শেখ মুজিবকে স্বাধীনতার ঘোষক আখ্যা দিয়ে ফেসবুকে যুবদল নেতার পোস্ট
বাংলাদেশের স্বাধীনতার ইতিহাস নিয়ে নতুন করে বিতর্কের জন্ম দিয়েছে একটি ফেসবুক পোস্ট। সম্প্রতি, যুবদলের একজন নেতা শেখ মুজিবুর রহমানকে ‘স্বাধীনতার ঘোষক’ আখ্যা দিয়ে ফেসবুকে একটি পোস্ট দিয়েছেন, যা রাজনৈতিক ও সামাজিক মহলে তীব্র আলোচনার সৃষ্টি করেছে। এই পোস্টের পর বিভিন্ন মহল থেকে প্রতিক্রিয়া এসেছে—কেউ সমর্থন জানিয়েছেন, আবার কেউ কঠোর সমালোচনা করেছেন। ঘটনাটি ২০২৫ সালের ২৬ মার্চ স্বাধীনতা দিবসের প্রাক্কালে প্রকাশ পাওয়ায় এর তাৎপর্য আরও বেড়ে গেছে।
যুবদল নেতা তার পোস্টে লিখেছেন, “শেখ মুজিবই বাংলাদেশের স্বাধীনতার প্রকৃত ঘোষক। ১৯৭১ সালের ২৬ মার্চ প্রথম প্রহরে তিনি যে ঘোষণা দিয়েছিলেন, তা আমাদের মুক্তির পথ দেখিয়েছে।” তিনি আরও উল্লেখ করেন, শেখ মুজিবের ৭ মার্চের ভাষণ এবং তার নেতৃত্বে আওয়ামী লীগের সংগ্রামই বাংলাদেশের জন্মের মূল ভিত্তি। এই পোস্ট প্রকাশের পরপরই সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে হৈচৈ পড়ে যায়। যুবদলের একজন নেতার এমন বক্তব্য বিএনপির ঐতিহ্যগত অবস্থানের সঙ্গে সাংঘর্ষিক বলে অনেকে মনে করছেন, কারণ দলটি সাধারণত জিয়াউর রহমানকে স্বাধীনতার ঘোষক হিসেবে প্রচার করে আসছে।
বিএনপি ও যুবদলের একাংশ এই পোস্টের তীব্র নিন্দা জানিয়েছে। দলের একজন জ্যেষ্ঠ নেতা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, “এটি দলের নীতির বিরুদ্ধে। জিয়াউর রহমানই কালুরঘাট থেকে স্বাধীনতার ঘোষণা দিয়েছিলেন। এ ধরনের পোস্ট দলের ঐক্য নষ্ট করতে পারে।” এদিকে, যুবদলের কেন্দ্রীয় কমিটি ওই নেতার বিরুদ্ধে শৃঙ্খলাভঙ্গের অভিযোগে তদন্ত শুরু করেছে বলে জানা গেছে। তবে পোস্টটি সমর্থন করে কিছু যুবদল নেতা দাবি করেছেন, ইতিহাসের সত্য প্রকাশে এমন সাহসী পদক্ষেপ প্রশংসার দাবিদার।
অন্যদিকে, আওয়ামী লীগ এই ঘটনাকে স্বাগত জানিয়েছে। দলটির একজন মুখপাত্র বলেন, “শেখ মুজিব বাংলাদেশের স্বাধীনতার ঘোষক এবং জাতির পিতা। যুবদল নেতার এই পোস্ট প্রমাণ করে যে সত্য কখনো চাপা থাকে না।” তারা এটিকে বিএনপির অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্বের প্রমাণ হিসেবেও দেখছে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে আওয়ামী লীগ সমর্থকরা পোস্টটি ব্যাপকভাবে শেয়ার করে উৎসবের আমেজ তৈরি করেছে।
ইতিহাসবিদদের মতামতও এই বিতর্কে যোগ হয়েছে। একজন বিশিষ্ট ইতিহাসবিদ বলেন, “শেখ মুজিব ২৬ মার্চ প্রথম প্রহরে স্বাধীনতার ঘোষণা দিয়েছিলেন, যা ওয়্যারলেসে প্রচারিত হয়। পরে জিয়াউর রহমান তার পক্ষে ঘোষণা দেন। দুজনেরই অবদান আছে, তবে মুজিবের ভূমিকা ছিল মূল।” তবে আরেকজন ইতিহাসবিদ মনে করেন, এই বিতর্ক রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত।
এই ঘটনায় সাধারণ জনগণের মধ্যেও মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা গেছে। ফেসবুকে পোস্টটির নিচে হাজারো মন্তব্য জমা পড়েছে। কেউ কেউ এটিকে ‘ইতিহাসের স্বীকৃতি’ বললেও, অনেকে এটিকে ‘দলীয় বিশ্বাসঘাতকতা’ হিসেবে দেখছেন। আগামী দিনে এই পোস্ট তুরস্কের রাজনীতিতে কী প্রভাব ফেলবে, তা এখনো স্পষ্ট নয়। তবে এটি স্পষ্ট যে, স্বাধীনতার ইতিহাস নিয়ে বিতর্ক বাংলাদেশে নতুন মাত্রা পেয়েছে।