যুক্তরাষ্ট্রে শিখদের পাগড়ি খুলে ডাস্টবিনে ফেলা, ফেরত পাঠানো হলো ১১২ ভারতীয়কে
প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের কঠোর অভিবাসন নীতির অংশ হিসেবে ফের ১১২ জন ভারতীয়কে দেশে ফেরত পাঠিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। রোববার পাঞ্জাবের অমৃতসরের শ্রীগুরু রাম দাস আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে মার্কিন সামরিক বিমানটি অবতরণ করে। ফেরত আসা অভিবাসীদের মধ্যে অনেকের হাতকড়া ও পায়ে শিকল পরানো ছিল, যা নিয়ে ভারতে ব্যাপক ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে।
ফেরত আসা অভিবাসীদের একজন, ২৩ বছর বয়সী জতিন্দর সিং, অভিযোগ করেন যে যুক্তরাষ্ট্রে আটক থাকার সময় তাকে অমানবিক পরিস্থিতির মুখোমুখি হতে হয়েছে। ভারতীয় সংবাদমাধ্যম ইন্ডিয়া টুডে-কে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, “আমার পাগড়ি জোর করে খুলে ডাস্টবিনে ফেলে দেওয়া হয়। আমি আপত্তি করেছিলাম, কিন্তু তারা আমার কোনো কথা শোনেনি।”
জতিন্দর আরও জানান, আটক থাকার সময় অত্যন্ত অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে রাখা হয়েছিল এবং খাবার হিসেবে শুধু লেস চিপস ও ফ্রুটি জুস দেওয়া হতো। এছাড়া, ফেরত পাঠানোর সময় ৩৬ ঘণ্টা ধরে সামরিক বিমানে তাকে হাতকড়া ও শিকল পরিয়ে রাখা হয়েছিল।
তিনি বলেন, “আমার পরিবার ৫০ লাখ রুপি খরচ করে আমাকে যুক্তরাষ্ট্রে পাঠানোর চেষ্টা করেছিল। এক এজেন্ট প্রথমে আমাকে পানামার জঙ্গল পেরিয়ে মেক্সিকো হয়ে যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশ করানোর পরিকল্পনা করেছিল। কিন্তু সীমান্ত পেরোনোর পরই মার্কিন সীমান্তরক্ষীরা আমাকে ধরে ফেলে।”
এ ঘটনায় ভারতে ব্যাপক প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে। শিখ ধর্মীয় সংগঠন শিরোমণি গুরুদ্বার প্রবন্ধক কমিটির (এসজিপিসি) প্রধান হরজিন্দর সিং ধামী বলেন, “আমাদের যুবকদের পাগড়ি খুলে নেওয়া হয়েছে, এটি অত্যন্ত নিন্দনীয়। এই ঘটনার পূর্ণ তদন্ত হওয়া উচিত।”
ফেরত পাঠানো অভিবাসীদের মধ্যে ৪৪ জন হরিয়ানার, ৩৩ জন গুজরাটের, ৩১ জন পাঞ্জাবের, ২ জন উত্তর প্রদেশের এবং ১ জন করে হিমাচল ও উত্তরাখণ্ডের নাগরিক। এর আগে শনিবার রাতেও ১১৯ জন ভারতীয়কে ফেরত পাঠানো হয়, যাদের অনেকের একই ধরনের অভিজ্ঞতা হয়েছিল।
এদিকে, মার্কিন অভিবাসন কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, অবৈধভাবে বসবাসরত ভারতীয়দের ফেরত পাঠানোর প্রক্রিয়া আগামী সপ্তাহগুলোতেও চলবে। প্রতি ১৫ দিন পর একটি সামরিক বিমানে ভারতীয় অভিবাসীদের ফেরত পাঠানো হবে, যতদিন পর্যন্ত না সবাই দেশে ফিরে আসে।
পিউ রিসার্চ সেন্টারের তথ্য অনুযায়ী, ২০২২ সাল থেকে প্রায় ৭ লাখ ২৫ হাজার ভারতীয় নাগরিক অবৈধভাবে যুক্তরাষ্ট্রে বসবাস করছেন। তাই ভবিষ্যতে আরও অনেকে একই পরিণতির শিকার হতে পারেন।