খাইবার পাখতুনখোয়ায় সন্ত্রাসী হামলার বাড়বাড়ন্ত, ২০২৫ সালের প্রথম সাড়ে পাঁচ মাসে ২৮৪টি হামলা
পাকিস্তানের উত্তরপশ্চিমাঞ্চলীয় রাজ্য খাইবার পাখতুনখোয়া ক্রমেই সন্ত্রাস ও চরমপন্থীদের হামলার কবলে পড়ছে। চলতি ২০২৫ সালের ১ জানুয়ারি থেকে জুনের মাঝামাঝি সময় পর্যন্ত মাত্র সাড়ে পাঁচ মাসে রাজ্যটিতে সংঘটিত হয়েছে ২৮৪টি সন্ত্রাসী হামলা। এসব তথ্য জানিয়েছে প্রাদেশিক পুলিশের সন্ত্রাস দমন ইউনিট (সিটিডি)।
পাকিস্তানি সংবাদমাধ্যম দ্য নিউজের বরাতে জানা যায়, এসব হামলার মধ্যে সবচেয়ে বেশি ঘটনা ঘটেছে উত্তর ওয়াজিরিস্তানে। এরপর বান্নু, ডেরা ইসমাইল খান, পেশোয়ার ও কুররম জেলাগুলো তালিকার শীর্ষে রয়েছে। হামলাগুলোর পেছনে জড়িত সন্দেহে সিটিডি মোট ১ হাজার ১১৬ জনের একটি তালিকা করেছে, যাদের মধ্যে ৩৫১ জন উত্তর ওয়াজিরিস্তান ও ১৬৬ জন কুররম জেলার বাসিন্দা।
এই তালিকাভুক্তদের মধ্যে এখন পর্যন্ত ৯৫ জনকে গ্রেপ্তার করা সম্ভব হয়েছে। এর বাইরে নিয়মিত সেনা-পুলিশ যৌথ অভিযানে গত সাড়ে পাঁচ মাসে নিহত হয়েছে ১৪৮ জন সন্ত্রাসী। শুধু ডেরা ইসমাইল খান জেলাতেই মারা গেছে ৬৭ জন।
সিটিডির তথ্য অনুযায়ী, রাজ্যটিতে সন্ত্রাসী হামলার মাত্রা ক্রমেই বাড়ছে। ২০২৩ সালে হামলার সংখ্যা ছিল ৬৫১টি, ২০২৪ সালে তা বেড়ে দাঁড়ায় ৭৩২টিতে। আর ২০২৫ সালে প্রথম পাঁচ মাসেই ২৮৪টি হামলা—যা থেকে ধারণা করা হচ্ছে, বছরের শেষে এই সংখ্যা পূর্ববর্তী যেকোনো বছরের রেকর্ড ছাড়িয়ে যাবে।
বিশ্লেষকরা বলছেন, এই পরিস্থিতির জন্য সরকারের অবহেলা অনেকাংশে দায়ী। রাজ্যের বহু পুলিশ স্টেশন, নিরাপত্তা চৌকি ও পুলিশ লাইন এখনো সুরক্ষিত সীমানা প্রাচীরবিহীন, ফলে সেগুলো সহজেই সন্ত্রাসীদের হামলার লক্ষ্যে পরিণত হয়। এছাড়া সন্ত্রাস কবলিত জেলাগুলোর সাহসী পুলিশ সদস্যরা কোনো অতিরিক্ত ভাতা বা প্রণোদনা পাচ্ছেন না, ফলে তাদের মনোবলও চাপে পড়ছে।
সিটিডির তথ্য অনুসারে, চলতি বছরের হামলাগুলোতে অন্তত ৮৬ জন পুলিশ সদস্য নিহত হয়েছেন, আহত হয়েছেন ২০০ জনেরও বেশি।
খাইবার পাখতুনখোয়ার আয়তন প্রায় ১ লাখ ১ হাজার বর্গকিলোমিটার এবং জনসংখ্যা প্রায় ৫ কোটি। আফগানিস্তানের সীমান্তবর্তী এই অঞ্চলে দীর্ঘ এক দশকের বেশি সময় ধরে সক্রিয় রয়েছে নিষিদ্ধ তালেবানপন্থী গোষ্ঠী তেহরিক-ই তালিবান পাকিস্তান (টিটিপি)। গোষ্ঠীটির লক্ষ্য হলো খাইবার পাখতুনখোয়াকে বিচ্ছিন্ন করে আফগান তালেবান শাসনের আদলে একটি স্বতন্ত্র শাসনব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা করা।
পাকিস্তান সরকার টিটিপিকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করে দমন অভিযানের কথা বললেও বাস্তবে তেমন কার্যকর সাফল্য মিলছে না, বরং পরিস্থিতি দিন দিন আরও জটিল হয়ে উঠছে।
সূত্র: জিও টিভি