দক্ষিণ কোরিয়ায় অভিশংসিত হান ডাক-সুকে ভারপ্রাপ্ত প্রেসিডেন্ট পদে ফেরাল আদালত
দক্ষিণ কোরিয়ার রাজনৈতিক সংকটে নতুন মোড় এনেছে দেশটির সাংবিধানিক আদালতের একটি ঐতিহাসিক রায়। রোববার (২৩ মার্চ, ২০২৫) আদালত অভিশংসিত ভারপ্রাপ্ত প্রেসিডেন্ট হান ডাক-সুর বিরুদ্ধে পার্লামেন্টের মহাভিয়োগ প্রস্তাব বাতিল করে তাকে পুনর্বহাল করার নির্দেশ দিয়েছে। এই রায়ের ফলে হান ডাক-সু আবারও ভারপ্রাপ্ত প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব পালন করবেন, যা দেশটির চলমান রাজনৈতিক অস্থিরতায় সাময়িক স্বস্তি এনেছে। এই ঘটনা দক্ষিণ কোরিয়ার ইতিহাসে প্রথমবারের মতো একজন অভিশংসিত ভারপ্রাপ্ত প্রেসিডেন্টের পদে ফেরার নজির স্থাপন করল।
গত ডিসেম্বরে প্রেসিডেন্ট ইউন সুক ইয়োলকে অভিশংসনের পর হান ডাক-সু ভারপ্রাপ্ত প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করেছিলেন। ইউন সুক ইয়োল ৩ ডিসেম্বর, ২০২৪-এ সামরিক আইন জারির চেষ্টা করেছিলেন, যা পার্লামেন্ট দ্রুত বাতিল করে দেয়। এরপর তাকে অভিশংসন করা হয়। কিন্তু মাত্র দুই সপ্তাহের মধ্যে, ২৭ ডিসেম্বর, বিরোধী দল হান ডাক-সুর বিরুদ্ধেও অভিশংসন প্রস্তাব আনে। তাদের অভিযোগ ছিল, হান সাংবিধানিক আদালতে তিনজন বিচারপতি নিয়োগে বাধা দিয়েছেন, যা ইউনের অভিশংসন প্রক্রিয়াকে প্রভাবিত করতে পারত। পার্লামেন্টে ১৯৫-৮৩ ভোটে এই প্রস্তাব পাস হয়। তবে, আদালত এই অভিশংসনকে “অসাংবিধানিক ও অপ্রয়োজনীয়” বলে বাতিল করে দেয়।
সাংবিধানিক আদালতের রায়ে বলা হয়, “হান ডাক-সুর বিরুদ্ধে আনা অভিযোগগুলো গুরুতর সাংবিধানিক লঙ্ঘনের পর্যায়ে পড়ে না। তিনি তার ক্ষমতার মধ্যে থেকেই কাজ করেছেন।” আদালত আরও জানায়, বিচারপতি নিয়োগে তার সিদ্ধান্ত ছিল প্রশাসনিক প্রক্রিয়ার অংশ, যা অভিশংসনের মতো চরম পদক্ষেপের জন্য যথেষ্ট নয়। এই রায়ে ছয়জন বিচারপতি সম্মতি দেন, যা হানের পক্ষে সিদ্ধান্ত নিশ্চিত করে। ফলে, অর্থমন্ত্রী চোই সাং-মকের হাতে যে দায়িত্ব সাময়িকভাবে গিয়েছিল, তা থেকে তিনি মুক্তি পান।
এই ঘটনা দক্ষিণ কোরিয়ার জনগণের মধ্যে মিশ্র প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করেছে। বিরোধী ডেমোক্রেটিক পার্টি এই রায়কে “গণতন্ত্রের উপর আঘাত” হিসেবে সমালোচনা করেছে। তাদের নেতা পার্ক চান-দাই বলেন, “এটি জনগণের ইচ্ছার বিরুদ্ধে গিয়ে একটি অগণতান্ত্রিক সিদ্ধান্ত।” অন্যদিকে, ক্ষমতাসীন পিপলস পাওয়ার পার্টি (পিপিপি) এই রায়কে স্বাগত জানিয়ে বলেছে, “এটি রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা ফিরিয়ে আনবে।” সামাজিক মাধ্যমে অনেকে মনে করছেন, হানের পুনর্বহালি দেশের অর্থনৈতিক ও প্রশাসনিক সংকট মোকাবিলায় সহায়ক হবে।
হান ডাক-সু নিজে এক বিবৃতিতে বলেছেন, “আমি আদালতের রায়কে সম্মান করি। আমার লক্ষ্য দেশকে স্থিতিশীলতার পথে নিয়ে যাওয়া।” তবে, তার পুনর্বহালি ইউন সুক ইয়োলের অভিশংসন মামলার চূড়ান্ত ফলাফলের ওপরও নির্ভর করছে। সাংবিধানিক আদালত ইউনের মামলায় ১৮০ দিনের মধ্যে রায় দেবে। ইউন যদি স্থায়ীভাবে পদচ্যুত হন, তবে ৬০ দিনের মধ্যে নতুন নির্বাচন হবে। ততক্ষণ পর্যন্ত হানই ভারপ্রাপ্ত প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্বে থাকবেন।