যুক্তরাজ্যে টিউলিপ সিদ্দিকের সাক্ষাৎ প্রার্থনায় সাড়া মেলেনি, প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সফর শুরু
যুক্তরাজ্যের সাবেক মন্ত্রী টিউলিপ সিদ্দিক প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে সাক্ষাতের জন্য চিঠি দিলেও তাতে সাড়া পাননি। ঢাকার উচ্চপদস্থ ও যুক্তরাজ্যের কূটনৈতিক সূত্র জানিয়েছে, সরকার টিউলিপের চিঠিকে গুরুত্ব দিচ্ছে না, তাই তিনি ড. ইউনূসের সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে পারেননি।
সোমবার ঢাকা থেকে সরকারি সফরে যুক্তরাজ্যের উদ্দেশে যাত্রা করেন প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। এ সময় আওয়ামী লীগ তার বিরুদ্ধে সর্বাত্মক যুদ্ধ চালাচ্ছে এবং তার যুক্তরাজ্য সফর ভণ্ডুল করার জন্য ইউরোপের বিভিন্ন দেশে আওয়ামীকর্মীরা লন্ডনে সমবেত হয়েছিলেন। টিউলিপের সাক্ষাৎ চাওয়া নিয়ে তেমনই এক ধরনের হাস্যরসের সৃষ্টি হয়।
টিউলিপ সিদ্দিকের মন্ত্রিসভার পদত্যাগের পেছনে প্রধান কারণ হিসেবে তিনি ইউনূস প্রশাসনের দুর্নীতির অভিযোগ তুলে ধরেছেন। ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম গার্ডিয়ান জানায়, টিউলিপ একটি চিঠিতে লন্ডন সফরের সময় ড. ইউনূসের সঙ্গে আলোচনা করার সুযোগ চেয়েছিলেন। ড. ইউনূস সেখানে রাজার সঙ্গে দেখা করবেন এবং ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী কেয়ার স্টারমারের সঙ্গে বৈঠক করবেন।
টিউলিপ চিঠিতে উল্লেখ করেছেন, তিনি আশা করেন তাদের বৈঠক ঢাকায় দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) সৃষ্ট ভুল বোঝাবুঝি দূর করবে এবং খালা শেখ হাসিনার সঙ্গে সম্পর্কিত কিছু প্রশ্নের জবাব পেতে চান। বাংলাদেশে অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগ তিনি অস্বীকার করেছেন এবং বলেছেন, তার দেশে কোনো সম্পত্তি বা ব্যবসায়িক স্বার্থ নেই।
২০২৪ সালের ৫ আগস্ট গণঅভ্যুত্থানের মাধ্যমে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর টিউলিপের খালা শেখ হাসিনা ভারতে পালিয়ে যান। এরপর থেকে শেখ পরিবারের দুর্নীতির বিভিন্ন তথ্য প্রকাশিত হয়েছে, বিশেষ করে রূপপুর পরমাণু বিদ্যুৎ কেন্দ্রের দুর্নীতির অভিযোগ আলোচিত হয়েছে।
টিউলিপসহ ৫৩ জনের বিরুদ্ধে রাজধানীর পূর্বাচলে ৬০ কাঠার একটি প্লট বরাদ্দে অনিয়মের মামলায় গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করা হয়েছে। তালিকায় শেখ হাসিনা, শেখ রেহানা, রাদওয়ান মুজিব সিদ্দিক ববি এবং আজমিনা সিদ্দিক রূপন্তীসহ অন্যরা রয়েছেন।
টিউলিপ বলেছিলেন, তিনি ভুল করেননি এবং রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত অপপ্রচারের শিকার হয়েছেন। গত জানুয়ারিতে লন্ডনে ৭ লাখ পাউন্ড মূল্যের ফ্ল্যাট ‘উপহার’ পাওয়ার খবর নিয়ে সমালোচনার পর তিনি নগরমন্ত্রীর পদ থেকে ইস্তফা দেন।
গ্রেপ্তারি পরোয়ানা ও দুর্নীতির অভিযোগ নিয়ে ব্রিটিশ পার্লামেন্টের বিরোধী দল কনজারভেটিভ পার্টির একজন মুখপাত্র বলেছেন, টিউলিপ সিদ্দিক এমপি পদ থেকে অবিলম্বে সরে দাঁড়ানো উচিত।
অপরদিকে, ১৫ এপ্রিল দুদক টিউলিপের বিরুদ্ধে ঢাকার গুলশানে একটি প্লট ‘অবৈধভাবে হস্তান্তরের ব্যবস্থা’ ও ‘ঘুষ’ হিসেবে একটি ফ্ল্যাট নেওয়ার অভিযোগে নতুন মামলা করেছে।
সর্বশেষ, ১৫ বছরের শাসনামলে শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অভিযোগে তার অনুপস্থিতিতে বিচারের শুরু হয়েছে। একই সময় তার শাসনামলে টিউলিপের বিরুদ্ধে অবৈধ সুবিধা গ্রহণের অভিযোগ উঠেছে।