নীলফামারীতে বিএনপির দুই পক্ষের সমাবেশ, ১৪৪ ধারা জারি
বিএনপির দুটি গ্রুপ একই জায়গায় সমাবেশ ডাকায় নীলফামারীর স্থানীয় প্রশাসন ১৪৪ ধারা জারি করেছে। এই নির্দেশ মঙ্গলবার সকাল ৯টা থেকে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত জলঢাকা উপজেলা শহরে কার্যকর থাকবে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে প্রশাসন কঠোর পদক্ষেপ নিয়েছে।
ঘটনার সূত্রপাত ঈদুল ফিতরকে কেন্দ্র করে। জলঢাকা উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের সদস্য সচিব আলমগীর হোসেনের নেতৃত্বে ‘জাতীয়তাবাদী শক্তি’ নামে একটি গ্রুপ ঈদের দিনসহ পাঁচ দিনব্যাপী একটি মেলার আয়োজন করে। এই মেলা হওয়ার কথা জলঢাকা সরকারি পাইলট উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে। কিন্তু জলঢাকা বিএনপির বর্তমান সেক্রেটারি মইনুল ইসলাম এই আয়োজন সম্পর্কে কিছুই জানতেন না। তিনি জেলা কমিটির কাছে এ বিষয়ে জানতে চান। জেলা থেকে তাকে বলা হয়, এটা সবাই মিলে করছে। কিন্তু এই জবাবে তিনি সন্তুষ্ট হননি।
এরপর ঈদের আগের দিন রোববার, ৩০ মার্চ, আলমগীর হোসেনের গ্রুপ মেলা উদযাপন কমিটির ব্যানারে শহরে একটি র্যালি বের করে। র্যালির পর মইনুল ইসলামের নেতৃত্বে আরেকটি পক্ষ এই আয়োজনের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানায়। তারা অভিযোগ করে, স্থানীয় বিএনপিকে না জানিয়ে এই মেলা করা হচ্ছে। উত্তেজনা বাড়তে থাকলে তারা মেলার গেট ভাঙচুর করে। এরপর দুই পক্ষের মধ্যে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটে। পরিস্থিতি উত্তপ্ত হয়ে ওঠে।
এই ঘটনার রেশ ঈদের দিনেও থামেনি। সোমবার রাতে দুই পক্ষই মেলাকে কেন্দ্র করে মাইকিং করে। তারা মঙ্গলবার সকাল ১০টায় বিক্ষোভ মিছিলের ঘোষণা দেয়। এই পরিস্থিতিতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় জলঢাকা থানার ওসি সাজ্জাদ হোসেনের আবেদনের ভিত্তিতে উপজেলা নির্বাহী অফিসার জায়িদ ইমরুল মোজাক্কির ১৪৪ ধারা জারি করেন। এই আদেশে জলঢাকা পৌর এলাকার থানা মোড় ও পেট্রোল পাম্প এলাকায় সভা-সমাবেশ নিষিদ্ধ করা হয়।
জায়িদ ইমরুল মোজাক্কির আমাদের জানান, “দুই পক্ষ একাধিক স্থানে সমাবেশ ডেকেছে। এতে এলাকায় চরম উত্তেজনা দেখা দিয়েছে। আইনশৃঙ্খলার অবনতি এবং রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষের আশঙ্কায় এই পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে।” তিনি বলেন, “জলঢাকা পেট্রোল পাম্প ও সরকারি মডেল পাইলট উচ্চ বিদ্যালয় মাঠ এলাকায় শান্তি বজায় রাখাই আমাদের লক্ষ্য।”
এই ঘটনায় স্থানীয় মানুষের মধ্যে উদ্বেগ ছড়িয়েছে। একজন বাসিন্দা বলেন, “ঈদের আনন্দ মাটি হয়ে গেল। দুই পক্ষের ঝগড়ায় আমরা শান্তিতে থাকতে পারছি না।” আরেকজন বলেন, “প্রশাসনের এই পদক্ষেপ ঠিকই হয়েছে। না হলে বড় কিছু ঘটে যেতে পারত।”
বিএনপির দুই পক্ষের আলমগীর হোসেন এবং মইনুল ইসলাম কেউই ফোন রিসিভ করেননি। ফলে তাদের অবস্থান এখনো পরিষ্কার নয়। তবে এই ঘটনা দলের অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্বের একটি চিত্র তুলে ধরেছে।
জলঢাকায় এই উত্তেজনা ঈদের সময়ে এলাকার শান্তি নষ্ট করেছে। প্রশাসনের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। ১৪৪ ধারার মেয়াদ শেষ হওয়ার পর পরিস্থিতি কোন দিকে যায়, সেটাই এখন দেখার বিষয়।