে।

এএফপি সূত্রে জানা গেছে, এই সিদ্ধান্তের ফলে যুক্তরাষ্ট্রে বসবাসরত দক্ষিণ সুদানের অভিবাসীদের ভবিষ্যৎ এখন অনিশ্চিত।

মন্তব্য করুন
Spread the love

সর্বশেষ - বানিজ্য ও অর্থনীতি