মালদ্বীপে ইসরায়েলিদের প্রবেশ নিষিদ্ধ করতে নতুন আইন
পর্যটনের জন্য বিখ্যাত মালদ্বীপ ইসরায়েলি নাগরিকদের দেশটিতে প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করতে নতুন আইন পাস করেছে। ফিলিস্তিনিদের প্রতি সংহতি এবং ইসরায়েলের গাজায় চলমান সামরিক অভিযানের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ হিসেবে এই পদক্ষেপ নিয়েছে দ্বীপরাষ্ট্রটি। মঙ্গলবার (১৫ এপ্রিল) মালদ্বীপের সংসদে এই আইনটি পাস হয়, এবং প্রেসিডেন্ট মোহাম্মদ মুইজ্জু তাৎক্ষণিকভাবে এটি অনুমোদন করেছেন।
প্রেসিডেন্টের দপ্তরের একজন কর্মকর্তা বার্তাসংস্থা এএফপিকে জানিয়েছেন, নতুন এই আইন অবিলম্বে কার্যকর হবে। প্রেসিডেন্ট মুইজ্জু এক বিবৃতিতে বলেছেন, “এই আইন ফিলিস্তিনিদের বিরুদ্ধে ইসরায়েলের নৃশংসতা ও গণহত্যার বিরুদ্ধে আমাদের সরকারের দৃঢ় অবস্থানের প্রতিফলন। আমরা ফিলিস্তিনিদের সংগ্রামের প্রতি আমাদের অটল সমর্থন পুনর্ব্যক্ত করছি।”
মালদ্বীপের এই সিদ্ধান্ত গত বছরের জুন থেকে পরিকল্পনার অংশ ছিল। ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর গাজাভিত্তিক ফিলিস্তিনি গোষ্ঠী হামাস এবং ইসরায়েলের মধ্যে সংঘাত শুরুর পর থেকে মালদ্বীপ ইসরায়েলের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান নিয়েছে। সে সময় প্রেসিডেন্ট মুইজ্জু ঘোষণা দিয়েছিলেন যে, ইসরায়েলিদের প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা দেওয়ার জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া হবে। এই লক্ষ্যে একটি কমিটি গঠন করা হয়, এবং দীর্ঘ প্রক্রিয়ার পর মঙ্গলবার সংসদে আইনটি চূড়ান্তভাবে পাস হয়।
ইসরায়েলের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় গত বছরই তাদের নাগরিকদের মালদ্বীপ ভ্রমণে নিরুৎসাহিত করেছিল। তবে নতুন এই আইনের মাধ্যমে মালদ্বীপ আনুষ্ঠানিকভাবে ইসরায়েলি পাসপোর্টধারীদের প্রবেশ সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ করল।
গাজায় চলমান সংঘাতে এখন পর্যন্ত ৫০ হাজারেরও বেশি ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন বলে জানিয়েছে আন্তর্জাতিক গণমাধ্যম। জাতিসংঘের তথ্য অনুযায়ী, এই হতাহতদের বেশিরভাগই নারী ও শিশু। এই সংঘাতকে “গণহত্যা” হিসেবে উল্লেখ করে মালদ্বীপসহ বিশ্বের অনেক দেশ এবং সংগঠন ইসরায়েলের সমালোচনা করেছে।
মালদ্বীপের পর্যটন শিল্প দেশটির অর্থনীতির প্রধান চালিকাশক্তি। তবে ফিলিস্তিনিদের প্রতি সংহতি দেখাতে এই নিষেধাজ্ঞা আরোপের সিদ্ধান্তকে সরকার একটি নৈতিক অবস্থান হিসেবে উল্লেখ করেছে। স্থানীয় গণমাধ্যম জানিয়েছে, এই আইনের ফলে পর্যটন খাতে স্বল্প কিছু প্রভাব পড়তে পারে, তবে সরকার এটিকে ফিলিস্তিনিদের পাশে দাঁড়ানোর একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ হিসেবে দেখছে।
ইসরায়েল-ফিলিস্তিন সংঘাত নিয়ে বিশ্বব্যাপী প্রতিবাদ ও বিক্ষোভ অব্যাহত রয়েছে। গত ১২ এপ্রিল বাংলাদেশেও ইসরায়েলের বিরুদ্ধে ব্যাপক বিক্ষোভ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়, যাতে লাখো মানুষ অংশ নেন। মালদ্বীপের এই নতুন আইনও সেই প্রতিবাদেরই একটি অংশ হিসেবে দেখা হচ্ছে।
আন্তর্জাতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, মালদ্বীপের এই পদক্ষেপ ইসরায়েলের ওপর কূটনৈতিক চাপ বাড়াতে ভূমিকা রাখতে পারে। তবে এটি মালদ্বীপ এবং ইসরায়েলের মধ্যে সম্পর্ককে আরও জটিল করে তুলতে পারে। মালদ্বীপের জনগণের মধ্যে এই আইনকে ব্যাপকভাবে সমর্থন করা হচ্ছে, বিশেষ করে ফিলিস্তিনি সংগ্রামের প্রতি তাদের দীর্ঘদিনের সমর্থনের প্রেক্ষাপটে।
মালদ্বীপের এই সিদ্ধান্ত গাজার পরিস্থিতির প্রতি আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের ক্রমবর্ধমান উদ্বেগের প্রতিফলন। ফিলিস্তিনিদের প্রতি সংহতি প্রকাশে এই ধরনের পদক্ষেপ অন্যান্য দেশের জন্যও উদাহরণ হতে পারে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা। তবে এই নিষেধাজ্ঞার দীর্ঘমেয়াদি প্রভাব কী হবে, তা এখনো পরিষ্কার নয়।
সূত্র: টাইমস অব ইসরায়েল