শনিবার, ১৯শে এপ্রিল, ২০২৫| সন্ধ্যা ৭:০৯

কৃষ্ণ সাগরে হামলা বন্ধে একমত হয়েছে রাশিয়া-ইউক্রেন

প্রতিবেদক
staffreporter
মার্চ ২৬, ২০২৫ ৫:৫৬ অপরাহ্ণ
কৃষ্ণ সাগরে হামলা বন্ধে একমত হয়েছে রাশিয়া-ইউক্রেন

কৃষ্ণ সাগরে হামলা বন্ধে একমত হয়েছে রাশিয়া-ইউক্রেন

রাশিয়া ও ইউক্রেনের মধ্যে দীর্ঘদিন ধরে চলমান সংঘাতে একটি গুরুত্বপূর্ণ মোড় এসেছে। সৌদি আরবে তিন দিনব্যাপী আলোচনার পর উভয় দেশ কৃষ্ণ সাগরে নৌ হামলা বন্ধে সম্মত হয়েছে বলে যুক্তরাষ্ট্র জানিয়েছে। ২৬ মার্চ, ২০২৫ পর্যন্ত প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী, এই সমঝোতাকে স্থায়ী যুদ্ধবিরতির দিকে একটি প্রাথমিক পদক্ষেপ হিসেবে দেখা হচ্ছে। এই ঘোষণা মধ্যপ্রাচ্যে শান্তি প্রতিষ্ঠার প্রচেষ্টায় যুক্তরাষ্ট্র ও তার মিত্রদের ভূমিকাকে আরও স্পষ্ট করেছে।

হোয়াইট হাউসের এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, রাশিয়া ও ইউক্রেন কৃষ্ণ সাগরে পরস্পরের বিরুদ্ধে সামরিক অভিযান বন্ধ করতে রাজি হয়েছে। এই অঞ্চলটি যুদ্ধের শুরু থেকেই উভয় পক্ষের জন্য কৌশলগতভাবে গুরুত্বপূর্ণ ছিল। ২০২২ সালে রাশিয়া ইউক্রেনে আগ্রাসন শুরু করার পর থেকে কৃষ্ণ সাগরে বাণিজ্যিক জাহাজ, নৌযান এবং সামরিক ঘাঁটিতে বারবার হামলা হয়েছে। এই সমঝোতার ফলে কৃষ্ণ সাগরে বাণিজ্য পথগুলো পুনরায় চালু হওয়ার সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে, যা বিশ্ব খাদ্য সরবরাহে ইতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে।

সৌদি আরবের রাজধানী রিয়াদে অনুষ্ঠিত এই আলোচনায় যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যস্থতায় উভয় পক্ষের প্রতিনিধিরা অংশ নেন। আলোচনার মূল বিষয় ছিল কৃষ্ণ সাগরে শান্তি প্রতিষ্ঠা এবং এর মাধ্যমে বৃহত্তর যুদ্ধবিরতির পথ প্রশস্ত করা। একটি সূত্র জানিয়েছে, রাশিয়ার প্রতিনিধি দল এই সমঝোতাকে “অর্থনৈতিক ও সামরিক স্থিতিশীলতার জন্য প্রয়োজনীয়” বলে মনে করেছে, যখন ইউক্রেনের প্রতিনিধিরা এটিকে “দেশের পূর্বাঞ্চলীয় সীমান্তে চাপ কমানোর” একটি সুযোগ হিসেবে দেখেছে।

কৃষ্ণ সাগরে হামলা বন্ধের এই চুক্তি বিশ্ববাজারে ইউক্রেনের শস্য রপ্তানির ওপরও প্রভাব ফেলবে। যুদ্ধ শুরুর পর থেকে ইউক্রেনের বন্দরগুলো অবরুদ্ধ থাকায় শস্য রপ্তানি ব্যাহত হয়েছিল, যা বিশ্বজুড়ে খাদ্য সংকটকে তীব্র করেছিল। ২০২২ সালে তুরস্ক ও জাতিসংঘের মধ্যস্থতায় একটি শস্য চুক্তি হয়েছিল, কিন্তু তা ভেঙে যাওয়ার পর পরিস্থিতি আবারও জটিল হয়ে ওঠে। এই নতুন সমঝোতা সেই পথকে পুনরায় সুগম করতে পারে বলে আশা করা হচ্ছে।

যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তরের এক কর্মকর্তা বলেন, “এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ। কৃষ্ণ সাগরে শান্তি পুরো অঞ্চলের জন্য স্থিতিশীলতা নিয়ে আসবে।” তবে, তিনি সতর্ক করে বলেন, “এটি এখনও প্রাথমিক পর্যায়ে রয়েছে, এবং পূর্ণ যুদ্ধবিরতির জন্য আরও আলোচনা প্রয়োজন।” আন্তর্জাতিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন, এই চুক্তি রাশিয়া ও ইউক্রেনের মধ্যে সরাসরি শান্তি আলোচনার পথে প্রথম ধাপ হতে পারে।

ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি এই সমঝোতার বিষয়ে সতর্ক আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন। তিনি বলেন, “আমরা শান্তি চাই, কিন্তু আমাদের সার্বভৌমত্বের বিনিময়ে নয়।” অন্যদিকে, রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন এখনও এই বিষয়ে সরাসরি কোনো মন্তব্য করেননি। তবে, ক্রেমলিনের এক মুখপাত্র জানিয়েছেন, “এটি আমাদের স্বার্থ রক্ষার সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ হলে আমরা এগিয়ে যাব।”

এই সমঝোতার ফলে কৃষ্ণ সাগরে নৌপথে সামরিক উত্তেজনা কমার সম্ভাবনা দেখা দিলেও, স্থলভাগে যুদ্ধ অব্যাহত থাকবে কি না, তা এখনও স্পষ্ট নয়। জাতিসংঘ এই উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়েছে এবং উভয় পক্ষকে আলোচনার টেবিলে ফিরে আসার আহ্বান জানিয়েছে। এই ঘটনা মধ্যপ্রাচ্যে শান্তি প্রক্রিয়ায় সৌদি আরব ও যুক্তরাষ্ট্রের ভূমিকাকেও নতুন করে আলোচনায় এনেছে।

মন্তব্য করুন
Spread the love

সর্বশেষ - বানিজ্য ও অর্থনীতি