ঈদের দিনে গাজায় ইসরায়েলি হামলায় নিহত আরও ৮০ ফিলিস্তিনি
গতকাল ঈদের দিনে ইসরায়েলি বাহিনীর নির্মম হামলায় গাজা উপত্যকায় আরও ৮০ জন ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন আরও শত শত মানুষ। এই হামলার ফলে অবরুদ্ধ এই ছোট্ট ভূখণ্ডে মৃতের সংখ্যা ৫০ হাজার ৩৫০ ছাড়িয়ে গেছে। গত ১৮ মার্চ থেকে নতুন করে ইসরায়েলি আক্রমণ শুরু হওয়ার পর এক হাজারেরও বেশি মানুষ প্রাণ হারিয়েছেন। সোমবার, ৩১ মার্চ, এক প্রতিবেদনে এই মর্মান্তিক তথ্য জানিয়েছে বার্তাসংস্থা আনাদোলু।
গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, ২০২৩ সালের অক্টোবর থেকে শুরু হওয়া ইসরায়েলের আগ্রাসনে এখন পর্যন্ত ৫০ হাজার ৩৫৭ জন ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। তারা জানায়, পবিত্র ঈদুল ফিতরের প্রথম দিন, গত রোববার, ৫৩ জনের মরদেহ গাজার হাসপাতালে আনা হয়। গত ৪৮ ঘণ্টায় ইসরায়েলি হামলায় আরও ৩০৫ জন আহত হয়েছেন। এতে মোট আহতের সংখ্যা এখন ১ লাখ ১৪ হাজার ৪০০। মন্ত্রণালয়ের বিবৃতিতে বলা হয়, “অনেক মানুষ ধ্বংসস্তূপের নিচে আর রাস্তায় পড়ে আছে। উদ্ধারকারীরা তাদের কাছে পৌঁছাতে পারছে না।” এই কথাগুলো শুনলে গাজার মানুষের অসহায়ত্ব আর দুর্দশার চিত্র স্পষ্ট হয়ে ওঠে।
ঈদের দিনে যখন সবাই আনন্দ আর প্রার্থনায় মগ্ন থাকার কথা, তখন গাজায় বোমার শব্দ আর মৃত্যুর কান্না ছড়িয়ে পড়েছে। গাজার হাসপাতালগুলো এখন আহত আর মৃতদেহে ভরে গেছে।
গত ১৯ জানুয়ারি যুক্তরাষ্ট্র আর আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের চাপে ইসরায়েল যুদ্ধবিরতিতে রাজি হয়। এরপর প্রায় দুই মাস গাজায় কিছুটা শান্তি ফিরে এসেছিল। মানুষ আশা করেছিল, হয়তো দুঃখের দিন শেষ হবে। কিন্তু গত ১৮ মার্চ থেকে হামাসের সঙ্গে সেনা প্রত্যাহার নিয়ে মতানৈক্যের জেরে ইসরায়েল আবার বিমান হামলা শুরু করে।
ইসরায়েলের এই আগ্রাসন আন্তর্জাতিক মহলে তীব্র নিন্দা কুড়িয়েছে। গত বছর নভেম্বরে আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালত (আইসিসি) ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু এবং সাবেক প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইয়োভ গ্যালান্টের বিরুদ্ধে যুদ্ধাপরাধ ও মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করে। এছাড়া আন্তর্জাতিক বিচার আদালতে ইসরায়েলের বিরুদ্ধে গণহত্যার মামলা চলছে।
ইসরায়েল দাবি করে, তারা হামাসের বিরুদ্ধে লড়ছে। নেতানিয়াহু বলেছেন, “আমরা আমাদের নিরাপত্তার জন্য এটা করছি।” কিন্তু এই হামলায় সাধারণ মানুষের মৃত্যু বিশ্বব্যাপী ক্ষোভ জন্ম দিয়েছে। গাজার বাজার, রাস্তা, আর বাড়ি এখন ধ্বংসস্তূপে পরিণত। খাবার, পানি, আর ওষুধের অভাবে মানুষ বেঁচে থাকার লড়াই করছে।
ঈদের দিনে এই হামলা গাজার মানুষের জন্য একটি কালো দিন হয়ে উঠেছে। যখন বিশ্বের অন্যত্র মানুষ আনন্দে ঈদ উদযাপন করছে, গাজায় শোকের মাতম চলছে।
গাজার এই পরিস্থিতি এখন মানবতার জন্য একটি বড় চ্যালেঞ্জ। হাসপাতালে চিকিৎসার অভাবে মানুষ মারা যাচ্ছে। শিশুরা ক্ষুধায় কাঁদছে। একজন স্বেচ্ছাসেবী বলেন, “আমরা যতটুকু পারি, সাহায্য করছি। কিন্তু এটা যথেষ্ট নয়।” ইসরায়েলের এই হামলা কবে থামবে, আর গাজার মানুষ কবে শান্তিতে ঘুমোবে, সেটাই এখন সবার মনে বড় প্রশ্ন।