বৃহস্পতিবার, ৫ই জুন, ২০২৫| বিকাল ৪:৩০

এবার গাজার অংশবিশেষ দখল করার ঘোষণা ইসরায়েলের

প্রতিবেদক
staffreporter
এপ্রিল ৩, ২০২৫ ৫:৫২ অপরাহ্ণ
এবার গাজার অংশবিশেষ দখল করার ঘোষণা ইসরায়েলের

এবার গাজার অংশবিশেষ দখল করার ঘোষণা ইসরায়েলের

গত ১৫ মাসেরও বেশি সময় ধরে গাজা উপত্যকায় ভয়াবহ সামরিক অভিযান চালিয়ে আসা ইসরায়েল এবার নতুন একটি পদক্ষেপের ঘোষণা দিয়েছে। ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু এবং প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইসরায়েল কাৎজ পৃথক বার্তায় জানিয়েছেন, তারা গাজার দক্ষিণাঞ্চলের কিছু অংশ দখলের পরিকল্পনা করছেন। এই ঘোষণা এসেছে এমন এক সময়ে, যখন গাজার মানুষ ইতিমধ্যেই যুদ্ধের জেরে বিপর্যস্ত।

বুধবার স্থানীয় সময় সন্ধ্যায় হাঙ্গেরির উদ্দেশে রওনা হওয়ার আগে নেতানিয়াহু সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে একটি ভিডিওবার্তা প্রকাশ করেন। তিনি বলেন, “আমরা এবার গাজার দক্ষিণাঞ্চলের রাফাহ এবং খান ইউনূস শহরের মাঝামাঝি একটি এলাকা দখল করতে যাচ্ছি। এই এলাকাটি একসময় ‘মোরাগ এক্সিস’ নামে পরিচিত ছিল, যেখানে ইহুদি বসতি ছিল। ২০০৫ সালে ইসরায়েল সেখান থেকে উচ্ছেদ হয়। এখন আমরা সেই এলাকাকে আবার আমাদের নিয়ন্ত্রণে আনব এবং এটিকে নিরাপত্তা জোনের অংশ করব।” তিনি জোর দিয়ে বলেন, “আমরা গাজাকে ভাগ করে হামাসের ওপর চাপ বাড়াচ্ছি, যাতে তারা আমাদের জিম্মিদের ফিরিয়ে দেয়।”

নেতানিয়াহু আরও বলেন, এই পদক্ষেপের ফলে রাফাহ শহর খান ইউনূস থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যাবে। এর মাধ্যমে রাফাহ এবং এর সীমান্ত ক্রসিং—যিনি ফিলাডেলফি করিডোর নামেও পরিচিত—সম্পূর্ণ ইসরায়েলের নিয়ন্ত্রণে চলে আসবে। এই ক্রসিং একসময় গাজার বাসিন্দাদের জন্য ‘লাইফলাইন’ ছিল। মিসরের সঙ্গে গাজাকে সংযুক্ত এই পথ দিয়ে খাদ্য, ওষুধ, জ্বালানি ও ত্রাণসামগ্রী আসত। কিন্তু ইসরায়েল দীর্ঘদিন ধরে দাবি করে আসছে, এই পথে হামাসের অস্ত্রও গাজায় ঢুকত।

এদিকে, বুধবার সকালে প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইসরায়েল কাৎজ এক বিবৃতিতে বলেন, “আমরা গাজাকে জঙ্গিমুক্ত করতে এবং এর বিশাল এলাকাকে আমাদের নিরাপত্তা জোনের অংশ করতে নতুন অভিযান শুরু করেছি।” প্রায় দুই মাসের যুদ্ধবিরতির পর গত ১৮ মার্চ থেকে ইসরায়েলি প্রতিরক্ষা বাহিনী (আইডিএফ) গাজায় আবারও তৎপরতা শুরু করে। গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, এই সময়ে এক হাজারের বেশি মানুষ নিহত হয়েছেন। শুধু বুধবারই ৬০ জনের বেশি ফিলিস্তিনি প্রাণ হারিয়েছেন।

ইসরায়েলি সেনাপ্রধান ইয়াল জামির বলেছেন, “আমাদের লক্ষ্য জিম্মিদের উদ্ধার করা। যতক্ষণ না এই লক্ষ্য পূর্ণ হচ্ছে, ততক্ষণ অভিযান চলবে।” আইডিএফ-এর ধারণা, হামাসের হাতে থাকা জিম্মিদের মধ্যে এখনও অন্তত ৩০ জন জীবিত আছেন। ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর হামাসের হামলার পর থেকে এই জিম্মি সংকট চলছে।

ইসরায়েলি মানবাধিকার সংস্থা গিশা জানিয়েছে, নেতানিয়াহু যে এলাকা দখলের কথা বলছেন, তার আয়তন প্রায় ৬২ বর্গকিলোমিটার। এটি গাজার মোট ভূখণ্ডের ১৭ শতাংশ। এই পরিকল্পনা বাস্তবায়িত হলে গাজার ভৌগোলিক ও মানবিক পরিস্থিতি আরও জটিল হয়ে উঠবে।

নেতানিয়াহু ও কাৎজের এই ঘোষণা আন্তর্জাতিক মহলে উদ্বেগ বাড়িয়েছে। গাজার বাসিন্দারা ইতিমধ্যে বাস্তুচ্যুতি, ক্ষুধা ও রোগের মুখোমুখি। এই নতুন অভিযান কীভাবে পরিস্থিতি আরও খারাপ করবে, তা নিয়ে প্রশ্ন উঠছে।

মন্তব্য করুন
Spread the love

সর্বশেষ - বানিজ্য ও অর্থনীতি