এক দশক পর পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে ঈদ করবেন খালেদা জিয়া
বিএনপি চেয়ারপারসন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া দীর্ঘ এক দশক পর এবার পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে ঈদ উদযাপন করতে যাচ্ছেন। ২০২৫ সালের ঈদুল ফিতর উপলক্ষে তিনি যুক্তরাজ্যের লন্ডনে তার বড় ছেলে তারেক রহমানের বাসায় অবস্থান করছেন। ২০১৫ সালের পর এটিই প্রথমবার যখন তিনি ছেলে, পুত্রবধূ জুবাইদা রহমান এবং নাতি-নাতনিদের সঙ্গে ঈদের আনন্দ ভাগাভাগি করবেন। এই ঘটনা বিএনপি নেতাকর্মীদের মধ্যে উৎসাহ সৃষ্টি করেছে, যারা দীর্ঘদিন ধরে তাদের নেত্রীর মুক্তি ও সুস্থতার জন্য অপেক্ষা করছিলেন।
খালেদা জিয়া গত ৫ আগস্ট ২০২৪-এ ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের পর রাষ্ট্রপতির আদেশে কারাগার থেকে মুক্তি পান। এরপর দুর্নীতির দুটি মামলার রায় বাতিল হওয়ায় তিনি উন্নত চিকিৎসার জন্য ৮ জানুয়ারি ২০২৫-এ লন্ডনে যান। লন্ডনের বিশেষায়িত হাসপাতাল ‘দ্য লন্ডন ক্লিনিক’-এ ১৭ দিন চিকিৎসার পর তিনি তারেক রহমানের বাসায় উঠেছেন। দলীয় সূত্র জানায়, গত দশ বছরে তিনি কারাগারে এবং বাসায় অন্তরীণ অবস্থায় চারটি ঈদ কাটিয়েছেন। এবারের ঈদ তাই তার জন্য বিশেষ তাৎপর্য বহন করে।
বিএনপির একটি সূত্র জানায়, ২০১৫ সালে লন্ডনে ঈদুল আজহা উদযাপনের সময় খালেদা জিয়ার সঙ্গে তারেক রহমান, তার স্ত্রী-সন্তান এবং প্রয়াত ছোট ছেলে আরাফাত রহমান কোকোর পরিবার ছিল। কোকোর মৃত্যুর পর সেই ঈদ ছিল জিয়া পরিবারের জন্য একটি দুঃখময় স্মৃতি। এরপর ২০১৮ সালে জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট মামলায় দণ্ডিত হয়ে তিনি কারাগারে যান। ২০২০ সালে করোনা মহামারির সময় শর্তসাপেক্ষে মুক্তি পেলেও বিদেশে চিকিৎসার অনুমতি না মেলায় তিনি গুলশানের বাসভবন ‘ফিরোজা’য় সীমাবদ্ধ ছিলেন। এবার লন্ডনে পরিবারের সঙ্গে ঈদ করার সুযোগ তার শারীরিক ও মানসিক অবস্থার উন্নতির ইঙ্গিত দিচ্ছে।
যুক্তরাজ্য বিএনপির সভাপতি এম এ মালেক জানান, “খালেদা জিয়া এবার লন্ডনেই ঈদ পালন করবেন। তার শারীরিক অবস্থা স্থিতিশীল, এবং চিকিৎসকরা নিয়মিত ফলোআপ করছেন।” তিনি আরও বলেন, ঈদের দুই সপ্তাহ পর, অর্থাৎ ১৫ এপ্রিলের আশপাশে তিনি দেশে ফিরতে পারেন, যদিও চিকিৎসকদের চূড়ান্ত সিদ্ধান্তের ওপর এটি নির্ভর করছে। খালেদার ব্যক্তিগত চিকিৎসক এ জেড এম জাহিদ হোসেনও তার সঙ্গে রয়েছেন।
বিএনপি নেতাকর্মীরা এই ঈদকে ‘বিশেষ আনন্দের’ হিসেবে দেখছেন। দলের উপদেষ্টা এনামুল হক চৌধুরী বলেন, “ম্যাডামের সঙ্গে পরিবারের সময় কাটানো আমাদের জন্য সুখবর। তবে তারেক রহমানের দেশে ফেরা রাজনৈতিক পরিস্থিতির ওপর নির্ভর করছে।” এদিকে, খালেদার চিকিৎসায় লিভার সিরোসিসের জন্য প্রতিস্থাপনের প্রয়োজনীয়তা উঠে এসেছে, যা পুরোপুরি শেষ হলে তিনি দেশে ফিরবেন।
এই ঈদ জিয়া পরিবারের জন্য একটি পুনর্মিলনের সুযোগ এনেছে। স্থানীয় গণমাধ্যমে প্রকাশিত খবরে বলা হয়েছে, খালেদা তার নাতি-নাতনিদের সঙ্গে সময় কাটাচ্ছেন এবং পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে কুশল বিনিময় করছেন। এটি তার দীর্ঘ রাজনৈতিক ও ব্যক্তিগত সংগ্রামের পর একটি স্বস্তির মুহূর্ত। আগামী দিনে তিনি দেশে ফিরে রাজনীতিতে কী ভূমিকা নেন, তা নিয়ে দলের মধ্যে আলোচনা চলছে।