রুশ-ইউক্রেন যুদ্ধে নতুন আতঙ্ক ‘ফাইবার অপটিক ড্রোন’
দীর্ঘদিন ধরে চলমান রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ ক্রমশ আরও প্রযুক্তিনির্ভর হয়ে উঠছে। প্রতিদিন ব্যবহৃত হচ্ছে নতুন নতুন সামরিক অস্ত্র, যার প্রতিটি আগের চেয়েও বেশি ভয়ঙ্কর। সর্বশেষ আলোচিত অস্ত্র হলো ‘ফাইবার অপটিক ড্রোন’—যা এখন যুদ্ধক্ষেত্রে এক নতুন আতঙ্কের নাম। প্রথমে শুধুমাত্র রাশিয়া এই প্রযুক্তি ব্যবহার করলেও এখন ইউক্রেনও পাল্টা এই ড্রোন ব্যবহার শুরু করেছে।
রাশিয়া বর্তমানে ইউক্রেনের ছোট ছোট শহরে ফাইবার অপটিক কেবল সংযুক্ত ড্রোন পাঠাচ্ছে। এসব ড্রোন ইউক্রেনের সেনাদের জন্য একেবারেই নতুন ধরনের হুমকি। সেনাঘাঁটি, গুরুত্বপূর্ণ সরকারি ভবন এবং সেনাবাহিনীর যানবাহনের ওপর নজরদারি ও হামলা চালাতে এসব ড্রোন পাঠাচ্ছে মস্কো। তবে ইউক্রেনও হার মানতে রাজি নয়। ইউক্রেনের ন্যাশনাল গার্ডের ‘আনম্যানড সিস্টেম ব্যাটেলিয়ন’-এর টুয়েলভথ স্পেশ্যাল ফোর্স ব্রিগেড এখন একই কৌশলে রুশ বাহিনীর বিরুদ্ধে ফাইবার অপটিক ড্রোন ব্যবহার করছে।
এই ড্রোনের কার্যপ্রণালি বেশ অভিনব। ফাইবার অপটিক কেবলের সঙ্গে বিস্ফোরক বোঝাই ছোট ছোট ব্যাটারিচালিত ড্রোন যুক্ত করে দূর থেকে রিমোট কন্ট্রোলের মাধ্যমে চালানো হয়। এগুলো ‘রেডিও সাইলেন্স’ মোডে কাজ করে, অর্থাৎ এগুলো কোনো রকম রেডিও সিগন্যাল তৈরি করে না। ফলে শত্রুর রাডার কিংবা মিসাইল ডিফেন্স সিস্টেম এই ড্রোন শনাক্ত করতে পারে না। কারণ সাধারণত মিসাইল ডিফেন্স সিস্টেম শত্রুর ড্রোন থেকে আসা রেডিও সিগন্যাল শনাক্ত করে প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা নেয়।
আরও আশঙ্কার বিষয় হলো, এই ড্রোনের অপটিক কেবল কেউ যদি কেটে দেওয়ার চেষ্টা করে, সঙ্গে সঙ্গে ক্যামেরায় ধরা পড়ার পর সেটিকে বিস্ফোরিত করে দেওয়া হয়। কেবলটি আকাশে এতটাই সূক্ষ্মভাবে ছড়ানো থাকে যে সহজে খালি চোখে ধরা পড়ে না। সেই সঙ্গে ড্রোনে সংযুক্ত থাকে ধারালো টাইটেনিয়াম ব্লেড, যার কারণে কাছে গেলেই মারাত্মকভাবে আহত হওয়ার আশঙ্কা থাকে।
প্রথম দিকে রাশিয়া এই ড্রোন শুধু নজরদারি ও তথ্য সংগ্রহের কাজে ব্যবহার করত। কিন্তু ২০২৪ সাল থেকে এগুলো সরাসরি হামলার অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার শুরু করে। এরপর ইউক্রেনও একই প্রযুক্তি কাজে লাগাতে শুরু করে। তবে এই ড্রোনের কিছু সীমাবদ্ধতাও রয়েছে। যেহেতু অপটিক কেবল দিয়ে নিয়ন্ত্রণ করা হয়, তাই এগুলোর সীমা ১০ থেকে সর্বোচ্চ ৪০ কিলোমিটার পর্যন্ত। কেবল গাছ বা অন্য কিছুর সঙ্গে জড়িয়ে গেলে ড্রোনটি নষ্ট হয়ে যেতে পারে। আবার এই ড্রোন খুব উঁচুতে উঠতেও পারে না এবং ধীরে এগোয়। তবু এত সাবধানতাপূর্ণ ও নিরবচারে হামলা চালাতে পারায় রাশিয়া বর্তমানে ব্যাপকভাবে এই প্রযুক্তি ব্যবহার করছে।
তথ্যসূত্র: ঢাকা পোস্ট
