শনিবার, ১৯শে এপ্রিল, ২০২৫| ভোর ৫:২৪

সৌদিতে ২৫ হাজারের বেশি প্রবাসী গ্রেপ্তার

প্রতিবেদক
staffreporter
মার্চ ২৪, ২০২৫ ৩:১৯ অপরাহ্ণ
সৌদিতে ২৫ হাজারের বেশি প্রবাসী গ্রেপ্তার

সৌদিতে ২৫ হাজারের বেশি প্রবাসী গ্রেপ্তার

সৌদি আরবে অভিবাসীদের বিরুদ্ধে কঠোর অভিযানে নতুন মাত্রা যোগ হয়েছে। দেশটির আইনশৃঙ্খলা বাহিনী গত এক সপ্তাহে ২৫ হাজারের বেশি প্রবাসীকে গ্রেপ্তার করেছে। রোববার (২৩ মার্চ, ২০২৫) পর্যন্ত প্রকাশিত প্রতিবেদন অনুযায়ী, আবাসন, শ্রম ও সীমান্ত নিরাপত্তা আইন লঙ্ঘনের অভিযোগে এই ব্যাপক গ্রেপ্তার অভিযান চালানো হয়েছে। সৌদি সরকারের এই কঠোর পদক্ষেপ অভিবাসীদের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়েছে এবং আন্তর্জাতিক মহলে বিতর্কের জন্ম দিয়েছে।

সৌদি প্রেস এজেন্সির তথ্যমতে, গত ১৫ থেকে ২২ মার্চ পর্যন্ত এই অভিযানে মোট ২৫,১৫০ জন প্রবাসীকে গ্রেপ্তার করা হয়। এর মধ্যে আবাসন আইন ভঙ্গের অভিযোগে ১৪,২৩৮ জন, অবৈধভাবে সীমান্ত অতিক্রমের চেষ্টায় ৫,৮৯৭ জন এবং শ্রম আইন লঙ্ঘনের দায়ে ৪,৯১৫ জন গ্রেপ্তার হয়েছেন। গ্রেপ্তারকৃতদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য সংখ্যক পাকিস্তানি, ইয়েমেনি ও সোমালিয়ার নাগরিক রয়েছেন। এছাড়া, ভিক্ষাবৃত্তি ও অবৈধ কার্যকলাপে জড়িত থাকার অভিযোগও অনেকের বিরুদ্ধে আনা হয়েছে। সামাজিক মাধ্যমে প্রকাশিত পোস্টগুলোতে দাবি করা হয়েছে, এদের মধ্যে বাংলাদেশি প্রবাসীদের সংখ্যাও কম নয়, যদিও এ বিষয়ে সরকারি পরিসংখ্যান এখনো প্রকাশিত হয়নি।

এই অভিযান সৌদি আরবের ‘ভিশন ২০৩০’ এর অংশ হিসেবে অবৈধ অভিবাসন নিয়ন্ত্রণ ও শ্রমবাজার সংস্কারের প্রচেষ্টার একটি ধারাবাহিকতা। সৌদি কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, গ্রেপ্তারকৃতদের মধ্যে ৩,২১৭ জনকে দেশে ফেরত পাঠানোর প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে, এবং বাকিদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা চলছে। অভিযানে আরও ৮,৪৫০ জনকে সীমান্তে আটক করা হয়েছে, যারা অবৈধভাবে দেশে প্রবেশের চেষ্টা করছিল। সৌদি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, “যারা আইন লঙ্ঘন করবে, তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে। আমরা আমাদের দেশের নিরাপত্তা ও শৃঙ্খলা রক্ষায় বদ্ধপরিকর।”

এই ঘটনায় প্রবাসীদের মধ্যে উদ্বেগ ছড়িয়ে পড়েছে। অনেকে মনে করছেন, সৌদি সরকার অভিবাসীদের ওপর অতিরিক্ত কঠোরতা দেখাচ্ছে। একজন প্রবাসী সামাজিক মাধ্যমে লিখেছেন, “আমরা এখানে কঠোর পরিশ্রম করি, দেশের উন্নয়নে অবদান রাখি। কিন্তু এভাবে গ্রেপ্তার করা হলে আমাদের ভবিষ্যৎ কী হবে?” বাংলাদেশি প্রবাসীদের একটি সংগঠন দাবি করেছে, অনেক বাংলাদেশি বৈধ কাগজপত্র থাকা সত্ত্বেও গ্রেপ্তারের শিকার হয়েছেন। তারা বাংলাদেশ সরকারের কাছে এ বিষয়ে হস্তক্ষেপের আহ্বান জানিয়েছে।

আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংগঠনগুলো এই অভিযানের সমালোচনা করেছে। তারা বলছে, গ্রেপ্তারকৃতদের ন্যায্য বিচারের সুযোগ দেওয়া হচ্ছে না। ইউরোপীয়-সৌদি অর্গানাইজেশন ফর হিউম্যান রাইটস (ইএসওএইচআর) জানিয়েছে, “প্রবাসীরা এখানে সবচেয়ে দুর্বল গোষ্ঠী। তাদের আইনি সহায়তা ও নথি অ্যাক্সেসের অধিকার থেকে বঞ্চিত করা হচ্ছে।” সংগঠনটি এই গ্রেপ্তারকে “নজিরবিহীন” বলে উল্লেখ করেছে।

সৌদি আরব বাংলাদেশের রেমিট্যান্সের অন্যতম বড় উৎস। ২০১৭-১৮ অর্থবছরে সৌদি থেকে ২,৫৯১.৫৮ মিলিয়ন ডলার রেমিট্যান্স এসেছিল। এই অভিযানের ফলে প্রবাসীদের আয় ও জীবনযাত্রার ওপর প্রভাব পড়তে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। স্থানীয় বিশ্লেষকরা বলছেন, এটি সৌদি অর্থনীতিতে শ্রমিক সংকটও সৃষ্টি করতে পারে।

এদিকে, বাংলাদেশ দূতাবাস সৌদি কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করছে। তারা জানিয়েছে, গ্রেপ্তারকৃত বাংলাদেশিদের তালিকা সংগ্রহ করে আইনি সহায়তা দেওয়ার চেষ্টা চলছে। তবে, এই ঘটনা কীভাবে সমাধান হবে এবং প্রবাসীদের ভবিষ্যৎ কী হবে—তা এখনো অনিশ্চিত।

মন্তব্য করুন
Spread the love

সর্বশেষ - বানিজ্য ও অর্থনীতি