ইউক্রেন সংকটে স্টারমারের পরিকল্পনা প্রত্যাখ্যান ট্রাম্পের দূতের
ইউক্রেন সংকট নিয়ে আন্তর্জাতিক মঞ্চে নতুন উত্তেজনা দেখা দিয়েছে। যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী কিয়ার স্টারমারের প্রস্তাবিত শান্তিরক্ষী পরিকল্পনাকে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের বিশেষ দূত স্টিভ উইটকফ “অগ্রহণযোগ্য” ও “অপ্রয়োজনীয়” বলে প্রত্যাখ্যান করেছেন। এই ঘটনা রোববার (২৩ মার্চ, ২০২৫) পর্যন্ত বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশিত খবরে আলোচনায় এসেছে। স্টারমারের পরিকল্পনায় ইউক্রেনে যুদ্ধবিরতি নিশ্চিত করতে ৩০,০০০ ইউরোপীয় সেনা মোতায়েন এবং যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক সমর্থন প্রস্তুত রাখার প্রস্তাব ছিল। তবে ট্রাম্পের প্রতিনিধি এই পরিকল্পনাকে “অযৌক্তিক” আখ্যা দিয়ে রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের অবস্থানের প্রশংসা করেছেন, যা পশ্চিমা মিত্রদের মধ্যে বিভ্রান্তি সৃষ্টি করেছে।
স্টারমার গত ফেব্রুয়ারিতে ওয়াশিংটনে ট্রাম্পের সঙ্গে সাক্ষাতের সময় এই পরিকল্পনা তুলে ধরেন। তিনি প্রস্তাব করেন, ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধে একটি শান্তি চুক্তি কার্যকর করতে ইউরোপীয় ইউনিয়ন ও ন্যাটো সদস্য দেশগুলোর সেনা শান্তিরক্ষী হিসেবে কাজ করবে। এর পাশাপাশি, যুক্তরাষ্ট্র সামরিক শক্তি প্রস্তুত রাখবে, যাতে রাশিয়া যুদ্ধবিরতি লঙ্ঘন করলে দ্রুত প্রতিক্রিয়া জানানো যায়। এই পরিকল্পনার মাধ্যমে স্টারমার ইউক্রেনের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে এবং ট্রাম্পের “আমেরিকা ফার্স্ট” নীতির সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে ইউরোপের ভূমিকা বাড়াতে চেয়েছিলেন। তবে, উইটকফ এটিকে “অপ্রত্যাশিত ও অপ্রয়োজনীয়” বলে সমালোচনা করেন। তিনি বলেন, “স্টারমার কোনো উইনস্টন চার্চিল নন। এই ধরনের পরিকল্পনা পুতিনের সঙ্গে আলোচনাকে জটিল করবে।”
ট্রাম্প প্রশাসনের অবস্থান স্পষ্ট—তারা ইউক্রেন যুদ্ধে সরাসরি জড়াতে চায় না। গত ৩ মার্চ ট্রাম্প ইউক্রেনকে সামরিক সহায়তা স্থগিত করেন এবং জেলেনস্কির সঙ্গে সম্পর্কও উত্তপ্ত হয়ে ওঠে। উইটকফের বক্তব্যে রাশিয়ার প্রতি ট্রাম্পের নরম মনোভাব ফুটে উঠেছে। তিনি বলেন, “পুতিন একজন শক্তিশালী নেতা, যিনি তার দেশের স্বার্থ রক্ষা করছেন। আমাদের উচিত তার সঙ্গে আলোচনার পথ খোলা, ইউরোপীয় সেনা মোতায়েনের মতো জটিলতা সৃষ্টি নয়।” এই মন্তব্যে ইউরোপীয় নেতারা উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছেন, কারণ তারা মনে করছেন, ট্রাম্প রাশিয়ার সঙ্গে একতরফা চুক্তি করতে পারেন, যা ইউক্রেনের সার্বভৌমত্বের জন্য হুমকি।
ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি এই পরিস্থিতিতে হতাশা প্রকাশ করেছেন। তিনি বলেন, “আমরা আমাদের মিত্রদের কাছ থেকে স্পষ্ট সমর্থন আশা করি। ট্রাম্পের এই অবস্থান আমাদের যুদ্ধে দুর্বল করে দিচ্ছে।” তবে, তিনি স্টারমারের প্রচেষ্টার প্রশংসা করে বলেন, “যুক্তরাজ্য আমাদের পাশে আছে, এবং তাদের পরিকল্পনা আমাদের নিরাপত্তার জন্য গুরুত্বপূর্ণ।” ইউরোপীয় ইউনিয়নের প্রেসিডেন্ট উরসুলা ফন ডার লেনও স্টারমারের পক্ষে অবস্থান নিয়ে বলেছেন, “ইউক্রেনে শান্তি প্রতিষ্ঠায় ইউরোপের ভূমিকা অপরিহার্য।”