শনিবার, ১৯শে এপ্রিল, ২০২৫| সন্ধ্যা ৭:০৯

ফ্রান্স বলেছে, ইরানের পরমাণু আলোচনা ব্যর্থ হলে সামরিক সংঘর্ষ ‘প্রায় অনিবার্য’

প্রতিবেদক
staffreporter
এপ্রিল ৩, ২০২৫ ৫:৫৫ অপরাহ্ণ
ফ্রান্স বলেছে, ইরানের পরমাণু আলোচনা ব্যর্থ হলে সামরিক সংঘর্ষ ‘প্রায় অনিবার্য’

ফ্রান্স বলেছে, ইরানের পরমাণু আলোচনা ব্যর্থ হলে সামরিক সংঘর্ষ ‘প্রায় অনিবার্য’

ইরানের পরমাণু কর্মসূচি নিয়ে উত্তেজনা ক্রমশ বাড়ছে। যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ইরানের সঙ্গে পরমাণু চুক্তি না হলে সামরিক হামলার হুমকি দিয়েছেন। অন্যদিকে, তেহরান সব চাপ উপেক্ষা করে আলোচনায় বসতে অস্বীকার করছে। এই পরিস্থিতিতে ফ্রান্স একটি কঠোর সতর্কবার্তা দিয়েছে। তারা বলছে, ইরানের সঙ্গে পরমাণু আলোচনা ব্যর্থ হলে সামরিক সংঘর্ষ “প্রায় অনিবার্য” হয়ে উঠবে। আজ বৃহস্পতিবার, ৩ এপ্রিল, সংবাদমাধ্যম আল জাজিরা এই খবর প্রকাশ করেছে।

ফ্রান্সের পররাষ্ট্রমন্ত্রী জ্যঁ-নোয়েল ব্যারোট এই সতর্কবার্তা দিয়েছেন। বুধবার ফরাসি প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রোঁর সভাপতিত্বে ইরান নিয়ে একটি উচ্চ পর্যায়ের বৈঠকের পর তিনি বলেন, “তেহরানের সঙ্গে কূটনৈতিক সমাধানের সুযোগ এখন খুবই সংকীর্ণ।” তিনি ফ্রান্সের পার্লামেন্টে বলেন, “আমাদের হাতে সময় খুব কম। ২০১৫ সালের পরমাণু চুক্তির মেয়াদ শেষ হতে আর মাত্র কয়েক মাস বাকি। যদি আমরা এই সময়ের মধ্যে কোনো চুক্তিতে না পৌঁছাতে পারি, তাহলে সামরিক সংঘাত প্রায় অনিবার্য মনে হচ্ছে।” তার এই বক্তব্যে পরিস্থিতির গুরুত্ব ফুটে উঠেছে।

ইউরোপীয় দেশগুলো ইরানের ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণ বন্ধে একটি নতুন চুক্তির জন্য চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। তাদের লক্ষ্য, এই বছরের মাঝামাঝি থেকে ২০২৫ সালের অক্টোবরের মধ্যে একটি সমাধানে পৌঁছানো। এই সময়সীমা গুরুত্বপূর্ণ, কারণ ২০১৫ সালের চুক্তির আওতায় জাতিসংঘের নিষেধাজ্ঞার মেয়াদ তখন শেষ হবে। কিন্তু ইরান বারবার বলছে, তাদের পরমাণু কর্মসূচি শান্তিপূর্ণ। তারা পারমাণবিক অস্ত্র তৈরি করছে না বলে দাবি করে আসছে।

ব্যারোট বলেন, “আমরা দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি, ইরানকে কখনোই পারমাণবিক অস্ত্র হাতে পেতে দেওয়া যাবে না। আমাদের প্রধান লক্ষ্য হলো একটি যাচাইযোগ্য এবং টেকসই চুক্তি নিশ্চিত করা, যাতে ইরানের পরমাণু কার্যক্রম সীমিত থাকে।” তিনি জোর দিয়ে বলেন, ফ্রান্স এই বিষয়ে আপসহীন।

২০১৫ সালে যুক্তরাষ্ট্র, ফ্রান্স, ব্রিটেন, জার্মানি, চীন ও রাশিয়ার সঙ্গে ইরান জয়েন্ট কম্প্রিহেনসিভ প্লান অব অ্যাকশন (জেসিপিওএ) নামে একটি পরমাণু চুক্তি স্বাক্ষর করে। এই চুক্তির বিনিময়ে ইরানের ওপর থেকে নিষেধাজ্ঞা তুলে নেওয়া হয়। কিন্তু ২০১৮ সালে ট্রাম্প এটিকে “ত্রুটিপূর্ণ” বলে একতরফাভাবে চুক্তি থেকে বেরিয়ে যান। এরপর ইরানের ওপর কঠোর অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়। এই পদক্ষেপের পর ইরানও চুক্তির শর্ত মানতে উদাসীন হয়ে পড়ে। তারা ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণে সীমা ছাড়িয়ে গেছে, যা পশ্চিমা দেশগুলোর উদ্বেগ বাড়িয়েছে।

ট্রাম্প সম্প্রতি ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আলী খামেনিকে আলোচনায় বসার আহ্বান জানিয়েছেন। গত রোববার তিনি হুমকি দেন, চুক্তি না হলে ইরানে বোমা হামলা চালানো হবে। জবাবে খামেনি পাল্টা হুমকি দিয়ে বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্রের যেকোনো আক্রমণের কঠোর জবাব দেওয়া হবে।

ইউরোপীয় দেশগুলো ইরানকে আলোচনায় ফিরিয়ে আনতে গত সপ্তাহে বেশ কয়েক দফা কথা বলেছে। কিন্তু ট্রাম্প প্রশাসন “সর্বোচ্চ চাপ” সৃষ্টির নীতিতে অটল। এই টানাপোড়েনে পরিস্থিতি আরও জটিল হয়ে উঠছে। ফ্রান্সের এই সতর্কবার্তা স্পষ্ট করছে, সময় ফুরিয়ে আসছে। সবার চোখ এখন আলোচনার দিকে। সংঘর্ষ এড়াতে কূটনীতি কতটা কার্যকর হয়, তা-ই এখন দেখার বিষয়।

মন্তব্য করুন
Spread the love

সর্বশেষ - বানিজ্য ও অর্থনীতি