বাংলাদেশি পণ্যে ৩৭% শুল্ক আরোপ যুক্তরাষ্ট্রের
যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বৈশ্বিক বাণিজ্যে বড় ধরনের পরিবর্তন এনেছেন। তিনি দেশটিতে আমদানি হওয়া সব পণ্যের ওপর ১০ শতাংশ শুল্ক আরোপের ঘোষণা দিয়েছেন। এর পাশাপাশি, বাংলাদেশসহ বেশ কয়েকটি দেশের পণ্যের ওপর উচ্চ হারে শুল্ক নির্ধারণ করেছেন। এই ঘোষণা এসেছে বুধবার, ২ এপ্রিল, ওয়াশিংটনের স্থানীয় সময় বিকেল ৪টায়। বাংলাদেশ সময়ে যা ছিল দিবাগত রাত ২টা। হোয়াইট হাউসে এক সংবাদ সম্মেলনে ট্রাম্প এই নতুন শুল্ক নীতি প্রকাশ করেন।
ট্রাম্পের ঘোষণা অনুযায়ী, বাংলাদেশি পণ্যের ওপর শুল্ক বাড়িয়ে ৩৭ শতাংশ করা হয়েছে। এতদিন এই পণ্যে গড়ে ১৫ শতাংশ শুল্ক ছিল। এই হঠাৎ বৃদ্ধি বাংলাদেশের রপ্তানি খাতে বড় ধরনের ধাক্কা হিসেবে দেখা দিতে পারে। যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশ বছরে প্রায় ৮৪০ কোটি ডলারের পণ্য রপ্তানি করে, যার বেশিরভাগই তৈরি পোশাক। গত বছর শুধু তৈরি পোশাক রপ্তানি হয়েছিল ৭৩৪ কোটি ডলারের। এই নতুন শুল্কের ফলে পোশাক খাতে নেতিবাচক প্রভাব পড়ার আশঙ্কা করছেন ব্যবসায়ীরা।
সংবাদ সম্মেলনে ট্রাম্প এই দিনটিকে ‘অর্থনৈতিক স্বাধীনতা দিবস’ হিসেবে অভিহিত করেন। তিনি বলেন, “কয়েক দশক ধরে আমাদের দেশকে বিভিন্ন দেশ লুটপাট করেছে। বন্ধু হোক বা শত্রু, তারা আমাদের অর্থনীতিকে ধ্বংস করেছে। বিদেশি শক্তিগুলো আমাদের আমেরিকান স্বপ্নকে ছিন্নভিন্ন করে দিয়েছে। এখন সময় এসেছে আমাদের অর্থনীতিকে রক্ষা করার।” তার এই বক্তব্যে আমেরিকান শিল্প ও কর্মসংস্থানকে প্রাধান্য দেওয়ার প্রতিশ্রুতি ফুটে উঠেছে।
বাংলাদেশ ছাড়াও অন্যান্য দেশের জন্যও শুল্ক বাড়ানো হয়েছে। ভারতের পণ্যে ২৬ শতাংশ, পাকিস্তানে ২৯ শতাংশ, আর চীনের পণ্যে ৩৪ শতাংশ শুল্ক আরোপ করা হয়েছে। এছাড়া ইউরোপীয় ইউনিয়নের পণ্যে ২০ শতাংশ, ভিয়েতনামে ৪৬ শতাংশ, শ্রীলঙ্কায় ৪৪ শতাংশ, তাইওয়ানে ৩২ শতাংশ, জাপানে ২৪ শতাংশ, দক্ষিণ কোরিয়ায় ২৫ শতাংশ, থাইল্যান্ডে ৩৬ শতাংশ, সুইজারল্যান্ডে ৩১ শতাংশ, ইন্দোনেশিয়ায় ৩২ শতাংশ, মালয়েশিয়ায় ২৪ শতাংশ, এবং কম্বোডিয়ায় সর্বোচ্চ ৪৯ শতাংশ শুল্ক ধরা হয়েছে। যুক্তরাজ্য, ব্রাজিল, সিঙ্গাপুর, অস্ট্রেলিয়ার মতো দেশগুলোতে ১০ শতাংশ শুল্ক রাখা হয়েছে। এছাড়া মিয়ানমারে ৪৪ শতাংশ, লাওসে ৪৮ শতাংশ, এবং মাদাগাস্কারে ৪৭ শতাংশ শুল্ক আরোপের ঘোষণা এসেছে।
এই সিদ্ধান্ত বাংলাদেশের অর্থনীতির জন্য বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়াতে পারে। তৈরি পোশাক আমাদের রপ্তানি আয়ের প্রধান উৎস। শুল্ক বৃদ্ধির ফলে পণ্যের দাম বেড়ে গেলে আমাদের বাজারে প্রতিযোগিতার সক্ষমতা কমে যেতে পারে। ব্যবসায়ীরা বলছেন, “এটি আমাদের জন্য একটি কঠিন সময়। আমাদের এখন বিকল্প বাজার খুঁজতে হবে।” সরকারও এই পরিস্থিতি মোকাবিলায় দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়ার কথা ভাবছে।
ট্রাম্পের এই পদক্ষেপ বিশ্ব বাণিজ্যে নতুন উত্তেজনা সৃষ্টি করেছে। বাংলাদেশের জন্য এখন প্রধান লক্ষ্য হবে এই ধাক্কা সামলে নতুন কৌশল নিয়ে এগিয়ে যাওয়া।