বুধবার, ১১ই জুন, ২০২৫| সকাল ৯:৫৭

ঈদ উৎসবে রেমিট্যান্স প্রবাহে রেকর্ড বৃদ্ধি, বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভে ইতিবাচক প্রভাব

প্রতিবেদক
staffreporter
জুন ১০, ২০২৫ ২:০৫ অপরাহ্ণ
ঈদ উৎসবে রেমিট্যান্স প্রবাহে রেকর্ড বৃদ্ধি, বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভে ইতিবাচক প্রভাব

ঈদ উৎসবে রেমিট্যান্স প্রবাহে রেকর্ড বৃদ্ধি, বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভে ইতিবাচক প্রভাব

ঈদ উৎসবকে সামনে রেখে প্রবাসী বাংলাদেশিদের পাঠানো রেমিট্যান্সে রেকর্ড পরিমাণ বৃদ্ধি দেখা দিয়েছে। গত মার্চ মাসে রোজার ঈদ উপলক্ষে ৩২৯ কোটি মার্কিন ডলার রেমিট্যান্স প্রবাহিত হয়, যা দেশের এক মাসের ইতিহাসে সর্বোচ্চ রেমিট্যান্স আয়। কোরবানির ঈদ উপলক্ষে মে মাসেও ২৯৭ কোটি ডলার এসেছে এবং জুন মাসের শুরুতেই ৬০ কোটি ৪০ লাখ ডলার রেমিট্যান্স পাওয়া গেছে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, চলতি অর্থবছরের প্রথম ১১ মাসে (২০২৪-২৫, জুলাই-মে) দেশে মোট ২৮ দশমিক ১১ বিলিয়ন মার্কিন ডলার রেমিট্যান্স এসেছে, যা আগের অর্থবছরের একই সময়ে পাওয়া ২১ দশমিক ৬৫ বিলিয়ন ডলারের চেয়ে প্রায় ৩০ শতাংশ বেশি। এই প্রবৃদ্ধি দেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভেও ইতিবাচক প্রভাব ফেলেছে। বর্তমানে রিজার্ভ দাঁড়িয়েছে ২৬ দশমিক শূন্য ৬ বিলিয়ন ডলার, যেখানে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) বিপিএম-৬ পদ্ধতিতে প্রকৃত রিজার্ভ ২০ দশমিক ৭৬ বিলিয়ন ডলার হিসেবে ধরা হয়।

ঈদকে কেন্দ্র করে প্রবাসীরা সাধারণত পরিবার-পরিজনের জন্য অধিক অর্থ পাঠান, যা উৎসবের আনন্দে বড় ভূমিকা রাখে। বিশেষ করে মে মাসে প্রবাসী বাংলাদেশিরা আগের বছরের তুলনায় ৩১ দশমিক ৭ শতাংশ বেশি অর্থ পাঠিয়েছে।

রেমিট্যান্সের প্রধান উৎস দেশগুলোর মধ্যে মে মাসে সবচেয়ে বেশি অর্থ এসেছে সৌদি আরব থেকে (৫৩ কোটি ৩৪ লাখ ডলার), এরপর রয়েছে সংযুক্ত আরব আমিরাত ও যুক্তরাজ্য। মার্চ মাসে সর্বোচ্চ রেমিট্যান্স এসেছে যুক্তরাষ্ট্র থেকে (৫৪ কোটি ৬১ লাখ ডলার), এরপরে আমিরাত ও সৌদি আরবের অবস্থান।

বাংলাদেশ ব্যাংক সম্প্রতি রেমিট্যান্সের উৎস নির্ধারণে নতুন নির্দেশনা জারি করেছে, যাতে প্রকৃত উৎস দেশ অনুযায়ী তথ্য সংগ্রহ হয়। এর ফলে রেমিট্যান্সের সঠিক উৎস চিহ্নিত করা সহজ হয়েছে এবং নীতিনির্ধারণে স্বচ্ছতা এসেছে।

অর্থনীতিবিদ ও ব্যাংকাররা মনে করেন, রেমিট্যান্স বৃদ্ধিতে সরকারের হুন্ডির বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান, বৈধ পথে অর্থ প্রেরণার জন্য ২.৫ শতাংশ নগদ প্রণোদনা, রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা এবং ডলার বিনিময় হার স্থিতিশীলতা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে।

বাজারে ডলারের সরবরাহ বেড়ে ব্যাংক খাতে স্বস্তি এসেছে। ফলে আমদানি দায় পরিশোধ এবং রিজার্ভ ব্যবস্থাপনাও সহজতর হয়েছে। বিশেষজ্ঞরা আশা করেন, এই ধারা অব্যাহত থাকলে চলতি অর্থবছরের শেষে রিজার্ভ ৩০ বিলিয়ন ডলারের কাছাকাছি পৌঁছাবে, যা অর্থনীতির জন্য বড় মাইলফলক হবে।

তবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক ড. সেলিম রায়হান সতর্ক করেছেন, যুক্তরাষ্ট্রের সম্ভাব্য ৫ শতাংশ রেমিট্যান্স কর প্রবাসীদের আনুষ্ঠানিক চ্যানেল এড়িয়ে অনানুষ্ঠানিক পথে যাওয়ার ঝুঁকি বাড়াতে পারে, যা বৈদেশিক মুদ্রার প্রবাহে বড় প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করবে। তিনি বলেছেন, এই পরিস্থিতি মোকাবিলায় ব্যাংকিং সেবা সহজ ও দ্রুততর করা, ডিজিটাল প্ল্যাটফর্ম ব্যবহার বাড়ানো এবং কূটনৈতিক যোগাযোগ জোরদার করতে হবে।

সর্বোপরি, কোরবানির ঈদের প্রাক্কালে রেমিট্যান্স প্রবাহ অর্থনীতিতে আস্থা ফিরিয়ে এনেছে এবং বৈদেশিক মুদ্রার সংকট মোকাবিলায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে।

মন্তব্য করুন
Spread the love

সর্বশেষ - বানিজ্য ও অর্থনীতি