‘মব কালচার’ ঠেকাতে সম্পূর্ণ ব্যর্থ অন্তর্বর্তী সরকার: বিএনপি
দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি এবং রাজনৈতিক অস্থিরতার জন্য অন্তর্বর্তী সরকারকে দায়ী করেছে বিএনপি। দলটির দাবি, সরকার জনগণের প্রকৃত আকাঙ্ক্ষাকে উপেক্ষা করে অপ্রয়োজনীয় বিষয়গুলোতে অধিক মনোযোগী হচ্ছে, যার ফলে দেশে ‘মব কালচার’ ব্যাপক আকার ধারণ করেছে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় সরকারের অক্ষমতার কারণে জনগণ নিজেদের হাতে আইন তুলে নিতে বাধ্য হচ্ছে।
বৃহস্পতিবার বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী স্বাক্ষরিত এক বিবৃতিতে বলা হয়, “গত ছয় মাসেও সরকার পলাতক স্বৈরাচার ও তাদের সহযোগীদের বিরুদ্ধে কার্যকর কোনো ব্যবস্থা নিতে পারেনি। এই ব্যর্থতার ফলে জনগণের মধ্যে ক্ষোভ দানা বেঁধেছে এবং তারা আইন নিজের হাতে তুলে নিচ্ছে। জনগণের এই প্রতিক্রিয়া অনিবার্য ছিল, কারণ বর্তমান সরকার আইনের শাসন প্রতিষ্ঠায় সম্পূর্ণ ব্যর্থ হয়েছে।”
বিএনপি মনে করে, জনগণের দাবি উপেক্ষা করে সরকার অগ্রাধিকারহীন বিষয়গুলো নিয়ে বেশি ব্যস্ত। বিবৃতিতে বলা হয়, “জুলাই ছাত্র-গণঅভ্যুত্থানের মূল লক্ষ্য ছিল দেশে গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠা করা, কিন্তু সরকার জনগণের সেই আকাঙ্ক্ষা উপেক্ষা করে নানা অপদক্ষেপ গ্রহণ করছে। দেশে একের পর এক সহিংস ঘটনা ঘটছে, অথচ সরকার তা নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থ হচ্ছে।”
বুধবার ধানমন্ডি ৩২ নম্বরে ‘বুলডোজার মিছিল’ থেকে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের বাড়িতে ভাঙচুরের ঘটনা ঘটে। একইভাবে ঢাকার বাইরে শেখ হাসিনার আত্মীয় ও আওয়ামী লীগের নেতাদের বাড়ি, কার্যালয় ও ভাস্কর্যেও হামলা চালানো হয়। দেশের অন্তত ৩০টি জেলায় ভাঙচুরের ঘটনা ঘটেছে বলে জানা গেছে। বিএনপি দাবি করছে, জনগণের মধ্যে স্বৈরাচারী শাসনের বিরুদ্ধে ব্যাপক ক্ষোভ তৈরি হয়েছে, যার বহিঃপ্রকাশ ঘটছে এই ঘটনাগুলোর মাধ্যমে।
বিএনপি মনে করে, বর্তমান অস্থিরতা নিরসনের একমাত্র সমাধান দ্রুত একটি সুষ্ঠু নির্বাচন আয়োজন করা। বিবৃতিতে বলা হয়, “মানুষের গণতান্ত্রিক অধিকার, ভোটাধিকার ও সাংবিধানিক অধিকার পুনঃপ্রতিষ্ঠার জন্য জরুরি ভিত্তিতে একটি নির্বাচন প্রয়োজন। কিন্তু সরকার সেই পথে না গিয়ে জনগণের দৃষ্টি ভিন্নখাতে প্রবাহিত করতে চায়।”
এছাড়া, বাজার সিন্ডিকেট নিয়ন্ত্রণে সরকারের ব্যর্থতার কারণে সাধারণ মানুষের দুর্ভোগ চরমে পৌঁছেছে বলেও বিএনপি অভিযোগ করেছে। দলটির দাবি, দীর্ঘদিন ধরে চলা মিথ্যা মামলাগুলোরও কোনো সুরাহা হয়নি, বরং গণতন্ত্রকামী জনগণ এখনো হয়রানির শিকার হচ্ছে।
বিএনপি মনে করে, ফ্যাসিবাদ উচ্ছেদের জন্য কেবল প্রতীকী ভাঙচুর যথেষ্ট নয়। বিবৃতিতে বলা হয়, “পতিত স্বৈরাচারের প্রতীক ভেঙে ফেললেই ফ্যাসিবাদ নির্মূল হয় না। বরং গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার জন্য আদর্শিক আন্দোলন এবং জনগণের ঐক্যই মূল চাবিকাঠি। বর্তমান পরিস্থিতিতে গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ পুনঃপ্রতিষ্ঠার জন্য আমাদের সবাইকে সচেষ্ট হতে হবে।”
বিএনপি মনে করছে, অন্তর্বর্তী সরকারের ব্যর্থতা দেশের স্থিতিশীলতার জন্য হুমকিস্বরূপ। দলটির দাবি, দ্রুত নির্বাচনের মাধ্যমে জনগণের চাওয়া পূরণ না হলে আইনশৃঙ্খলার আরো অবনতি ঘটবে এবং দেশ অনিয়ন্ত্রিত পরিস্থিতির দিকে ধাবিত হবে।