শনিবার, ৭ই জুন, ২০২৫| রাত ১২:০০

লেবাননের সঙ্গে যুদ্ধবিরতি চুক্তির পর বৈরুতে ইসরায়েলি হামলা

প্রতিবেদক
staffreporter
মার্চ ২৯, ২০২৫ ১:৩১ অপরাহ্ণ
লেবাননের সঙ্গে যুদ্ধবিরতি চুক্তির পর বৈরুতে ইসরায়েলি হামলা

লেবাননের সঙ্গে যুদ্ধবিরতি চুক্তির পর বৈরুতে ইসরায়েলি হামলা

গাজার পর এবার লেবাননের দিকে ক্রমাগত হামলা শুরু করেছে ইসরায়েল। শুক্রবার, ২৮ মার্চ, বৈরুতের দক্ষিণাঞ্চলীয় শহরতলিতে ব্যাপক বিমান হামলা চালিয়েছে তেল আবিব। কয়েক মাসের একটা শান্তির পর এই হামলা এসেছে, যা ইসরায়েল ও লেবাননের মধ্যে গত নভেম্বরে স্বাক্ষরিত যুদ্ধবিরতি চুক্তিকে চরম ঝুঁকির মুখে ফেলে দিয়েছে। ব্রিটিশ বার্তাসংস্থা রয়টার্স এই তথ্য জানিয়েছে।

ইসরায়েলি সেনাবাহিনী বলছে, এই হামলা ছিল লেবানন থেকে আসা রকেট হামলার প্রতিশোধ। দেশটির প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু এক বিবৃতিতে বলেছেন, “আমরা যে কোনও হুমকি রোধ করতে এবং যুদ্ধবিরতির শর্তগুলো বাস্তবায়ন করতে প্রস্তুত। লেবাননের যে কোনও জায়গায় প্রয়োজনে আমরা হামলা চালাব।” তিনি আরও যোগ করেছেন, “যারা এতদিন লেবাননের পরিস্থিতি থেকে শিক্ষা নিতে পারেনি, এই হামলা তাদের জন্য আমাদের দৃঢ়তার আরেকটি প্রমাণ। আমাদের নাগরিকদের বিরুদ্ধে সামান্যতম আঘাতও আমরা বরদাস্ত করব না।”

হামলায় বৈরুতের দক্ষিণাঞ্চলীয় শহরতলি দাহিয়েহে একটি ভবনকে টার্গেট করা হয়। ইসরায়েলের দাবি, এই ভবনটি হিজবুল্লাহর ড্রোন সংরক্ষণের জন্য ব্যবহৃত হতো। দাহিয়েহ হিজবুল্লাহর একটি শক্ত ঘাঁটি হিসেবে পরিচিত। ইসরায়েলি বিমান বাহিনী বলছে, হিজবুল্লাহ এই এলাকায় সাধারণ মানুষের মাঝে তাদের সামরিক অবকাঠামো লুকিয়ে রেখেছে, যা তারা “মানবঢাল” হিসেবে ব্যবহার করছে। হামলার আগে ইসরায়েলি সেনা এলাকাবাসীকে সরে যাওয়ার জন্য সতর্কতা জারি করেছিল। এরপর তিনটি ছোট ড্রোন হামলার মাধ্যমে সতর্কতা দেওয়া হয়, এবং তারপরই বড় ধরনের বিমান হামলা চালানো হয়।

গত বছর এই দাহিয়েহ এলাকায় ইসরায়েল প্রায় প্রতিদিনই হামলা চালিয়েছে। এই হামলাগুলোতে হিজবুল্লাহর শীর্ষ নেতৃত্বের বড় ধরনের ক্ষতি হয়। গত সেপ্টেম্বরে এমনই এক হামলায় হিজবুল্লাহর তিন দশকের প্রভাবশালী নেতা হাসান নাসরাল্লাহ নিহত হন। এরপর থেকে গ্রুপটির সামরিক শক্তি অনেকটাই দুর্বল হয়ে পড়ে। তবে, গত নভেম্বরে ইসরায়েল ও লেবাননের মধ্যে একটি যুদ্ধবিরতি চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। এই চুক্তির শর্ত ছিল, লেবাননের দক্ষিণাঞ্চল থেকে হিজবুল্লাহকে তাদের অস্ত্র ও যোদ্ধাদের সরিয়ে নিতে হবে। পাশাপাশি, সেখানে লেবানিজ সেনাবাহিনী মোতায়েন করা হলে ইসরায়েলি বাহিনী পিছু হটবে। কিন্তু এই চুক্তি বাস্তবায়নে দুই পক্ষই একে অপরের বিরুদ্ধে শর্ত ভঙ্গের অভিযোগ তুলে আসছে।

গত কয়েক সপ্তাহে এই যুদ্ধবিরতি আরও ভঙ্গুর হয়ে উঠেছিল। ইসরায়েলের অভিযোগ, লেবানিজ সেনাবাহিনী দক্ষিণাঞ্চলে পুরোপুরি মোতায়েন হয়নি এবং হিজবুল্লাহকে নিষ্ক্রিয় করতে ব্যর্থ হয়েছে। অন্যদিকে, লেবাননের দাবি, ইসরায়েল নিজেই শর্ত ভঙ্গ করে দক্ষিণ লেবানন থেকে সেনা সরিয়ে নিতে গড়িমসি করছে। এর মধ্যেই গত ২২ মার্চ ইসরায়েল দাবি করে, তাদের সেনাবাহিনী লেবানন থেকে ছোড়া একটি রকেট হামলা প্রতিরোধ করেছে। এই ঘটনার জবাবে শুক্রবার বৈরুতে বড় ধরনের হামলা চালায় তারা।

তবে, হিজবুল্লাহ এই রকেট হামলার সঙ্গে কোনও সম্পর্ক থাকার কথা অস্বীকার করেছে। গ্রুপটির পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, তারা যুদ্ধবিরতি চুক্তির প্রতি পুরোপুরি প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। এখন পর্যন্ত কোনও গোষ্ঠী এই হামলার দায় স্বীকার করেনি। লেবানিজ সেনাবাহিনী জানিয়েছে, তারা রকেট হামলার উৎসস্থল খুঁজে পেয়েছে এবং এর পেছনে কারা রয়েছে, তা জানতে তদন্ত শুরু করেছে।

এই ঘটনা মধ্যপ্রাচ্যে নতুন করে উত্তেজনা ছড়িয়েছে। গত নভেম্বরের যুদ্ধবিরতি চুক্তি ছিল ১৪ মাসের সংঘাতের পর একটি আশার আলো। সেই সংঘাতে লেবাননে ৪ হাজারের বেশি মানুষ নিহত হয় এবং ১২ লাখের বেশি মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়। ইসরায়েলের উত্তরাঞ্চলেও প্রায় ৬০ হাজার মানুষকে বাড়িঘর ছেড়ে পালাতে হয়েছিল। চুক্তির পর অনেকে আশা করেছিল, এই অঞ্চলে শান্তি ফিরবে। কিন্তু এই সাম্প্রতিক হামলা সেই আশায় ছাই ঢেলে দিয়েছে।

ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহু স্পষ্ট করে বলেছেন, “আমরা যুদ্ধবিরতি কঠোরভাবে প্রয়োগ করব। লেবানন সরকারকে তাদের দায়িত্ব পালন করতে হবে।” তিনি লেবাননের সরকারের ওপর দায় চাপিয়েছেন, যাতে দেশটি হিজবুল্লাহর কার্যক্রম নিয়ন্ত্রণে আনে। অন্যদিকে, লেবাননের প্রেসিডেন্ট জোসেফ আউন বলেছেন, তিনি যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে যোগাযোগ করছেন, যারা এই চুক্তির মধ্যস্থতা করেছিল। তিনি জোর দিয়ে বলেছেন, “উভয় পক্ষকেই চুক্তি মানতে হবে।”

এদিকে, ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট এমানুয়েল ম্যাক্রোঁ ইসরায়েলের এই হামলার সমালোচনা করেছেন। তিনি বলেছেন, “বৈরুতে এই অগ্রহণযোগ্য হামলা যুদ্ধবিরতির প্রতি সম্মান দেখায়নি। ইসরায়েলি সেনাকে দ্রুত লেবাননের পাঁচটি অবস্থান থেকে সরে যেতে হবে।” উল্লেখ্য, ফ্রান্সও এই চুক্তির অন্যতম মধ্যস্থতাকারী দেশ।

হিজবুল্লাহ এই যুদ্ধে ব্যাপক ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছে। সিরিয়ায় বাশার আল-আসাদের পতনের পর ইরান থেকে তাদের অস্ত্র সরবরাহের পথ বন্ধ হয়ে গেছে। তবে, তারা এখনো লেবাননে শিয়া সম্প্রদায়ের মধ্যে বেশ জনপ্রিয়। এই হামলার পর তারা কী পদক্ষেপ নেয়, তা এখন এই অঞ্চলের ভবিষ্যৎ নির্ধারণে গুরুত্বপূর্ণ।

মন্তব্য করুন
Spread the love

সর্বশেষ - বানিজ্য ও অর্থনীতি

আপনার জন্য নির্বাচিত
খাইবার পাখতুনখোয়ায় সন্ত্রাসী হামলার বাড়বাড়ন্ত, ২০২৫ সালের প্রথম সাড়ে পাঁচ মাসে ২৮৪টি হামলা

খাইবার পাখতুনখোয়ায় সন্ত্রাসী হামলার বাড়বাড়ন্ত, ২০২৫ সালের প্রথম সাড়ে পাঁচ মাসে ২৮৪টি হামলা

অর্থনৈতিক উন্নয়নে বড় পদক্ষেপ: স্থলভিত্তিক এলএনজি টার্মিনাল স্থাপন করতে যাচ্ছে সরকার

অর্থনৈতিক উন্নয়নে বড় পদক্ষেপ: স্থলভিত্তিক এলএনজি টার্মিনাল স্থাপন করতে যাচ্ছে সরকার

আজকের আবহাওয়া (২ জানুয়ারি, ২০২৫)

আজকের আবহাওয়া (১ ডিসেম্বর, ২০২৪)

বাণিজ্য যুদ্ধের মধ্যে চীন বোয়িং থেকে উড়োজাহাজ কেনা বন্ধ করল

বাণিজ্য যুদ্ধের মধ্যে চীন বোয়িং থেকে উড়োজাহাজ কেনা বন্ধ করল

আঙ্কারায় বাংলাদেশ দূতাবাসে গণহত্যা দিবস-২০২৫ পালন

আঙ্কারায় বাংলাদেশ দূতাবাসে গণহত্যা দিবস-২০২৫ পালন

গ্রিসে বাংলা নববর্ষ উদযাপন: মিলনমেলায় রূপ নিল বৈশাখী আনন্দ

গ্রিসে বাংলা নববর্ষ উদযাপন: মিলনমেলায় রূপ নিল বৈশাখী আনন্দ

এস আলমের ব্যাংক হিসাবে আড়াই লাখ কোটি টাকার লেনদেন, কর ফাঁকির অনুসন্ধানে জটিলতা

এস আলমের ব্যাংক হিসাবে আড়াই লাখ কোটি টাকার লেনদেন, কর ফাঁকির অনুসন্ধানে জটিলতা

অভিশংসন এড়ালেন দক্ষিণ কোরিয়ার প্রেসিডেন্ট, ব্যাপক বিক্ষোভ

প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে ফিলিপাইনের রাষ্ট্রদূতের সাক্ষাৎ

ক্ষমা না চাওয়া পর্যন্ত আ. লীগকে বিক্ষোভের অনুমতি দেয়া হবেনা - প্রেস সচিব

ক্ষমা না চাওয়া পর্যন্ত আ. লীগকে বিক্ষোভের অনুমতি দেয়া হবেনা : প্রেস সচিব