তুরস্কে বিক্ষোভ শেষ, টিকে গেল এরদোগানের মসনদ
তুরস্কে গত এক সপ্তাহ ধরে চলা তীব্র বিক্ষোভ অবশেষে শান্ত হয়েছে। ইস্তাম্বুলের মেয়র একরেম ইমামোগলুর গ্রেপ্তারের পর শুরু হওয়া এই আন্দোলন প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়েপ এরদোগানের শাসনের জন্য বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছিল। তবে ২৬ মার্চ ২০২৫, বুধবার রাতে বিক্ষোভকারীদের ছত্রভঙ্গ হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে এরদোগানের ক্ষমতার মসনদ অক্ষত থাকার বিষয়টি নিশ্চিত হয়েছে। সরকারের কঠোর হস্তক্ষেপ, বিরোধীদের দমন এবং জনমতের বিভক্তি এই পরিস্থিতি সামাল দিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে।
গত ১৯ মার্চ ইমামোগলুকে দুর্নীতি ও সন্ত্রাসবাদের অভিযোগে গ্রেপ্তার করা হয়। এই ঘটনাকে বিরোধীরা রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত বলে আখ্যা দিয়ে দেশজুড়ে বিক্ষোভের ডাক দেয়। ইস্তাম্বুল, আঙ্কারা, ইজমিরের মতো বড় শহরগুলোতে লাখো মানুষ রাস্তায় নেমে এরদোগানের পদত্যাগের দাবি জানায়। বিক্ষোভকারীরা স্লোগান দেয়, “এরদোগান দিন শেষ, গণতন্ত্র ফিরিয়ে দাও।” তবে সরকার এই আন্দোলনকে ‘সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড’ হিসেবে চিহ্নিত করে কঠোরভাবে দমনের নীতি গ্রহণ করে। পুলিশ কাঁদানে গ্যাস, জলকামান এবং রাবার বুলেট ব্যবহার করে বিক্ষোভকারীদের ছত্রভঙ্গ করে। তুর্কি কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, সাত দিনে প্রায় ১,৫০০ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
এরদোগান বিক্ষোভকে ‘অশুভ’ ও ‘নাটক’ আখ্যা দিয়ে বলেছেন, “এটি শিগগিরই শেষ হয়ে যাবে। যারা শান্তি বিঘ্নিত করছে, তাদের গন্তব্য অন্ধকার।” তিনি বিরোধী দল সিএইচপি’র বিরুদ্ধে জনগণকে উস্কানি দেওয়ার অভিযোগ তুলে হুঁশিয়ারি দিয়েছেন। সরকারের পক্ষ থেকে বিক্ষোভ-সমাবেশের ওপর চার দিনের নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়, যা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে সহায়ক হয়েছে। এদিকে, বিরোধী নেতারা জরুরি বৈঠক ডেকে আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার পরিকল্পনা করলেও, জনগণের মধ্যে ক্লান্তি এবং সরকারের শক্তিশালী অবস্থানের কারণে তা বাস্তবায়িত হয়নি।
বিশ্লেষকরা মনে করছেন, এই বিক্ষোভ এরদোগানের জনপ্রিয়তায় ফাটল ধরালেও তাকে ক্ষমতাচ্যুত করার মতো শক্তি অর্জন করতে পারেনি। তুরস্কের অর্থনীতি এখনো সংকটে রয়েছে—লিরার মান কমছে, মূল্যস্ফীতি বাড়ছে। এই পরিস্থিতিতে বিক্ষোভের আগুন আরও জ্বলে উঠতে পারত, কিন্তু এরদোগানের সমর্থকরা রাস্তায় নেমে পাল্টা শক্তি প্রদর্শন করে। সরকারি পরিসংখ্যানে বলা হয়েছে, বিক্ষোভে সম্পত্তির ক্ষতি ও পুলিশের ওপর হামলার জন্য দায়ীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
আন্তর্জাতিক মহল এই ঘটনায় মিশ্র প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে। ইউরোপীয় ইউনিয়ন গণতন্ত্রের প্রতি শ্রদ্ধা রাখার আহ্বান জানালেও, যুক্তরাষ্ট্র নীরব রয়েছে। তবে তুরস্কের অভ্যন্তরীণ রাজনীতিতে এরদোগানের আধিপত্য এখনো অটুট। বিরোধীদের দাবি, ইমামোগলুর গ্রেপ্তার ২০২৮ সালের নির্বাচনের আগে তাকে রাজনৈতিকভাবে নিষ্ক্রিয় করার কৌশল। কিন্তু বিক্ষোভের তীব্রতা কমে যাওয়ায় এরদোগানের মসনদ টিকে গেছে। আগামী দিনে তিনি কীভাবে জনগণের ক্ষোভ সামলান, সেটাই এখন দেখার বিষয়।