সিরিয়ায় ইসরায়েলের হামলায় নিহত অন্তত ৫
সিরিয়ার বিভিন্ন অঞ্চলে ইসরায়েলি বাহিনীর সাম্প্রতিক হামলায় অন্তত ৫ জন নিহত হয়েছেন বলে জানা গেছে। এই হামলাগুলো সিরিয়ার দক্ষিণাঞ্চলের দারা প্রদেশের কোয়া শহর এবং রাজধানী দামেস্কের কাছে অবস্থিত লক্ষ্যবস্তুতে চালানো হয়েছে। সিরিয়ার রাষ্ট্রীয় গণমাধ্যম ও আন্তর্জাতিক সংবাদ সংস্থার প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এই হামলায় বেসামরিক নাগরিকসহ সামরিক কর্মীদেরও প্রাণহানি ঘটেছে। ইসরায়েলের পক্ষ থেকে দাবি করা হয়েছে, এই হামলা তাদের সেনাদের ওপর হামলাকারী সন্ত্রাসীদের লক্ষ্য করে চালানো হয়েছে।
সিরিয়ার আরব নিউজ এজেন্সি (সানা) জানিয়েছে, স্থানীয় সময় সোমবার রাতে দারা প্রদেশের কোয়া শহরে ইসরায়েলি বিমান হামলায় কমপক্ষে ৫ জন নিহত এবং বেশ কয়েকজন আহত হয়েছেন। নিহতদের মধ্যে একজন সিরিয়ার সেনা সদস্য এবং বাকিরা বেসামরিক নাগরিক বলে জানা গেছে। হামলায় বেশ কয়েকটি আবাসিক ভবন ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। সিরিয়ার প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় জানায়, তাদের বিমান প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা ইসরায়েলি ক্ষেপণাস্ত্র মোকাবিলা করার চেষ্টা করেছে, তবে ক্ষয়ক্ষতি এড়ানো যায়নি।
এদিকে, ব্রিটেনভিত্তিক মানবাধিকার সংস্থা সিরিয়ান অবজারভেটরি ফর হিউম্যান রাইটস জানিয়েছে, দামেস্কের কাছে আরেকটি হামলায় ৪ জন নিহত হয়েছেন। এই হামলা ইরানপন্থী গোষ্ঠীগুলোর ঘাঁটি লক্ষ্য করে চালানো হয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। সংস্থাটির প্রধান রামি আবদেল রহমান বলেন, “ইসরায়েল গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে এই হামলা চালিয়েছে, যার লক্ষ্য ছিল সিরিয়ায় ইরানের সামরিক উপস্থিতি কমানো।” তবে, এই হামলায় নিহতদের পরিচয় এখনও পুরোপুরি নিশ্চিত করা যায়নি।
ইসরায়েলি সামরিক বাহিনী এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, তাদের সেনারা সিরিয়া সীমান্তে সন্ত্রাসীদের গুলি হামলার শিকার হওয়ার পর এই পাল্টা হামলা চালানো হয়েছে। হারেৎজের প্রতিবেদনে বলা হয়, গোলান মালভূমি থেকে সিরিয়ার দিকে গুলি চালানোর ঘটনার জবাবে ইসরায়েলি বিমান বাহিনী এই অভিযান শুরু করে। তবে, ইসরায়েল সরকারিভাবে এই হামলার দায় স্বীকার করেনি, যা তাদের সাধারণ নীতির সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ।
সিরিয়ার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এই হামলার তীব্র নিন্দা জানিয়ে বলেছে, “ইসরায়েলের এই আগ্রাসন সিরিয়ার সার্বভৌমত্বের লঙ্ঘন এবং আন্তর্জাতিক আইনের উপেক্ষা।” তারা জাতিসংঘের কাছে এই ঘটনার তদন্ত ও ইসরায়েলের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছে। ইরানও এই হামলাকে “জায়নবাদী আগ্রাসন” হিসেবে অভিহিত করে প্রতিশোধের হুঁশিয়ারি দিয়েছে।
বিশ্লেষকদের মতে, সিরিয়ায় ইসরায়েলের এই হামলা ইরান ও তার মিত্রদের বিরুদ্ধে দীর্ঘদিনের প্রক্সি যুদ্ধের অংশ। গত কয়েক বছরে ইসরায়েল সিরিয়ায় শতাধিক হামলা চালিয়েছে, যার বেশিরভাগই ইরানপন্থী গোষ্ঠী বা হিজবুল্লাহর অস্ত্র সরবরাহ রোধে লক্ষ্যবস্তু নির্ধারণ করা হয়েছে। তবে, এই হামলায় বেসামরিক হতাহতের ঘটনা আন্তর্জাতিক সমালোচনার জন্ম দিয়েছে।
গত মাসে ভূমিকম্পে বিধ্বস্ত সিরিয়ায় এই হামলা দেশটির জনগণের দুর্ভোগ আরও বাড়িয়েছে। স্থানীয়রা জানিয়েছেন, ধ্বংসস্তূপের নিচ থেকে মরদেহ ও আহতদের উদ্ধারে কাজ চলছে। এই ঘটনা মধ্যপ্রাচ্যে উত্তেজনা আরও বাড়িয়ে তুলেছে, যেখানে গাজা ও লেবাননেও ইসরায়েলি হামলা অব্যাহত রয়েছে।