সম্রাট আওরঙ্গজেবের সমাধি সরানো নিয়ে ভারতে ব্যাপক সহিংসতা, কারফিউ
ভারতের মহারাষ্ট্র রাজ্যের সম্ভাজিনগর (পূর্বে আওরঙ্গাবাদ) জেলার খুলদাবাদে মুঘল সম্রাট আওরঙ্গজেবের সমাধি সরানোর দাবি ঘিরে সম্প্রতি উত্তেজনা বৃদ্ধি পেয়েছে। বিজেপি নেতাদের এই দাবির পরিপ্রেক্ষিতে বিভিন্ন স্থানে সহিংসতা ছড়িয়ে পড়েছে, যার ফলে প্রশাসনকে কারফিউ জারি করতে হয়েছে।
মারাঠা রাজা ছত্রপতি শিবাজি মহারাজের বংশধর ও বিজেপির সাতারা সংসদ সদস্য উদয়নরাজে ভোঁসলে সম্প্রতি আওরঙ্গজেবের সমাধি ভেঙে ফেলার দাবি করেন। তিনি বলেন, “কী প্রয়োজন… জেসিবি মেশিন পাঠিয়ে তার সমাধি ভেঙে ফেলা উচিত… তিনি ছিলেন একজন চোর এবং লুটেরা (ডাকাত)।” এর আগে বিজেপি নেতা নবনীত রানাও সম্রাট আওরঙ্গজেবের সমাধি ভেঙে ফেলার দাবি করেছিলেন। তিনি মহারাষ্ট্র সরকারকে অনুরোধ করেন, “ঠিক যেভাবে আওরঙ্গাবাদের নাম পরিবর্তন করে আমাদের ভগবান সম্ভাজি মহারাজের নামে রাখা হয়েছিল, তেমনই আওরঙ্গজেবের সমাধিও ভেঙে ফেলা উচিত।”
সমাজবাদী পার্টির সংসদ সদস্য আবু আজমী আওরঙ্গজেবের প্রশংসা করে বলেন, সম্রাট আওরঙ্গজেব বহু হিন্দু মন্দির প্রতিষ্ঠা করেছেন এবং তিনি মোটেই নিষ্ঠুর প্রজাতির মানুষ ছিলেন না। এই মন্তব্যের পর বিতর্ক আরও তীব্র হয়।
সম্রাট আওরঙ্গজেব (১৬১৮-১৭০৭) মুঘল সাম্রাজ্যের ষষ্ঠ সম্রাট ছিলেন। তার শাসনামলে মুঘল সাম্রাজ্য সর্বোচ্চ বিস্তৃতি লাভ করে। তবে তার ধর্মীয় নীতির কারণে হিন্দু সম্প্রদায়ের মধ্যে বিরূপ প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়।
সমাধি সরানোর দাবির পর বিভিন্ন স্থানে সহিংসতা ছড়িয়ে পড়ে। সম্ভাজিনগরসহ আশেপাশের এলাকায় সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে, যেখানে কয়েকজন আহত হন। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে প্রশাসন কারফিউ জারি করে এবং অতিরিক্ত পুলিশ বাহিনী মোতায়েন করে।
বিরোধী দলগুলো বিজেপি নেতাদের এই দাবির সমালোচনা করে বলেছে, এটি সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বিনষ্ট করতে পারে। তারা প্রশাসনকে সংযম প্রদর্শনের আহ্বান জানিয়েছে।
ঐতিহাসিকরা মনে করেন, আওরঙ্গজেবের সমাধি ভারতের ঐতিহ্যের অংশ। সমাধি সরানোর দাবি ইতিহাস মুছে ফেলার শামিল হতে পারে বলে তারা উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন।
সাধারণ জনগণের মধ্যে এই বিষয়ে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা গেছে। কেউ কেউ সমাধি সরানোর দাবিকে সমর্থন করেছেন, আবার কেউ এর বিরোধিতা করেছেন।
বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, এই বিষয়ে সংলাপ ও আলোচনা প্রয়োজন। সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বজায় রাখতে প্রশাসন ও রাজনৈতিক নেতাদের দায়িত্বশীল ভূমিকা পালন করা উচিত।
সম্রাট আওরঙ্গজেবের সমাধি সরানো নিয়ে উদ্ভূত পরিস্থিতি ভারতের সামাজিক ও রাজনৈতিক পরিবেশে নতুন চ্যালেঞ্জ সৃষ্টি করেছে। এই সংকট সমাধানে সকল পক্ষের সংযম ও সমঝোতা প্রয়োজন।